দেশে পাচার হয়ে আসছে ভারতীয় কম্বল। অনেকটা বানের স্রোতের মতো। কোনমতে ঠেকানো যাচ্ছে না অভিনব পন্থায় পাচার হয়ে আসা এই শীতের কম্বল। থামছে না পাচারকারী সিন্ডিকেট দৌরাত্ম্যে।
প্রতিদিন হাজার হাজার পিস ভারতীয় এ কম্বল পাচার চলছে অনেকটা নিরাপদে-নির্বিঘ্নে। দেখেও যেন দেখার কেউ নেই!
পাচার হয়ে আসা ভারতীয় এই কম্বল নিরাপদ বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে খুলনা বেনাপোল বেতনা এক্সপ্রেস ট্রেন। স্থলবন্দর বেনাপোল থেকে খুলনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা সকাল ও বিকালে দুটি ডাউন ট্রেনের ছয়টি বগির প্যাসেঞ্জার লাগেজভর্তি এই কম্বল।
ভারতীয় কম্বলের এই পাচার অনেকটা ওপেন সিক্রেট। পাচার কাজে জড়িত রয়েছে একদল নারী-পুরুষ পাচারকারী সদস্য।
নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, অভিনব পন্থায় পাচার হয়ে আসছে ভারতীয় এ কম্বল। বাংলাদেশ ভারত সীমান্তের ওপারে হরিদাসপুর, জয়ন্তীপুর ও পেট্রাপোলে সক্রিয় রয়েছে একটি সঙ্ঘবদ্ধ পাচারকারী সিন্ডিকেট। এরা বাংলাদেশের পাসপোর্ট যাত্রীদের মাধ্যমে অভিনব পন্থায় কম্বল পাচারে যুক্ত রয়েছে। এ কাজে সক্রিয় সহযোগিতা দিয়ে চলেছে ভারতীয় ও বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনে কর্মরত ‘কুলিরা’।
ওপারের সিন্ডিকেট সদস্যরা এদেশে ফেরত পাসপোর্ট যাত্রীদের মাথাপিছু ৩-৪টি করে কম্বল ধরিয়ে দিচ্ছেন। বিনিময়ে দু পাঁচশ টাকা। কাস্টম ইমিগ্রেশনের কার্যসম্পাদনে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা এসব পাসপোর্ট যাত্রীদের পাশে ভারতীয় কুলিরা রেখে দিচ্ছে কম্বলের ৩/৪টি একত্রে বাঁধা ভারী ব্যাগ। ভারতীয় ইমিগ্রেশনের ঝামেলা মূলত সিন্ডিকেট সদস্যরা ও সেদেশের কুলিরা সামলে নিচ্ছে। এরপর বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনের প্রবেশের পর ওই পাসপোর্ট যাত্রীর নামে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে ভারতীয় এই কম্বল।
সূত্রমতে, এপারের সিন্ডিকেট সদস্য ও কুলিরা কোন বাঁধা বিপত্তি ছাড়াই বৈধতার আড়ালে ওই কম্বল হস্তগত করে। অতঃপর বেনাপোল বাজারে বিক্রি ও মজুদ গড়ে তুলছে। নিত্যদিন ভারতীয় বিপুল এই কম্বল পাচার চললেও দেখার যেন কেউ নেই। নিত্যনৈমিত্তিক পাচার হয়ে আসা ভারতীয় এসব কম্বলে ছেয়ে গেছে সীমান্তবর্তী হাট-বাজার।
শুধু তাই নয়, বিভাগীয় শহর খুলনা থেকে শুরু করে এসব কম্বল জেলা শহর যশোর নোয়াপাড়া ,খুলনার ফুলতলা, দৌলতপুর, ঝিকরগাছা,নাভারন, শার্শার হাট বাজারে বিপণি বিতানগুলো ছেয়ে গেছে ভারতীয় এই কম্বল। প্রকাশ্যে চলছে বিকিকিনি।
জানা গেছে, ডলফিন ও লেভেন্ডার ব্র্যান্ডের ভারতীয় এই কম্বল রুপিতে সেদেশে বিক্রি হয় ১১শ টাকায়। বাংলাদেশি মুদ্রায় তা হাত বদল হয়ে ৩হাজার থেকে শুরু করে ৫হাজার পর্যন্ত বিক্রি হয়। দেশীয় বাজারে এই কম্বলের চাহিদা থাকায় পাচার হয়ে আসছে দেদার।
সূত্রের দাবি, আমদানির অনুমতি না থাকায় একদিকে বাণিজ্য ঘাটতি অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে বিপুল আমদানি শুল্ক। ওই সূত্রের দাবি প্রতিদিন কেবলমাত্র বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে আনুমানিক আড়াই হাজার পিস ভারতীয় এই কম্বল পাচার হয়ে আসছে। প্রতি সপ্তাহে ছয় দিন হিসাবে মাসে ২৪দিন নির্বিঘ্নে পাচার হয়ে আসা এসব কম্বল খুলনা-বেনাপোল বেতনা এক্সপ্রেস ট্রেনে পাচার হচ্ছে সেই হিসাবে প্রতিমাসে প্রায় ১৫ কোটি টাকার কম্বল পাচার হয়ে আসছে এদেশে।