চট্টগ্রাম থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রায় সব প্রান্তের রেল কুমিল্লা ছুঁয়ে যায়। গুরুত্বপূর্ণ এই রেলপথে গলার কাঁটা হয়ে আছে এই অঞ্চলের বহু অবৈধ রেলক্রসিং। এসব অবৈধ ক্রসিংয়ের একটি কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বাকশীমূল-কালিকাপুর রেলক্রসিং। এই ক্রসিংটি শতবছর আগের বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। কিন্তু এত দিনেও এটি রক্ষণাবেক্ষণে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি রেল কর্তৃপক্ষ।
ঝুঁকিপূর্ণ ওই রেলক্রসিংটি দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ এবং শত শত যানবাহন চলাচল করে। রেল কর্তৃপক্ষ ওই ক্রসিংটিতে নিরাপত্তা দেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ফলে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটছে। আজ মঙ্গলবার সকালে এই ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় ৭ জন মারা গেছেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুড়িচং উপজেলার বাকশীমূল ইউনিয়নসহ আশপাশের এলাকার সব মানুষের উপজেলা সদরে যাওয়ার প্রধান পথে পড়ে অবৈধ রেলক্রসিংটি। অনেক বছর আগে স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে রেললাইনের দুই পাশে মাটি ফেলে যাতায়াতের ব্যবস্থা করেন। তখন থেকে এখন পর্যন্ত এটি অরক্ষিত, অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার ওপর দিয়ে যাওয়া রেলপথে আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ৬১টি ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে ৩৮টি ক্রসিং অবৈধ। এসব অবৈধ রেলক্রসিংয়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটিতে গেটম্যান দেওয়া হলেও বাকিগুলো অরক্ষিতই রয়ে গেছে। গত তিন বছরে এসব ক্রসিংয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় বাকশীমূল গ্রামের বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বয়স ৫২ বছর। আমাদের পূর্ব পুরুষদের যাতায়াতের পথও ছিল এটি। এটি শতবছরের পুরনো পথ। কিন্তু এতদিনেও এখানে কোনো গেটম্যান দেয়নি কর্তৃপক্ষ, বিষয়টি দুঃখজনক। গেটম্যান থাকলে এ দুর্ঘটনা ঘটত না।
হুমায়ূন কবির নামে এক বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের গাফিলতির ফলে ৭টি তাজা প্রাণ ঝরে গেল। তারা একটু সচেতন হলে, গেটম্যান ও ব্যারিয়ার তৈরি করে দিলে এখানে অন্তত প্রাণহানি হতো না।
স্থানীয় আরও কয়েকজন বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, রেললাইনের দুইপাশে প্রচুর উঁচু গাছ রয়েছে। স্থানীয়রা এগুলোকে আকাশি গাছ বলে ডাকেন। ঘন গাছপালার কারণে দূর থেকে ট্রেন দেখা যায় না। আজকের দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ এটি। অটোরিকশার চালক দুই পাশে ভালো করে তাকিয়েও ট্রেনটি দেখতে পাননি।
লাকসাম রেলওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমরান হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওই রেলক্রসিংটি অবৈধ। তাই সেখানে কোনো গেটম্যান নেই।
রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা (পথ) মো. লিয়াকত আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুর্ঘটনার ওই জায়গাটি এলজিইডির। এলজিইডি উদ্যোগ নিলে রেলক্রসিংটি বৈধ করা যেত। আমরা আজকে সেখানে সতর্কতার জন্য সাইনবোর্ড লাগিয়েছি। সেখানে গেটম্যান এবং ব্যারিয়ার তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে।
কুমিল্লা এলজিইডির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মো. আশরাফ জামিল ঢাকা পোস্টকে বলেন, জায়গাটি এলজিইডির ঠিক আছে। কিন্তু রেলক্রসিংয়ে গেটম্যান বা ব্যারিয়ার তৈরি করার দায়িত্ব রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের। কিছুদিন আগে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষসহ আমরা যৌথভাবে অবৈধ রেলক্রসিংগুলো পরিদর্শন করেছি। একটা সার্ভে করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দায় এড়ানোর জন্য এলজিইডির ওপর দোষ চাপালে তো হবে না।
প্রসঙ্গত, যাত্রীবাহী একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা কালিকাপুর রেলক্রসিং দিয়ে অসচেতনভাবে হঠাৎ রেললাইনে উঠে পড়লে দ্রুতগতির সুবর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনের সামনে পড়ে যায়। ফলে ট্রেনের ধাক্কায় সেটি দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং ৭ যাত্রীর সবাই মারা যান।