দক্ষিণ লেবাননের ৬০টি গ্রামে বাসিন্দাদের ফেরার ব্যাপারে সতর্ক করেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)।
আইডিএফ একটি মানচিত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে একাধিক মাইল গভীর এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা জানিয়েছে, এই এলাকায় ফিরে গেলে নাগরিকরা ঝুঁকিতে পড়বেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
বুধবার সকালে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর তিন দিনের মধ্যেই এ সতর্কতা জারি করা হলো।
লেবাননে শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা সংঘর্ষে দক্ষিণ লেবানন থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। অন্যদিকে, ইসরায়েলেরও হাজার হাজার নাগরিক তাদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।
যদিও যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে, ইসরায়েল ও লেবানন একে অপরের বিরুদ্ধে এর শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ তুলেছে। বৃহস্পতিবার আইডিএফ জানায়, তারা দক্ষিণ লেবাননের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে কামান ও বিমান হামলা চালিয়েছে। তারা দাবি করেছে, হিজবুল্লাহর অস্ত্র কারখানার কাছে সন্দেহজনক তৎপরতা এবং একাধিক এলাকায় যানবাহনের উপস্থিতি যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করেছে।
লেবানন দাবি করেছে, ইসরায়েল একাধিকবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে এবং তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। যুদ্ধবিরতির শর্ত পালনে নজরদারি করতে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও জাতিসংঘ অন্তর্বর্তী বাহিনীর (ইউনিফিল) প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বহুজাতিক পর্যবেক্ষক দল গঠন করা হয়েছে।
যুদ্ধবিরতির পর প্রথম সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘিত হলে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে তীব্র যুদ্ধ চালানোর নির্দেশ তিনি আইডিএফকে দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, এই যুদ্ধবিরতি সংক্ষিপ্ত হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মধ্যস্থতায় হওয়া চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনী দক্ষিণ লেবানন থেকে সরে যাবে এবং লেবাননের সেনাবাহিনী সেখানে মোতায়েন হবে। ৬০ দিনের মধ্যে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
আইডিএফের মানচিত্রে চিহ্নিত এলাকা মানসুরি থেকে শুরু করে পূর্বের শেবা পর্যন্ত বিস্তৃত। বুধবার লেবাননের সেনাবাহিনীও বাসিন্দাদের সতর্ক করেছে, ইসরায়েলি বাহিনী পুরোপুরি সরে না যাওয়া পর্যন্ত তারা যেন ওই এলাকায় না ফেরে।
উল্লেখ্য, ইসরায়েল গত মাসের শুরুতে দক্ষিণ লেবাননে অভিযান শুরু করে। এর আগে ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের উত্তরে রকেট হামলা চালায়। এর এক দিন আগে গাজা থেকে হামাসের আকস্মিক হামলায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়েছিল।
হামাসের সঙ্গে সংহতি প্রকাশে হিজবুল্লাহ এই হামলা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে তারা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলের পাল্টা অভিযানে এখন পর্যন্ত ৪৪ হাজার ৩৩০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় কমপক্ষে ৩ হাজার ৯৬১ জন নিহত এবং ১৬ হাজার ৫২০ জন আহত হয়েছে। এ পরিসংখ্যানে বেসামরিক ও যোদ্ধাদের আলাদা করে উল্লেখ করা হয়নি।
অন্যদিকে, হিজবুল্লাহর হামলায় ইসরায়েলের ৩১ জন সেনা ও ৪৫ জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। এছাড়া, দক্ষিণ লেবাননে লড়াইয়ে আরও ৪৫ জন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন।