চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষকরা চলতি শীতকালীন সবজি ভুট্টা বরো আবাদসহ রবি ফসলের জন্য অতিব প্রয়োজনীয় ডি এপি সার পাচ্ছেনা। পেলেও দাম বেশি নেয়া হচ্ছে। বন্যার দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই কৃষকরা পড়েছেন চরম দুশ্চিন্তায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সারের সংকটে বিপাকে পড়েছেন এ জেলার চাষিরা।
চলতি মৌসুমে শীতকালীন সবজি, ভুট্টা ও বোরো আবাদের এ সময়ে অতিরিক্ত দামে প্রয়োজনীয় সার কিনতে হচ্ছে তাদের। চলছে বোরো ধানের বীজতলা, গম ও ভুট্টার জমি প্রস্তুতের কাজ। কৃষির এমন সময়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বেড়ে গেছে ডিএপি সারের দাম। সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বস্তায় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা বেশি দামে ডিএপি সার কিনতে হচ্ছে।
কৃষকদের অভিযোগ, অনেক ডিলারের কাছে ডিএপি সার পাওয়া যাচ্ছে না। যাদের কাছে আছে সেখানে দাম বেশি। ১ হাজার ৫০ টাকার ডিএপি সারের বস্তা তাদের কিনতে হচ্ছে ১৩শ’ থেকে ১৪শ’ টাকায়। রবিশস্যের বীজ বপনের সময়কাল ১৬ই অক্টোবর থেকে ৩০শে নভেম্বর পর্যন্ত। এই সময়ে মূলত নন-ইউরিয়া সার ব্যবহার করা হয়। চারা গজানোর পর ব্যবহার করা হয় ইউরিয়া সার। নন-ইউরিয়া সারগুলোর একটি হচ্ছে ডিএপি।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সার ডিলাররা বলছেন, চলতি নভেম্বর মাসে ডিএপি সার বরাদ্দ পাননি তারা। এজন্য কৃষকদের চাহিদামতো সার দেয়া সম্ভব হয়নি। এ সারের বিকল্পও নেই। ডিএপি সার না পেয়ে অনেক কৃষকরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে জানান তারা।
জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিএডিসি’র ৩৩ জন ডিলার রয়েছেন। তারা নভেম্বর মাসের বিএডিসি’র ডিএপি সার বরাদ্দ পাননি। অভিযোগ উঠেছে, কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বিএডিসি’র সার ডিলারদের বঞ্চিত করে বরাদ্দ দিয়েছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) ডিলারদের। সেই সুযোগে বিসিআইসি ডিলাররা সিন্ডিকেট করে বাড়িয়েছে ডিএপি সারের দাম। বিসিআইসি ডিলারদের কাছে কৃষি কর্মকর্তা অনৈতিক সুবিধা নিয়ে বিএডিসি ডিলারদের বঞ্চিত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
নাচোল উপজেলার একজন ডিলার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিসিআইসি ডিলাররা ডিএপি সার বরাদ্দ পেয়েছে কিন্তু বিএডিসি ডিলাররা পাননি। কৃষকদের জিম্মি করে বেশি দামে বিক্রি করতেই বিএডিসি’র ডিলারদের বঞ্চিত করে বিসিআইসি ডিলারদের সার দেয়া হয়েছে। সবাই বরাদ্দ পেলে সিন্ডিকেটের সুযোগ ছিল না। বিসিআইসি’র অনেক ডিলার যশোরের নোয়াপাড়ায় বিপণনকেন্দ্রে ডিএপি সার বিক্রি করে দিয়েছেন। এজন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জে ডিএপি সারের সংকট দেখা দিয়েছে।
সার সিন্ডিকেটে আকবর-পলাশ বহাল:
অভিযোগ উঠেছে, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) ডিলাররা কৃষকদের জিম্মি করতে এমন সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। বিসিআইসি’র ডিলারদের সংগঠন বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশনের (বিএফএ) চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি আকবর হোসেন এ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছেন। আর এই সিন্ডিকেটর যোগসাজশে রয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার। বিভিন্ন নামে বিসিআইসি’র ১১টি লাইসেন্সের মালিক এই আকবর হোসেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার নিজেকে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বন্ধু পরিচয়ে দিয়ে নানা অনিয়ম করেছেন। প্রণোদনায় মানহীন বীজ দিয়ে কৃষকের সঙ্গে প্রতারণা। সার সিন্ডিকেট করে অনৈতিক সুবিধা আর সার ডিলারদের কাছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে চাঁদাবাজিও করেছেন তিনি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর অধিকাংশ সরকারি দপ্তরের অনিয়ম বন্ধ হলেও বদলায়নি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চিত্র। এখনো বহাল বিএফএ’র সভাপতি আকবর হোসেন ও কৃষি কর্মকর্তা ড. পলাশ সরকার সিন্ডিকেট।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক জানান, সারের উপযুক্ত মৌসুমে কোনো রকম সংকট কাঙ্ক্ষিত নয়। তিনি বলেন, এ সময়ে সংকট হলে কৃষি পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে, কমবে উৎপাদনও। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কারা কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। স্থানীয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে ভূমিকা রাখতে হবে।
কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপ-পরিচালক ও জেলা সার বীজ মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব ড. পলাশ সরকার বলেন, ডিএপি সারের দাম বাড়ার অভিযোগ জানা নেই। ডিএপি সারের জন্য কৃষকদের বিসিআইসি ডিলারদের কাছে যেতে হবে।
বিএডিসি ডিলাররা নোয়াপাড়াতে সার বিক্রি করে দেয়ার প্রশ্নে তিনি বলেন, সার বিক্রি করে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ অভিযোগ সঠিক নয়। সারের দাম বেশি নেয়ার প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিএডিসি ডিলাররা ডিএপি সার বরাদ্দ না পাওয়ার বিষয়ে এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, বিএডিসি গোডাউন থেকে বরাদ্দ হলে বিএডিসি ডিলাররা পায়। আমদানিকারকদের কাছ থেকে হলে পুরোটাই বিসিআইসি ডিলাররা পাবে। এটাই নিয়ম।