জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) চারুকলা অনুষদের ভবন নির্মাণের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চার প্ল্যাটফর্মের সম্মিলিত একটি পক্ষ। এ সময় শিক্ষার্থীদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
গতকাল সোমবার (২৫ নভেম্বর) দিনগত রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
শিক্ষার্থীদের চার প্ল্যাটফর্মে আছে আধিপত্যবাদ বিরোধী মঞ্চ, গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন, ছাত্র ইউনিয়ন জাবি শাখার একাংশ এবং শহিদ সালাম-বরকত হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জানা যায়, চারুকলা ভবন নির্মাণ কাজ পুনরায় শুরু করার দাবিতে তারা সেখানে অবস্থান করছিলেন। এ সময় তারা বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। তবে আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় তারা নতুন প্রশাসনিক ভবনের ফটকে তালা দেন। এতে কয়েকজন শিক্ষকসহ কর্মকর্তারা ভেতরে আটকে পড়েন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ কামরুল আহসান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে সেখানে যান।
অপরদিকে রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন প্ল্যাটফর্মের সম্মিলিত একটি পক্ষ ভবন নির্মাণের বিরুদ্ধে স্লোগান নিয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় সালাম-বরকত হলের শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, মাস্টারপ্ল্যান না করে চারুকলার ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করা যাবে না।
পরবর্তীতে ২৮ নভেম্বর উপাচার্য এ বিষয়ে চারুকলার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন বলে আশ্বাস দিলে রাত সোয়া ১১টার দিকে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা নিজেদের হলে ফিরে যান।
এসময় চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘দুপুর থেকে আমাদের ভবন নির্মাণকাজ শুরুর জন্য আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি। প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলেছে। হঠাৎ রাতে (গতকাল) একদল শিক্ষার্থী পেছনে অবস্থান নিয়ে আমাদের টার্গেট করে উসকানিমূলক স্লোগান দিয়েছেন। আমাদের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধেও অসম্মানজনক স্লোগান দেওয়া হয়েছে। আগামী ২৮ নভেম্বর উপাচার্য আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন, এমন আশ্বাসে আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছি।’
ভবনটির নির্মাণকাজ বন্ধের পক্ষে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নেতারা জানান, আমরা সবসময় আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম। যখন প্রতিবেশী দেশ ভারত নানান ভাবে আমাদের ওপর আধিপত্য কায়েমের চেষ্টা করেছে, সেখানে এরকম একটি দেশের অর্থায়নে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ভবন নির্মাণ হতে পারে না। আমরা চাই, ভবন নির্মাণ করতে হলে আমাদের নিজেদের অর্থায়নেই ভবন নির্মাণ করতে হবে।
এর আগে গতকাল দুপুর থেকে দ্রুত ভবন নির্মাণের কাজ শুরুর দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয় চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা৷ এসময় আটকা পড়েন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুর রব, রেজিস্ট্রার আজিজুর রহমানসহ প্রশাসনিক ভবনের কর্মকর্তারা।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ বলেন, ‘আগামী ২৮ নভেম্বর সব পক্ষকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে আমরা একটি সভার আয়োজন করবো। সেখানে সকলের যৌক্তিক মতামতের ভিত্তিতে আমরা একটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে চাই।’