বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করা হবে   কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন জাহাজ চলা শুরু ১ ডিসেম্বর   হাসনাত-সারজিসকে ‘হত্যাচেষ্টা’র প্রতিবাদে বিক্ষোভ, ৪ দফা ঘোষণা   তীব্র শীতে কাঁপছে তেঁতুলিয়া, তাপমাত্রা নেমেছে ১২ ডিগ্রিতে    বিদ্যমান পরিস্থিতিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি বিশিষ্ট নাগরিকদের আহ্বান   নিউজিল্যান্ড-ইংল্যান্ডের টেস্টসহ টিভিতে আজকের খেলা   ‘ঘাতক সেই ট্রাকের মালিক পলাতক আ.লীগ নেতা’   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি বিশিষ্ট নাগরিকদের আহ্বান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪, ৯:২৩ এএম | অনলাইন সংস্করণ

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন সনাতন ধর্মের বিশিষ্ট নাগরিকরা। দেবাশীষ চক্রবর্তী, দীপক সুমন, খোকন দাস, প্রীতম দাশ, মেঘমল্লার বসু, ধ্রুবজ্যোতি হোর, সীমা দত্ত, স্নেহার্থী চক্রবর্তী, জয়দীপ ভট্টাচার্য, অনিক রায়, বিথী ঘোষ, ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য, সজীব চক্রবর্তী, দীপংকর বর্মণ দীপু, দুর্জয় রায়, নয়ন সরকার জয় এবং সজীব কিশোর চক্রবর্তীসহ ওই বিবৃতিতে অনলাইনে স্বাক্ষর করেছেন লেখক ও সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিক।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়েছে তারা বলেছেন, আমরা চট্টগ্রাম আদালতের নিকটে আইনজীবী সাইফুল ইসলামের নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শোকাহত ও ক্ষুদ্ধ। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও বিচার করুন। 

এই দুঃখজনক ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোনভাবেই যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বিনষ্ট না হয়, সেই ব্যাপারে আমাদের সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। আমাদেরকে অবশ্যই শোককে জাতীয় ঐক্য ও গণশক্তিতে পরিণত করতে হবে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে পরাজিত শক্তি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত উল্লেখ করে বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেছেন, তাদের সঙ্গে গাঁটছাড়া বেঁধেছে, তাদেরকে আশ্রয় দেয়া ভারতের হিন্দুত্ববাদী শক্তি, ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার। বিজেপি দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগের সহায়তায় এই দেশের সাধারণ হিন্দুদের মধ্যে হিন্দুত্ববাদী উগ্রতার জমিন তৈরি করেছে। 

৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে তারা সেটাকে কাজে লাগিয়ে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাথে মিলে, অবিরাম মিথ্যাচার ছড়িয়ে- দেশের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও দাঙ্গা সৃষ্টি করতে চাইছে।

তাদের অভিযোগ, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারের পরপরই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যে বিবৃতি পাঠানো হলো, সেটা স্বাভাবিক কূটনৈতিক কার্যক্রমের মধ্যে পড়ে না। যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তিনি ভারতীয় নাগরিক নন। তার জামিন কেন দেয়া হলো না- এই প্রশ্ন পরোক্ষভাবেও অন্য কোন রাষ্ট্র করতে পারে না। 

ভারতের অভ্যন্তরে সংখ্যালঘুদের যে পরিস্থিতি, তাতে অন্য দেশের সংখ্যালঘুদের নিয়ে বক্তব্য দেয়ার কোন নৈতিক অধিকারই বিজেপি সরকারের নেই। বাস্তবে এসব কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্য বাংলাদেশে অস্থিরতা ও দাঙ্গার পরিবেশ সৃষ্টি করা, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন ঘটানো এবং ভারতে বিজেপির ক্ষয়িষ্ণু অবস্থানকে পুনরুদ্ধার করা। 

সাম্প্রতিক সময়ে মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। সেখানে বিজেপির প্রচারের অন্যতম প্রধান ইস্যু ছিল বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন। এর মাধ্যমে বিজেপি ভারতের হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ করতে চায়। পশ্চিমবঙ্গে তাদের অবস্থান নড়বড়ে। সেখানেও তারা জায়গা পেতে এটাকেই ইস্যু করছে, পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি চিন্ময় কৃষ্ণের গ্রেফতারের প্রতিবাদে সমাবেশও করেছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বিভিন্ন সময়ে এই দেশে হিন্দুদের ওপর হামলা নতুন ঘটনা নয়, বিশেষ করে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সময় বারবার হামলার ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। এইসব হামলার বেশিরভাগই রাজনৈতিক। বিগত আওয়ামী লীগের আমলেও দেশব্যাপী হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা, জমি দখল, মন্দির ভাঙচুর, এমনকি হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। 

গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের পরও সারা দেশে হিন্দু জনগোষ্ঠীর বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে এবার গণঅভ্যুত্থানের চেতনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল হিন্দুদের ঘরবাড়ি ও মন্দির পাহারায় এগিয়ে আসে এবং নতুন করে সম্প্রীতির নজির স্থাপন করে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিন্দু সম্প্রদায়ের সব নাগরিক অধিকার সুরক্ষার বিষয়ে অঙ্গীকার করেছে। 

এবারের দুর্গাপূজায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বিধানের মধ্যে এর প্রতিফলন লক্ষ করা গেছে। যদিও আমরা এমন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি- যেখানে যেকোনো ধর্মীয় ও জাতিগত সম্প্রদায়ই তাদের ধর্মকর্ম ও উৎসব নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে পালন করতে পারবে, কোন রকম পাহারা ও রাষ্ট্রীয় তরফ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বিধানের প্রয়োজন ছাড়াই।

স্বাভাবিকভাবে বিভিন্ন দাবিতে কোন সংগঠন যদি আন্দোলনে নামে তাতে আপত্তি করার কিছু নেই মন্তব্য করে বিবৃতে বলা হয়েছে, এটাও সত্য যে, ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিস্ট শক্তি শুরু থেকেই নানা কায়দায় দেশের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। 

এই প্রেক্ষাপটে হিন্দুদের কিছু ধর্মীয় সংগঠনের ৮ দফা দাবিতে গড়ে তোলা আন্দোলনকে ভারতের বিজেপি ও আওয়ামী লীগের মদদপুষ্ট বলে জনমনে যে ধরনা তৈরি হয়েছে- তা দূর করার দায়িত্ব তাদেরই নেয়া উচিত ছিল। 

কেননা যেকোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলন সবসময় সমাজের সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে কাছে টানার চেষ্টা করে। কোনো আন্দোলন যদি গণতান্ত্রিক শক্তির মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়, কিংবা ইতোমধ্যে গড়ে উঠা ঐক্য ও সম্প্রতি বিনষ্ট করে তখন তা প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য।

বিশিষ্ট নাগরিকরা আরও বলেন, হিন্দুদের শান্তিপূর্ণভাবে ধর্ম পালনের অধিকার আছে; কিন্তু হিন্দু ধর্মের পুনরুজ্জীবনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের পন্থা চরম হঠকারিতা- যা কেবল অন্ধকারের শক্তিকেই পুষ্টি যোগাবে। মনে রাখতে হবে, কিছু ধর্মীয় সংগঠন মানেই এই দেশের সমগ্র হিন্দু সম্প্রদায় নয়। 

এই দেশের হিন্দুরা বরাবরই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের পক্ষে। স্বাধীনতাযুদ্ধসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে হিন্দু জনগোষ্ঠীর লোকজনের উজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে। আর যে কোন দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা সেই দেশের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও সামাজিক পরিবেশের ওপর নির্ভর করে। 

ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর সে ধরনের একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে এই দেশের হিন্দু জনগোষ্ঠীরও কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে। এই সংকটময় সময়ে বাংলাদেশের হিন্দু জনসমাজের, বিশেষ করে তরুণ সমাজের সচেতন প্রতিনিধিদের কাছে আমাদের আহবান, নিজ নিজ জায়গা থেকে সব ধরণের ধর্মীয় উগ্রতা, সাম্প্রদায়িক ও ফ্যাসিবাদী প্রোপাগান্ডা ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বিবেকবান ও দায়িত্বশীল নাগরিকের ভূমিকা পালন করুন। 

বাংলাদেশের জনগণের এক অভূতপূর্ব ঐক্য, দৃঢ়তা, ও আত্মত্যাগের পথ ধরে জুলাই গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে। এই অভ্যুত্থানের সংগ্রাম ও শাহাদাতে অংশীদার বাংলাদেশের হিন্দু জনতাও। হৃদয় চন্দ্র তরুয়া, রুদ্র সেনদের আত্মত্যাগের পথ ধরে যে বিজয় অর্জিত হয়েছে, সেই বিজয়কে আমরা হারিয়ে যেতে দেবো না।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://dailyvorerpata.com/ad/af.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]