সাদপন্থীদের মিডিয়া সমন্বয়ক মো. আবু সায়েম
টঙ্গীর ময়দানে তাবলীগ ও মাদরাসার ছাত্রদের সাথে সংঘর্ষে জুবায়েরপন্থীদের নৃশংস হামলায় দুজন মূলধারার সাথীকে হত্যা করার পরেও গণমাধ্যমের সামনে তাদের মিথ্যাচার দেখে আমরা হতবাক ও বিস্মৃত। আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদ সম্মেলন করে সত্যকে আড়াল করে তারা যে মিথ্যাচার করেছেন তার প্রতিবাদ জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
রোববার (১ ডিসেম্বর) ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভীপন্থীদের মিডিয়া সমন্বয়ক মো. আবু সায়েম পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়েছে।
বলা হয়েছে, সেদিন ১ ডিসেম্বর ২০১৮ সালে টঙ্গীর ময়দানে মাদরাসার ছাত্রদের নৃশংস হামলায় ঘটনাস্থলে মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারী একজন তাবলীগের সাথী মারা যান। পরবর্তীতে ১ মাস পর হাসপাতালে আহত আরেকজনে মূলধারার তাবলীগের সাথীর মৃত্যু হয়। তাদের একজন সাথী ও মাদরাসার ছাত্র নিহিত না হওয়ার পরেও মূলধারার তাবলীগের সাথীদের নিহত হবার ঘটনাকে নিজেদের লোকবলে চালিয়ে দেয়ার লাশের এই রাজনীতি কতোটা ঘৃণীত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু জুবায়েরপন্থীরা বরাবরের মতোই এই দুজনকে তাদের লোক বলে চালিয়ে খুনিদের আড়াল করতে হীন ষড়যন্ত্র করে আসছে। এছাড়া মাঠে ময়দানে ও ওয়াজ মাহফিলে অসংখ্যা ছাত্র হত্যার কল্পকাহিনি এরা বলে মানুষকে উস্কে দিচ্ছে। সেদিন মাঠের পাশের টয়লেটের ছাদ থেকে তাবলীগের সাথীদের উপর মাদ্রাসার ছাত্ররা ইট-পাটকেল দিয়ে বৃষ্টির মতো হামলা চালালে হাজারো তাবলীগের সাথী গুরুতর আহত ও দুজন সাদ কান্ধলভীর অনুসারী নিহিত হন। ।
পরের দিন ৩ ডিসেম্বর ২০১৮ সোমবার তাবলীগের মূলধারার মুরুব্বিরা ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিটে সংবাদ সম্মেলন করে নিহিত ঈসমাইল মণ্ডলের পরিচয় তুলে ধরেন। সে সময় শহীদ ঈসমাইল মণ্ডলের ছেলে জাহিদ আহমদ মণ্ডলও সেখানে উপস্থিত থেকে সাংবাদিকদের সামনে নিজের পিতার হত্যাকারীদের বিচার চেয়েছেন। ঈসমাঈল মন্ডল ও শহীদ শামছুদ্দীন বেলাল নিজামুদ্দিনের অনুসারী মূলধারার তাবলীগের সাথী ছিলেন। নিহিত ইসমাইল মন্ডলের ছেলে জাহিদ হাসান বাদী হয়ে জুবায়েরপন্থীদের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ০৮- তারিখ ৮/১২/২০১৮, ৩০২/৩৪ দঃবিঃ টঙ্গী পশ্চিম থানা, যা এখন আদালতে বিচারাধীন।
কিন্তু মূল খুনিদের আড়াল করতেই মূলত ৬ বছর ধরে গণমাধ্যম, ওয়াজমাহফিলে, মিম্বরে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার করে আসছে একটি চিহ্নত মহল। সম্প্রতি তাদের ফ্যাসিবাদী চরিত্রকে আড়াল করতে রাজধানীতে ভুয়া পোষ্টার সাঁটানো ও পুরো সংবাদ সম্মেলনে চরম ও জঘন্য মিথ্যাচার ও বানেয়াট নিলজ্জ কাহিনী বর্ণনা করে নিজেদের জুলুম নির্যাতন হত্যা আড়াল করার হীন চেষ্টা করছে। প্রতি বছরই ৫ দিনের জোড় ও ইজতেমার আগে তারা এসব মিথ্যাচারের পথ বেঁচে নিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। আমরা প্রসাশন ও মিডিয়াকে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করে সত্য প্রকাশের অনুরোধ করছি।
