পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ ও সংবিধানের ২৬তম সংশোধনী বাতিলের দাবিতে রাজধানী ইসলামাবাদে জড়ো হয়েছেন ইমরানের দল পিটিআইয়ের হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক। এরমধ্যে অনেকে বিক্ষোভের মূলকেন্দ্র ডি-চকেও পৌঁছে গেছেন।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় তাদের সংঘর্ষ হয়।
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) ডাকা বিক্ষোভে কার্যত রণক্ষেত্র হয়ে পড়েছে ইসলামাবাদ।
প্রথম দিকে বিক্ষোভকারীরা পিছু হটলেও পরে সংঘবদ্ধ হয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর চড়াও হয়। এতে এ পর্যন্ত ছয়জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে বিক্ষোভ ঠেকাতে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে পাকিস্তান সরকার ও প্রশাসন। রাজধানী ইসলামাবাদে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকবি বলেন, ইসলামাবাদের ‘রেড জোনে’ প্রবেশ করলে ইমরান খানের সমর্থকদের গ্রেপ্তার করা হবে। সরকারি ভবনের সুরক্ষায় ওই এলাকায় চলাচল নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সংবাদমাধ্যম জিও টিভি জানিয়েছে, ইমরানের সমর্থকরা ইসলামাবাদে পৌঁছানোর পর আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে বিপুল কাঁদানে গ্যাস ছোড়েন। ওই সময় তারা আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন।
ইমরানের সমর্থকরা যেন রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অবকাঠামোতে ঢুকে পড়তে না পারেন সেজন্য সেখানে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, সেনাবাহিনীকে সড়কে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভকারীদের প্রতিহত করতে দেখা যায়নি। তারা মূলত অবকাঠামো রক্ষার কাজ করবে।
আলজাজিরার সাংবাদিক কামাল হায়দার ডি-চক থেকে জানিয়েছেন, সেখানে কাঁদানে গ্যাস ছাড়াও আধাসামরিক বাহিনী রেঞ্জার্সকে ‘স্বয়ংক্রিয় রাইফেল’ থেকে গুলি করতে দেখা গেছে। তিনি বলেছেন, ডি-চকে এত পরিমাণ কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়েছে যে সেখানে ‘পাতলা গ্যাসের মেঘের’ সৃষ্টি হয়েছে।
সেখানকার পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত জানিয়ে এই সাংবাদিক বলেছেন, “যখন তাদের (বিক্ষোভকারী) লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস অথবা গুলি ছোড়া হচ্ছে তখন তারা পড়ে যাচ্ছে। ঠিক তখনই আবার ফিরে আসছে। বলা যায় ইসলামাবাদে বেশ উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।”
তিনি আরও বলেছেন, “আমরা বিক্ষোভকারীদের আহতদের নিয়ে যেতে দেখেছি। তারা বলেছে, তাদের অনেকেই আহত। কিন্তু তা সত্ত্বেও দাবি থেকে তারা একটুও নড়বে না। ধারণা করা হচ্ছে ডি-চকে আরও মানুষ আসবে। এখন দেখার বিষয় সরকার এটি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।”
এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইমরান খানের মুক্তি ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে রাজধানী ইসলামাবাদমুখী জনতার স্রোত থামাতে নামানো হয়েছে সেনাসদস্যদের। শুধু তাই নয়, ইমরান সমর্থকদের দেখামাত্র গুলির নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দ্য ইকোনমিকস টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, দেশটির সংবিধানের ২৪৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী রাজধানী ইসলামাবাদে সেনাবাহিনী মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিক্ষোভকারী ও বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে নিরাপত্তা বাহিনীকে কড়া নির্দেশনা দিয়েছে প্রশাসন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজনে বিক্ষোভকারীদের দেখামাত্র গুলি চালানোর মতো চরম পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীকে।