শীতকালে রাত বড় হয়, দিন ছোট হয়। ফলে শীতকাল ইবাদত করার সুবর্ণকাল। এ কারণে শীতকালকে মুমিনের বসন্তকাল বলা হয়। সহজে অনেক ফজিলতপূর্ণ ইবাদতের সুযোগ লাভের কারণে শীতকাল মুমিনের জন্য বসন্তকাল হয়ে ওঠে।
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই রাত-দিনের পরিবর্তনে এবং আসমান ও জমিনে আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, তাতে খোদাভীরুদের (মুত্তাকিদের) জন্য নিদর্শন রয়েছে। (সুরা ইউনুস, আয়াত : ৬)
মুসনাদে আহমদে আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘শীতকাল মুমিনের বসন্তকাল।’ বায়হাকিসহ অনেকের বর্ণনায় এভাবে এসেছে, ‘শীতকাল মুমিনের বসন্তকাল; কারণ শীতের রাত দীর্ঘ হওয়ায় মুমিন রাত্রিকালীন নফল নামাজ আদায় করতে পারে এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখতে পারে।’
আমের ইবনে মাসউদ বর্ণনা করেন, নবিজি (সা.) বলেছেন, শীতল গনিমত হচ্ছে শীতকালে রোজা রাখা। (সুনানে তিরমিজি)
এ ছাড়া ওমরসহ (রা.) অনেক সাহাবীদের থেকেও এ রকম বক্তব্য বর্ণিত রয়েছে। ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে তিনি বলেছেন, ‘শীত ইবাদতকারীদের গনিমতস্বরূপ।’ (হিলয়াতুল আউলিয়া) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, শীত এলে তিনি বলতেন, ‘স্বাগতম শীতকাল! শীতকালে বরকত অবতীর্ণ হয়। নামাজের জন্য শীতের রাতগুলো দীর্ঘ হয়, রোজার জন্য দিনগুলো সংক্ষীপ্ত হয়।’
এ বক্তব্যগুলো থেকে স্পষ্ট যে, শীতকালকে আমাদের অনুসরণীয় সাহাবিরা সহজে ইবাদতের বিরাট সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতেন। রাতের একটি অংশে জেগে নামাজ পড়তেন, দিনে রোজা রাখতেন।
আমরাদেরও উচিত শীতকালে বেশি বেশি ইবাদত করা, নামাজ পড়া, রোজা রাখা, যেন নবিজি (সা.) ও তার সম্মানিত সাহাবিদের মতো শীতকাল আমাদের জীবনেও ইবাদতের বসন্তকাল হয়ে উঠতে পারে।
নামাজ-রোজার পাশাপাশি শীতকালে শীতার্ত মানুষকে শীতবস্ত্র দান করেও আমরা বিপুল সওয়াব লাভ করতে পারি। রাসুল (সা.) বলেছেন, কোন মুসলিম তার কোন বিবস্ত্র মুসলিম ভাইকে কাপড় পরিধান করালে আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের সবুজ পোশাক পরিধান করবেন।
কোন মুসলিম তার ক্ষুধার্ত মুসলিম ভাইকে খাবার খাওয়ালে আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। কোন মুসলিম তার কোন তৃষ্ণার্ত মুসলিম ভাইকে পানি পান করালে আল্লাহ তা’আলা তাকে মোহরাঙ্কিত স্বর্গীয় সুধা পান করাবেন। (সুনানে আবু দাউদ, সুনানে তিরমিজি)
শীতকালে গরম পোশাক পরিধান করা সুন্নত। হজরত ওমর (রা.) তাঁর শাসনামলে গভর্নরের উদ্দেশে শীতের আগমনে লিখতেন, ‘শীত কিন্তু এসে গেল, এ তোমাদের দেহের শত্রু। অতএব এর প্রতিরোধে পশমি বস্ত্র, মোজা, হাতমোজা ইত্যাদির প্রস্তুতি নাও। আর পশম দিয়ে গায়ের চামড়ায় এবং শরীরের পোশাকে শীতের আক্রমণ ঠেকাও। কারণ, শীত খুব দ্রুত প্রবেশ করে, তবে সহজে বিদায়
নেয় না।’
অজুর ক্ষেত্রে পা না ধুয়ে মোজার ওপর মাসেহ করার বিধান রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে অজু করে মোজা পরতে হয়। ‘মুসাফির’ (ভ্রমণরত) ব্যক্তি তিন দিন তিন রাত (৭২ ঘণ্টা) পর্যন্ত মাসেহ করে যেতে পারবেন এবং ‘মুকিম’ (সবাসে অবস্থানরত) ব্যক্তি এক দিন এক রাত (২৪ ঘণ্টা) মাসেহ করতে পারবেন।
এ সময়সীমার পর অজুর প্রয়োজন হলে মোজা খুলে পা ধুয়ে অজু করতে হবে। অনেক মুজতাহিদ ফকিহ শুধু চামড়ার মোজার ওপর মাসেহ করা অনুমোদন করেন। হজরত মুগিরা ইবনে শুবা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) কাপড়ের মোজা (জাওরাবাইন) এবং জুতার ওপরও মাসেহ করেছেন। (তিরমিজি: ৯৯; আবু দাউদ: ১৫৯) এ হাদিসের ভিত্তিতে অন্যান্য মুজতাহিদ ফকিহ কাপড়ের মোজা ও পুরো পায়ের পাতা আবৃতকারী জুতার ওপর মাসেহ করা অনুমোদন করেন।