বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, খুনের রাজত্ব কায়েম করতে আওয়ামী লীগ সরকার ৪১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশকে লিজ নিয়েছিলো, তারা বলত এ দেশ তাদের সম্পত্তি, তারা বাড়ির মালিক, বাকি আমরা ১৮ কোটি সবাই ভাড়াটিয়া। এমনকি ক্ষমতায় টিকে থাকতে তারা নিজদলের নেতাকমীর্দেরও ভয় দেখাতেন। আওয়ামী লীগের বড় নেতারা বলতেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে একদিনে ৫ লাখ নেতাকর্মীকে হত্যা করে ফেলবে।
রবিবার (১ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় ফরিদপুর জেলা জামায়াত ইসলামীর আয়োজনে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই কথাগুলো বলেন।
সম্মেলনে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আমিরে জামায়াত বলেন, আওয়ামী লীগ গুম—খুনের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তারা শুধু আমাদের নেতাকর্মীদের হত্যা করেনি। তারা বিএনপির নেতাকর্মী, হেফাজত নেতাকর্মী, আলেম-ওলামা ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে ও গুম করেছে। এমনকি দেশ প্রেমিক ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকেও তারা খুন করেছেন। তারা মানুষের জীবন নিয়ে উপহাস করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি—বৈঠার হিংস্র তাণ্ডবের কাছে বাংলাদেশ সেদিন পথ হারিয়েছিল। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৩৯ জন মানুষকে সেদিন লগি—বৈঠা দিয়ে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছিল। লাশের উপর দাড়িয়ে সেদিন বিকৃত নিত্য করা হয়েছিল। সেদিন মানবতার বুক ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। অনেক লড়াই সংগ্রামের পর মানুষের হাতে এ দেশ আবার তুলে দেওয়া হয়েছে। যাদের কারণে দেশ ফিরে পেয়েছি, আমাদের ভালবাসা, শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা সেই ছাত্র—জনতার জন্য। আমরা তাদেরকে স্যালুট জানাই।
আমীরে জামায়াতের বক্তব্যে শুরুতেই আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, আব্দুল কাদের মোল্লাসহ গণঅভ্যুত্থানে সকল নিহয় শহীদদের স্বরন করেন। বলেন, আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আজ বক্তব্য দিতে পারবো এটা কখনো ভাবিনি। আল্লাহ সুযোগ করে দিয়েছেন তাই এখানে এসেছি। জামায়াতের ইসলামীর তৎকালীন সেক্রেটারী জেনারেল শহীদ আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদ ও সহকারী জেনারেল শহীদ আব্দুল কাদের মোল্যার বাড়ি ছিল। ফরিদপুরের মাটি রক্তে রঞ্জিত। শহিদের রক্ত এই মাটিতে মুছা যাবে না। তাদের অত্যান্ত নিষ্ঠরভাবে বিচারিক আদালতে খুন করা হয়েছে। আমরা এই হত্যার বিচার চাই।
এসময় ডা. শফিকুর রহমান বাংলাদেশে সৈরাচারী ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সকল প্রকার আন্দোলন সংগ্রামে যারা শহীদ হয়েছে সেই সকল শহীদের স্বরণ করেন।
তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, সাড়ে পনের বছর আন্দোলন করেছি কখনো একক ভাবে আবার কখনো যুগপট আন্দোলনের মাধ্যমে কিন্তু এই আন্দোলনের পরিসমাপ্তি টেনেছে আমাদের সন্তানেরা।
এসময় তিনি পিলখানার বর্বরচিত হত্যাকান্ডের কথা উল্লেখ করে বলেন যারা এই জঘন্যতম হত্যা কান্ড করেছেন তাদের জন সম্মুখে এনে ফাসির ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা এমন বাংলাদেশ চাই, যে বাংলাদেশে কোনো চাঁদাবাজি আর হবে না। দখলদারি হবে না। মানুষের ওপর মানুষের কোনো জুলুম বরদাস্ত করা হবে না।
তিনি আরো বলেন আমাদের সন্তানেরা যে বৈষম্যহীন সমাজ করতে চায়। বাংলাদেশ জামায়াত ইসলাম এমন একটি সমাজ বিনির্মাণ করতে প্রস্তুত। এ সময় তিনি জাতীয় ঐক্যের কথা উল্লেখ করে বলেন৷ এই সমাজ বিনির্মানে সকলের সহযোগীতা প্রয়োজন।
ফরিদপুর জেলা জামায়াতে ইসলামের আমীর মাওলানা মুহাম্মদ বদরুদ্দনীর সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, সাবেক এমপি ও ফরিদপুর অঞ্চলের পরিচালক এ এইচ এম হামিদুর রহমান, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও অঞ্চল সহকারী পরিচালক দেলোয়ার হোসেন, মো. মোবারক হোসেন, কেন্দ্রীয় মাজির্লসে শুরা সদস্য শামসুল ইসলাম আল বরাটি, কেন্দ্রীয় মাজলিসে সুরা সদস্য প্রফেসর আব্দুত তাওয়াব প্রমুখ।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, মাদারীপুর জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা মো. মোখলেচুর রহমান, গোপালগঞ্জের আমীর মাওলানা মো. রেজাউল করীম, শরীয়তপুর জেলা আমীর মাওলানা আব্দুর রব হাসেমী, রাজবাড়ী জেলা আমীর এ্যাড. নুরুল ইসলাম, ফরিদপুর জেলা জামায়াতের এ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি মো. আবু হারিচ মোল্যা, শ্রমিক কল্যান ফেডারেশনের সভাপতি এস এম আবুল বাশার, ফরিদপুর সদর উপজেলা জামায়াতের আমীর মো. জসিম উদ্দীন, নগরকান্দা উপজেলা আমীর মাওলানা মো. ছোহরাব হোসেন, বোয়ালমারী উপজেলা আমীর মাওলানা মো. শহিদুল ইসলাম, ফরিদপুর পৌরসভার আমীর এহসানুল মাহবুব রুবেল, জেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি আব্দুল হামিদ ও পৌর ছাত্র শিবিরের সভাপতি মো. জিহাদুল সালাম রুত্ন প্রমুখ।
এর আগে বেলা ১২টার পর বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে জামায়াত ও ছাত্র শিবিরের সদস্যরা নসিমন, করিমন ও বাস যোগে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হতে দেখা যায়।