শায়খ আহমাদুল্লাহের সঙ্গে শিশু হাবিবুর রহমান, ছবি : সংগৃহীত
মাত্র ৪৯ দিনে পুরো কোরআন শরীফ হিফজ করেছে নোয়াখালীর বিস্ময় শিশু হাবিবুর রহমান (৮)। সে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার সুরেরগো পোলে অবস্থিত বাইতুল কুরআন ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসার হিফজ বিভাগের শিক্ষার্থী।
হাবিবুরের ইচ্ছে ছিলো জনপ্রিয় ইসলামী আলোচক শায়খ আহমাদুল্লাহের সঙ্গে দেখা করা। পরবর্তীতে তার এ ইচ্ছের কথা গণমাধ্যম থেকে জানতে পারেন শায়খ আহমাদুল্লাহ। দেশে ফিরেই হাবিবুরের ইচ্ছে পূর্ণ করেছেন এই জনপ্রিয় ইসলামী স্কলার।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) আহমাদুল্লাহের আমন্ত্রণে সপরিবারে সাক্ষাৎ করে হাফেজ হাবিবুরের পরিবার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি শেয়ার করে এক স্ট্যাটাসে এ তথ্য জানিয়েছেন শায়েখ আহমাদুল্লাহ।
ফেসবুক পোস্টে আহমাদুল্লাহ বলেন, মাত্র ৪৯ দিনে হাফেজ হওয়া হাবিবের সাথে সাক্ষাতের সৌভাগ্য হলো আজ। মিডিয়া মারফত জানতে পারি, বিরল কৃতিত্বের অধিকারী এই মেধাবী শিশুটি আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চায়।
তিনি বলেন, এই খবর দেখামাত্র হাবিবের প্রতি বিশেষ স্নেহ ও ভালোবাসা অনুভব করি। সিদ্ধান্ত নিই, বিরল মেধার অধিকারী হাফেজ শিশুটির সাথে কিছু সময় কাটাব।
জনপ্রিয় এই ইসলামী স্কলার বলেন, দেশের বাইরে থাকায় এতদিন সম্ভব হয়নি। আজ সপরিবারে তাকে ও তার উস্তাযকে অফিসে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। তার সাথে কিছু সময় কাটিয়েছি, স্বপ্নের কথা শুনেছি, শুনেছি তার সুন্দর কণ্ঠের তিলাওয়াত।
আহমাদুল্লাহ বলেন, কুরআন এক মহাসমুদ্র। মাত্র ৪৯ দিনে এই সমুদ্রকে বক্ষে ধারণ করা কুরআনের একটি মু’জিযা। এটি বিরল সৌভাগ্য ও আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া সম্ভব নয়। দোয়া করি, মহান আল্লাহ হাবিবকে কুরআনের যোগ্য খাদেম হিসেবে কবুল করুন। তার উস্তাযকে উত্তম বিনিময় দান করুন।
কমেন্ট বক্সে তিনি আরও দুটি ছবি পোস্ট করেছেন এবং সংযুক্তিতে লেখেন, তার বাবা মক্কায় থাকেন, প্রবাসী। ভাইও মাত্র এক বছরের হাফেজ হয়েছে। তার মা, ভাই ও ছোট বোন এসেছে। তার মায়ের আবদার ছিল ছেলেদের লেখাপড়ার ব্যাপারে গাইড করার। আশ্বস্ত করেছি সাধ্য অনুযায়ী তার পড়াশোনার তদারকি করবো ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের শিশুদের দেশ, জাতি ও মুসলিম মিল্লাতের কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ হিসেবে কবুল করুন।
বিস্ময়কর ও প্রখর মেধাবী এই হাবিবুর রহমান নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার বীজবাগ ইউনিয়নের বালিয়াকান্দী গ্রামের সৌদি প্রবাসী মাইনুদ্দিন রাসেলের ছেলে।
জানা গেছে, শিশু হাবিব ২০২২ সালে এক বছর নুরানী পদ্ধতিতে পড়ার পর ২০২৩ সালের মাঝামাঝি বাইতুল কুরআন ইন্টারন্যাশনাল হিফজ মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে নাজেরা (কোরআন দেখে পড়া) বিভাগে পড়ে। এরপর ২০২৪ সালের জুলাইয়ের ১৯ তারিখে কোরআন শরিফ হেফজ (মুখস্থ) শুরু করে। এরপর গত ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৪৯ দিনে পুরো কোরআন মুখস্থ করে সে। পাঁচ পৃষ্ঠা থেকে সবক দেওয়া শুরু। এরপর কখনো ১০ পৃষ্ঠা আবার কখনো ১৫ পৃষ্ঠা। এভাবে সবক দিয়ে হেফজ সম্পন্ন করে সে। এমন বিরল কৃতিত্ব অর্জনে তার শিক্ষক, সহপাঠী ও পরিবারের লোকরা আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত।
শিশু হাফেজ হাবিবুর রহমান জানায়, আলহামদুলিল্লাহ! মাত্র ৪৯ দিনে কোরআন হেফজ করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমার শিক্ষক, সহপাঠী এবং পরিবারের সবাই আনন্দিত। আমার বাবা-মায়ের স্বপ্ন আমি যাতে বড় আলেম হতে পারি। আমি একজন বড় আলেম হতে চাই। শায়েখ আহমাদুল্লাহ হুজুরের মতো বড় আলেম হতে চাই এবং তার সঙ্গে দেখা করে তার থেকে দোয়া নিতে চাই। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।
শিশু হাফেজ হাবিব আরও জানায়, আমি বড় আলেম হতে চাই, যেন আমার বাবা-মা মারা গেলে তাদের জানাজা পড়াতে পারি।
হাবিবুর রহমানের শিক্ষক হাফেজ মো. নুরুল আলম বলেন, সে পড়াশোনায় খুব আগ্রহী ছিল। হাবিব অত্যন্ত নম্র, ভদ্র এবং প্রখর মেধাবী ছেলে। সবাই যখন বিকেলে খেলাধুলা করতো তখন সে রুমের ভেতরে পিলারের পাশে বসে বসে পড়তো। সে যেদিন হাফেজ হয়েছে সেদিন বিকেলেও যথা সময়ে পড়তে বসে গেছে। আল্লাহ তায়ালা তাকে বড় আলেম হিসেবে কবুল করুন। তার একটা স্বপ্ন শায়েখ আহমাদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে দেখা করা।
হাবিবুর রহমানের মা সাজেদা আক্তার বলেন, আমার স্বামী প্রবাসে থাকেন। এই ছেলে দুনিয়াতে আসার আগ থেকে তাকে নিয়ে অনেক কষ্ট করেছি। আল্লাহ তায়ালা আমার স্বপ্ন পূরণ করেছেন, এজন্য আমি আল্লাহ তায়ালার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। শিক্ষকদেরকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমার বড় ছেলে আব্দুর রহমানও একই দিন হাফেজ হয়েছে। আল্লাহ তাদের মনের আশা পূরণ করুন এবং আল্লাহ দ্বীনের জন্য কবুল করুন।