মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: খালেদা জিয়ার সঙ্গে সৌদি রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ   গ্রেপ্তারি পরোয়ানা যথেষ্ট নয়, নেতানিয়াহুর মৃত্যুদণ্ড চায় ইরান   আইপিএলের নিলামে নামই তোলা হয়নি সাকিবের    ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ৮ দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে জামায়াত আমিরের সাক্ষাৎ    নাট্যকার হিসেবে পুরস্কার পেলেন অপর্ণা রানী রাজবংশী   স্বর্ণের দাম কমলো   ইসরায়েলি নেতাদের মৃত্যুদণ্ডের দাবি ইরানের সর্বোচ্চ নেতার   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
কপ-২৯ সম্মেলনে আর্থিক সহায়তার একটি নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা
#জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো ৩শ বিলিয়ন ডলার পাবে
আজারভাইজান থেকে আরিফুর রহমান
প্রকাশ: শনিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৪, ৬:০৭ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি ধনী দেশ ২০৩৫ সালের মধ্যে জলবায়ু তহবিলে বছরে ৩০০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছে। আজারবাইজানের কপ-২৯ সম্মেলনে বর্ধিত আলোচনা শেষে এই সম্মতিতে পৌঁছায় আলোচকরা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। 

এতে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে প্রতিবছর ৩০ হাজার কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মতি এসেছে। ২০৩৫ সালের মধ্যে দেয়া হবে এই অর্থ। এছাড়াও কার্বন নিঃসরণ কমানো-সংক্রান্ত একটি চুক্তিতেও আসে ঐকমত্য। চুক্তিতে কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে একটি বৈশ্বিক বাজার তৈরিতে সমঝোতা হয়। ওই বাজারে ‘কার্বন ক্রেডিট’ কেনাবেচা করতে পারবে দেশগুলো। চুক্তি অনুযায়ী, বৃক্ষরোপণ এবং বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের মতো নানা প্রকল্প হাতে নেবে দরিদ্র দেশগুলো। এভাবে প্রতি এক টন কার্বন ডাই-অক্সাইড বা গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর বিনিময়ে একটি ‘কার্বন ক্রেডিট’ পাবে তারা। প্রায় এক দশক ধরে ‘কার্বন ক্রেডিটের’ বাজার গড়ে তোলা নিয়ে আলোচনা চলছিল।

এদিকে উন্নয়নশীল দেশগুলো এই পরিমাণকে অপমানজনকভাবে কম বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন,  ধনী দেশগুলো যদি তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না করে, তাহলে ভবিষ্যৎ জলবায়ু সম্মেলনগুলোতে বিভাজন আরও গভীর হতে পারে।


আগামীর বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি কোনো একক রাষ্ট্রের বা বিশেষ কোনো অঞ্চলের সমস্যা নয়, বরং একটি বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে দৃশ্যমান হয়েছে। তাই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত কাঠামো কনভেনশনের (ইউনএফসিসিসি) আওতায় ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর (কপ) অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এবারে কপ-২৯তম সম্মেলন বসেছে কাস্পিয়ান সাগরতীরবর্তী দেশ আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে। বৈশ্বিক এই সম্মেলনটিতে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অংশগ্রহণ করেছেন।

সাধারণত কোনো একটি অঞ্চলের বহু বছরের আবহাওয়ার গড়পড়তা ধরনকে জলবায়ু বলে। আর ওই অঞ্চলের বহু বছরের চিরচেনা আবহাওয়ার গড়পড়তা ধরণে কোনোরূপ পরিবর্তন আসাকে বলা হয় জলবায়ু পরিবর্তন। জলবায়ু পরিবর্তন একটি ধীর প্রক্রিয়া হলেও এর প্রভাব খুব মারাত্মক ও সুদূরপ্রসারী। চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, আকস্মিক বন্যা, নদীভাঙন, খরা, দাবানল, বনভূমি সংকোচন, মেরু অঞ্চলের বরফ গলে গিয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়া, কিংবা অনাবৃষ্টিজনিত কারণে বিস্তীর্ণ অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হওয়ার মতো সমস্যাগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সংগঠিত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ হিসেবে বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে দায়ী করা হচ্ছে। 

নাসার জিআইএসএসের বিশ্লেষণী প্রতিবেদন বলছে, ১৮৮০ সালের পর থেকে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা অন্তত ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বৃদ্ধি পেয়েছে। সব থেকে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে ১৯৭৫ সালের পর থেকে। পরিবেশবিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয় এড়াতে হলে বৈশ্বিক উষ্ণতা যেকোনো মূল্যে কমাতে হবে। ২০১৫ সালের কপ-২১ সম্মেলনে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি প্রাক-শিল্পযুগের চেয়ে দুই ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে এবং ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এলক্ষ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা ২০৩০ সালের মধ্যে অর্ধেকে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসার অঙ্গীকার করা হয়েছিল। তবে যেসব রাষ্ট্র শিল্পোন্নত দেশগুলোর অবিবেচনাপ্রসূত গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজনিত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করার বিষয়ে ২০০৯ সালের কপ-১৫ কোপেনহেগেন সম্মেলনে প্রাথমিক আলোচনা শুরু হয়েছিল। এ লক্ষ্যে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোর কপ-২৬ সম্মেলনে আর্থিক সহায়তা প্রদানের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। মিসরের শারম আল শেখের কপ-২৭ সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড’ নামে একটি বিশেষ ফান্ড গঠনের বিষয়ে সবাই সম্মত হয়েছিল। ২০২৩ সালে দুবাইতে কপ-২৮ সম্মেলনে লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ডে প্রায় ৭০ কোটি ডলার অনুদানের অঙ্গীকার করা হয়েছিল। তবে শিল্পোন্নত দেশগুলোর অনীহা ও মানবিক সদিচ্ছার অভাবে এই প্রকল্প যথাযথ আলোর মুখ দেখতে পায়নি। পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি এবং পরবর্তী সম্মেলনগুলোর গৃহীত অঙ্গীকারগুলোও। এতদসত্ত্বেও আজারবাইজানের বাকুতে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস, বিপর্যস্ত দেশগুলোকে সহায়তা প্রদান এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণকে সামনে রেখে বিশ্বনেতাদের নিয়ে কপ-২৯ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারের সম্মেলনে আর্থিক সহায়তার একটি নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। চেষ্টা চলছে জলবায়ু পরিবর্তিত পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে বিপর্যস্ত উন্নয়নশীল দেশগুলোর আর্থিক সহায়তার পরিমাণ ২০৩৫ সালের মধ্যে কীভাবে এক ট্রিলিয়নের অঙ্কে পৌঁছানো যায়। তবে এবারের সম্মেলনটি এমন একটি সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যখন প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার নির্বাচিত হয়েছেন। তাছাড়া ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার মতো দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা এ সম্মেলনে যোগদানই করেননি। শঙ্কা রয়েছে আর্জেন্টিনার মতো দেশের এই সম্মেলন থেকে বেরিয়ে যাওয়াতেও।

যা-ই হোক, এবারের কপ-২৯ সম্মেলনে বাংলাদেশ একটি ভিন্ন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে অংশগ্রহণ করেছে। জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে অন্তর্র্বতীকালীন নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। সরকার গঠনের পরপরই দেশের পূর্বাঞ্চলের ফেনী, কুমিল্লা ও লক্ষ্মীপুর জেলা এক ভয়াবহ আকস্মিক বন্যার কবলে পড়ে। তাছাড়া কয়েক বছর ধরে দেশ ভয়াবহ দাবদাহ ও বেশ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়েছে। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত তীব্র বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে। সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুন থেকে এ পর্যন্ত কার্বন নির্গমনের পরিমাণ শূন্য দশমিক আট শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি অব্যাহত থাকলে আগামী ৫০ থেকে ৭৫ বছরের মধ্যে সুন্দরবন সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

বেশ কয়েক বছর ধরে দেশের উত্তরাঞ্চলের নদীগুলোয় শুকনো মৌসুমে পানি শুকিয়ে যাওয়া ও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার মতো ঘটনাগুলো অহরহ ঘটছে। তাই সম্মেলনে বাংলাদেশের নজর ছিল তার জলবায়ু পরিবর্তনজনিত উদ্বেগ ও ক্ষয়ক্ষতি উত্থাপনের বিষয়ে। ঝুঁকিপূর্ণ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলা ও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অভিযোজনের জন্য বরাদ্দকৃত আর্থিক সহায়তার পরিমাণ বৃদ্ধির বিষয়ে সোচ্চার ছিল। আর্থিক সহায়তার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা শিল্পোন্নত দেশগুলোর অনীহা এবং বিপর্যস্ত দেশগুলোর দর-কষাকষির বিষয়টির তীব্র সমালোচনা করছেন। সম্মেলনে তিনি তার দীর্ঘদিনের লালিত বিগ থ্রি জিরোর ধারণা উপস্থাপনের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে একটি ভিন্ন জীবনধারার পরামর্শ দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মানবসভ্যতা রক্ষায় আমাদের শূন্য কার্বন নিঃসরণ, সম্পদের শূন্য পুঞ্জীভূতকরণ ও শূন্য বেকারত্ব—এই তিন শূন্য তত্ত্ব নিয়ে বেড়ে উঠতে হবে।

কপ-২৯ সম্মেলন থেকে বাংলাদেশ যদি তার যথার্থ প্রাপ্যতার নিশ্চয়তা পায়, তবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিদ্যমান কর্মসূচির পাশাপাশি আরও বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণে সক্ষম হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বাঁধ নির্মাণ, খরা ও লবণাক্ততাসহিষ্ণু ফসলি জাত উদ্ভাবন, নদীতে নাব্য ফিরিয়ে আনা, বনভূমির পরিমাণ বৃদ্ধি করা, উপকূলীয় অঞ্চলে বনভূমির বিস্তার করা, উপকূলীয় এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসন, কার্বন নিঃসরণ হ্রাস ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করা প্রভৃতি। 

আশা করা যায়, এতে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এগিয়ে থাকবে। তবে জলবায়ু পরিবর্তন সংকটটি বৈশ্বিক হওয়ায় প্রতিটি দেশের সরকারকে আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। বিশ্বনেতাদের শুধু বছরে নিয়ম করে সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করলেই হবে না, এর বাস্তবায়নও করতে হবে। তবেই এই সম্মেলন ফলপ্রসূ হবে এবং নির্মল হবে এই গ্রহের প্রতিটি প্রাণীর জীবন।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://dailyvorerpata.com/ad/af.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]