বিশ্বজুড়ে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধিতার শিকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও সুরক্ষার অঙ্গীকার নিয়ে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যথাযথ মর্যাদায় আজ ৩৩তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও ২৬তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবসটি পালিত হচ্ছে।
জাতিসংঘ কর্তৃক এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ, বিকশিত নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে প্রতিবন্ধী জনগণ।’
শারীরিকভাবে অসম্পূর্ণ মানুষদের প্রতি সহমর্মিতা ও সহযোগিতা প্রদর্শন এবং তাদের কর্মকাণ্ডের প্রতি সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যেই দিবসটির সূচনা হয়। ১৯৯২ সাল থেকে জাতিসংঘ ঘোষিত এ দিবসটি পালন করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।
এ ছাড়া দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ ৩৩তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও ২৬তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস ২০২৪ পালনে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে একটি সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
এ উপলক্ষে সমাজকল্যাণ এবং নারী ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ এক বার্তায় বলেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। এই ২৪ এর অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতার আত্মহুতির বিনিময়ে আমরা বাংলাদেশকে আজ নতুন রূপে পেয়েছি। এ দেশকে প্রতিবন্ধী অপ্রতিবন্ধী নির্বিশেষে সবার জন্য বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের এক জরিপের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩৫ লাখ ২১ হাজার ৬০৬ জন। এর মধ্যে ২১ লাখ ৩২ হাজার ৭৮৭ জন পুরুষ, ১৩ লাখ ৮৫ হাজার ৯১১ জন নারী ও দুই হাজার ৯০৮ জন তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছেন।
প্রতিবন্ধিতার ধরন বিবেচনায় অটিজম ৯০ হাজার ৪০৮ জন। শারীরিক প্রতিবন্ধিতা ১৮ লাখ ২৯ হাজার ১১৭ জন, দীর্ঘস্থায়ী মানসিক ও অসুস্থতাজনিত প্রতিবন্ধিতা এক লাখ ৩২ হাজার ৭৩০ জন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা চার লাখ ৭২ হাজার ৫০৫ জন, বাকপতিবন্ধিতা দুই লাখ ৮৮২ জন, বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা দুই লাখ ২৯ হাজার আট জন, শ্রবণ প্রতিবন্ধিতা এক লাখ ৪৭ হাজার ৫৭৭ জন, শ্রবণ দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা ১৫ হাজার ৬৩ জন, সেরিব্রাল পালসি এক লাখ ৩১ হাজার ১৩৯ জন, বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধিতা দুই লাখ ৪৫ হাজার ৯২৭ জন, ডাউন সিনড্রোম সাত হাজার ১০৩ জন ও অন্যান্য প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২০ হাজার ১৮৭ জনকে সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভা, র্যালি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সরকার এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে নেওয়া বিভিন্ন কর্মসূচির অগ্রগতি তুলে ধরছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আইন বাস্তবায়ন এবং সামাজিক সচেতনতার ঘাটতির কারণে এখনও প্রতিবন্ধীরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং পরিবেশগত সুযোগ বৃদ্ধিতে আরও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল সোমবার প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর গুলশানের হোটেল লেক ক্যাসলে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কারিতাস বাংলাদেশ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, এডিডি ইন্টারন্যাশনাল এবং সিবিএম গ্লোবাল ডিসঅ্যাবিলিটি ইনক্লুশন বাংলাদেশ-এর সহযোগিতায় ডিজঅ্যাবল্ড চাইল্ড ফাউন্ডেশনের (ডিসিএফ) উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নেতৃত্ব জোরদার করা এখন সময়ের দাবি। তাদের নেতৃত্ব শুধু নিজেদের উন্নয়নের জন্য নয়, সুযোগ পেলে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়নের বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারেন।
তারা বলেন, শুধু সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় নয়, প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে তাদের কর্মবণ্টন বিধিতে প্রতিবন্ধিতার বিষয়টি নিয়ে আসতে হবে। মন্ত্রণালয়ভিত্তিক জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে। দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। এই কাজে ওপিডিগুলো রিসোর্স প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করতে পারে। এখন এ সংক্রান্ত নীতিমালা ও ব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্যোগ জরুরি।