প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪, ২:৫৩ এএম | অনলাইন সংস্করণ
ব্যাংকিংখাতে আওয়ামী দোসররা এখনো তৎপর। নানা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তারা দেশের অর্থনীতির প্রাণ ব্যাংকিংখাতকে অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা করছে। সদ্য ৯টি ব্যাংকের সিইও এ্যান্ড এমডি নিয়োগ নিয়ে যে সব যোগ্য ব্যক্তিদের পদায়ন করা হয়েছে তাদেরকে বিভিন্ন রং লাগানোর চেষ্টা করছে। সরকারে ইতিবাচক সিদ্ধান্তগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এ বক্তব্যটি ষড়যন্তে লিপ্ত রয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ব রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়ে চলছে তুঘলকি কাণ্ড। কিছু দিন আগে এমডি নিয়োগপ্রাপ্ত হন মো. আব্দুর রহিম। তার নিয়োগে অনুমোদন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে দুটি কবিতা লেখার অভিযোগে নিয়োগটি বাতিল হয়েছে।
অবাক করা বিষয় হলো শুধু কবিতা লিখে বাদপড়া ব্যাংকার আব্দুর রহিমের স্থলে আসছেন বঙ্গবন্ধুর আসল প্রেমিক প্রকৌশলী কাজী মো. ওয়াহিদুল ইসলাম। চলতি সপ্তাহের যেকোনো দিন তাকে রূপালী ব্যাংকের এমডি নিযুক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চামড়া বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করা প্রকৌশলী কাজী মো. ওয়াহিদুল ইসলামই হচ্ছেন রূপালী ব্যাংকের এমডি। বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের প্রভাবশালী নেতা তিনি। ২০২১ সালে ১১ জানুয়ারি থেকে রূপালী ব্যাংক শাখার কমিটিতে মো. ওয়াহিদুল ইসমলাম সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তার কমিটির সভাপতি প্রকৌশলী শচীন্দ্র নাথ সমাদ্দার। আর সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী তালুকদার মো. সুলতান মাহমুদ (রুম্মান)। বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান ওই কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন।
গত ২১ অক্টোবর সোনাল, রূপালী, অগ্রণী, জনতা ও বেসিক ব্যাংকসহ ৫টি ব্যাংকের এমডি নিয়োগের প্রজ্ঞাপন হয়। তবে আটকে দেয়া হয় রূপালী ব্যাংকের এমডির নিয়োগ। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে অভিযোগ তোলা হয়, রূপালী ব্যাংকের এমডি পদের জন্য প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন পাওয়া মো. আব্দুর রহিম কবিতা লিখেছেন শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে। তাই তার নিয়োগের প্রজ্ঞাপন হয়নি। আব্দুর রহিম বর্তমানে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কর্মরত।
এ অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে উল্লেখিত দুইটি কবিতা ‘নিঃশেষে সৃষ্টি’ ও ‘বৃক্ষের শিক্ষা’ পুঙ্খানুপুঙ্খ পড়া হয়। এ কবিতায় শেখ হাসিনা কিংবা শেখ মুজিবুর রহমানের কথা সরাসরি কিংবা রূপক অর্থেও পাওয়া যায়নি। একটি কবিতা গাছ নিয়ে লেখা, অন্যটি সময় নিয়ে লিখেছেন এ ব্যাংক কর্মকর্তা। কিন্তু কবিতা দুটি ‘মাসিক জনপ্রশাসন’ নামের যে সাময়িকীতে ছাপা হয়েছে সেখানকার পৃষ্ঠা-সজ্জায় শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবুর রহমানের ছবির অলঙ্করণ রয়েছে।
আলোচিত কাজী মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের উপ-ব্যাবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) পদে আছেন।
বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতৃত্ব প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা বা মতামত জানতে কাজী ওয়াহিদুল ইসলামের মোবাইলে ০১৯২****১৬ নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাড়া দেননি।
প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনা সরকারের সময় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের এমডিদের চুক্তির বাকি মেয়াদ বাতিল করতে গত ১৯ সেপ্টেম্বর ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। তারপর ব্যাংকগুলোর এমডি ও সিইও পদ শূন্য হয়।
এরপর রাষ্ট্র মালিকানাধীন ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও চারটি বিশেষায়িত ব্যাংক মিলিয়ে ১০টি ব্যাংকে নতুন এমডি ও সিইও নিয়োগের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করে সুপারিশ পাঠায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এই সুপারিশ গত ১৬ অক্টোবর অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং ২০ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অনুমোদন করেন। চূড়ান্ত তালিকায় মো. আব্দুর রহিমের নামও ছিল।