আপনারা অনেকটা অবগত আছেন, বিগত পতিত সরকারের সহযোগিতায় সারাদেশে ৫ জন মূলধারার সাথীদের জুবায়েরপন্থীরা নির্মমভাবে হত্যা করে। মসজিদে মসজিদে মাদরাসার ছাত্রদের ব্যবহার করে জুলুম নির্যাতন করে, তাবলীগের ইজতেমা, টঙ্গীর ময়দান, কাকরাইলি মারকাজ ও বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে বিগত সরকারের দোষর হয়ে বৈষম্য করে একপক্ষকে কোণটাসা করে এবং তাবলীগের বিশ্ব আমীর সাদ কান্ধলভীকে বাংলাদেশে আসতে বাঁধা প্রদান করে। ফ্যাসিবাদ সরকারের দীর্ঘ ৬ বছর একচাটিয়া বৈষম্যের শিকার হয়ে তাবলীগের মূলধারার সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা বিগত ইজতেমার মায়দানে সংবাদ সম্মেলন করে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খুনি আসাদুজ্জামান খান কামালের পদত্যাগ দাবি করেন।
আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, মূলধারার দাওয়াতের কাজকে পুরোপুরি ধ্বংস করতে সেদিন পহেলা ডিসেম্বর মূলত তাদের চূড়ান্ত মহড়া ছিল। এর পূর্বে হেফাজতে ইসলামের সরাসরি হস্তক্ষেপে বেশ কয়েকবার কাকরাইলের মুরুব্বিদের মারধর ও প্রকাশ্যে তাবলীগের মূলধারার সকল কার্যক্রম গায়ের জোরে বাঁধা দেয়া হয়। হেফাজতের বয়োবৃদ্ধ আমীর মরহুম আহমদ শফী সাহেবকে মাঠে নামিয়ে সারাদেশে ওজাহাতি সম্মেলন করে বিগত সরকারের মদদে বিভিন্ন জেলা ইজতেমাসহ দফায় দফায় একপক্ষের সকল কাজ নিষিদ্ধকরণ ও বাঁধা দেয়া হয়। দেশের সকল মসজিদের মাদরাসার ছাত্রদের ব্যবহার করে মূলধারার সাথীদের উপর আক্রমণ ও সর্বশেষ টঙ্গির ময়দানে মূলধারার পূর্ব ঘোষিত ৫ দিনের জোড় টেকাতে মাদরাসার ছাত্রদের মাঠে নামানো হয়।
সেদিন তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সহযোগিতায় সরকার টঙ্গীর ময়দান বুঝে নিলেও একমাস পরেই স্থানীয় সাবেক এমপি জাহিদ হাসান রাসেলের প্রত্যক্ষ মদদে জুবায়েরপন্থীদের এককভাবে টঙ্গীর ময়দান বুঝিয়ে দেয়া হয়। তাদের ফ্যাসিবাদী আচরণ ও সকল জুলুম নির্যাতনের বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি আমরা। পাশাপাশি এই চিহ্নিত মহলের বিষয়ে সরকার ও প্রসাশনকে সজাগ থাকার অনুরোধ করে আমরা স্মরণ করে দিতে চাই, আজকের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকা মধুপুরের পীর মাওলানা আব্দুল হামিদ গত ৫ নভেম্বর বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঠিক ৩ মাসের মাথায় মহাসমাবেশ করে সরকার পতনের হুমকি দিয়েছিল। মিথ্যাচার করে জাতিকে বিভ্রান্ত করে ১ ডিসেম্বরের খুনিদের আড়াল করার পাশাপাশি কেন তারা বারবার দেশকে অস্তিতিশীল করার চেষ্টা করছে তা খাতিয়ে দেখার জোড় দাবি জানাচ্ছি।
আপনারা জানেন, আমরা বিশ্বের দু’জন শীর্ষ আলেম পাকিস্তানের মুফতি তকী উসমানী ও ভারতের দেওবন্দের মাওলানা আরশাদ মাদানীর মধ্যস্থতায় তাদের সকল মিথ্যাচারের উপর সংবাদ সম্মেলন করে ওপেন চ্যালঞ্জ করেছি। ধর্মীয় সংঘাত উস্কে না দিয়ে বসে আলেচনা ও মীমাংসার প্রস্তাব করে দেশের পরিবেশকে শান্ত ও স্থিতিশীল রাখার অনুরোধ সত্ত্বেও তারা বরাবরের মতোই মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় তা খাতিয়ে দেখতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।