বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪ ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: ব্যারিস্টার সুমন দুই দিনের রিমান্ডে   ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নামে ৬ মামলা বাতিল   সাবেক সচিব নাসির উদ্দীনকে নতুন সিইসি নিয়োগ   ডক্টরেট ডিগ্রি পেলেন ক্রিকেটার মঈন আলী   বিক্ষোভরত অটোরিকশা চালকদের সেনাবাহিনীর ধাওয়া   জামিন পেলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান   রেলপথ মন্ত্রণালয়ে যুক্ত হলো ৫ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা
সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে খুব দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: রোববার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৪, ৭:৪৪ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আমরা চাইবো, আমরা যেন এমন একটি নির্বাচন ব্যবস্থা সৃষ্টি করতে পারি যা যুগযুগ ধরে অনুসরণ করা হবে। এর ফলে রাজনৈতিক সংকট থেকে আমাদের দেশ রক্ষা পাবে। এজন্য প্রয়োজনীয় সময়টুকু আমি আপনাদের কাছে চেয়ে নিচ্ছি। নির্বাচনী সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে খুব দ্রুত আপনারা নির্বাচনের রোডম্যাপও পেয়ে যাবেন।’

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্ণ হয়েছে গত ১৫ নভেম্বর। ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে আজ রোববার সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা চাইবো, আমরা যেন এমন একটি নির্বাচন ব্যবস্থা সৃষ্টি করতে পারি যা যুগযুগ ধরে অনুসরণ করা হবে। এর ফলে রাজনৈতিক সংকট থেকে আমাদের দেশ রক্ষা পাবে। এজন্য প্রয়োজনীয় সময়টুকু আমি আপনাদের কাছে চেয়ে নিচ্ছি। নির্বাচনী সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে খুব দ্রুত আপনারা নির্বাচনের রোডম্যাপও পেয়ে যাবেন।’

জাতির উদ্দেশে দেওয়া এই ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে একযোগে সম্প্রচার করা হয়।

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমি নিশ্চিত নই, সংস্কার প্রস্তাবসমূহ বাস্তবায়নের সুযোগ আমরা কতটুকু পাবো। তবে আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, আপনারা সুযোগ দিলে প্রয়োজনীয় কিছু অত্যাবশ্যকীয় সংস্কার কাজ শেষ করেই আমরা আপনাদের কাঙ্ক্ষিত নির্বাচন আয়োজন করবো। ততো দিন পর্যন্ত আমি আপনাদের ধৈর্য্য ধারণ করার অনুরোধ করবো’।

তিনি বলেন, নির্বাচন কবে হবে এই প্রশ্ন আপনাদের সবার মনেই আছে। আমাদের মনেও সারাক্ষণ আছে। আপনারা লক্ষ্য করেছেন নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছি। কয়েকদিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন হয়ে যাবে। তারপর থেকে নির্বাচন আয়োজন করার সমস্ত দায়িত্ব তাদের উপর বর্তাবে।

নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘এই যাত্রা  আর থামবে না। কিন্তু যেতে যেতে আমাদের অনেকগুলো কাজ সেরে ফেলতে হবে। এই ট্রেন শেষ স্টেশনে কখন পৌঁছাবে সেটা নির্ভর করবে কত তাড়াতাড়ি আমরা তার জন্য রেল লাইনগুলি বসিয়ে দিতে পারি আর তা হবে রাজনৈতিক দলসমূহের ঐক্যমত্যের মাধ্যমে।’

সরকারের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান বলেন,‘ আপনারা সবাই জানেন, আমাদের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের মতামত নিয়ে যাচ্ছি। সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে এসব মতামত অনেকাংশে প্রতিফলিত হচ্ছে। চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ায় তাদের প্রতিটি মতামত সক্রিয় ভাবে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। আমরা আশা করছি নির্ধারিত সময়ে, ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যেই সংস্কার কমিশনগুলো তাদের সুপারিশমালা সরকারের কাছে পেশ করতে পারবে। তাদের সুপারিশ নিয়ে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ক্রমাগতভাবে আলোচনায় বসবো। সকলের ঐকমত্যের ভিত্তিতেই আমরা সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত করবো ‘

জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা হাল নাগাদসহ আরো কিছু কাজ শুরু করে দিতে পারবে যা একটি অবাধ নির্বাচনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। প্রথম বারের মত প্রবাসী বাংলাদেশিরা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে যাতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সে লক্ষ্যেও সরকার কাজ করছে।

তবে আমরা মনে করিনা যে একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিলেই নির্বাচন আয়োজনে আমাদের দায়িত্ব শেষ। রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সংস্কার আমাদের এই সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার। আপনারাই আমাদেরকে এই ম্যান্ডেট দিয়েছেন। যে ছয়টি সংস্কার কমিশন আমরা শুরুতে গঠন করেছিলাম তারা ইতোমধ্যে তাদের কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে আপনারা তাদের কার্যক্রমের আপডেটও দেখছেন। কয়েকটি সংস্কার কমিশন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম গঠন করেছে। আমার অনুরোধ আপনারা এই প্ল্যাটফর্মে উৎসাহ সহকারে আপনাদের মতামত জানাতে থাকুন।

নির্বাচন সংস্কার কমিশন গঠনের কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রথম ছয়টি সংস্কার কমিশনের মধ্যে একটি হলো নির্বাচন সংস্কার কমিশন। নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এই কমিশনের সুপারিশমালা অত্যন্ত জরুরি। তাদের প্ল্যাটফর্মে যান। আপনার মতামত খোলাখুলিভাবে তুলে ধরুন। আপনি দেশের মালিক। আপনি বলে দিন আপনি কি চান। কীভাবে চান’।

সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য সংস্কার নিয়ে দেশবাসীকে খোলামনে কথা বলার আহবান জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন,‘ নির্বাচন নিয়ে আপনাদের সকল বক্তব্য বিনাদ্বিধায় বলতে থাকুন। সবার মনের কথা তুলে ধরুন। আমার অনুরোধ সংস্কারের কথাটাও একই সঙ্গে বলুন। সংস্কারকে পাশ কাটিয়ে যাবেন না। নির্বাচনের কথা বলার সঙ্গে নির্বাচন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সংস্কারের কথাটিও বলুন। সংস্কার হলো জাতির দীর্ঘ মেয়াদি জীবনী শক্তি। সংস্কার জাতিকে বিশেষ করে আমাদের তরুণ-তরুণীদের নতুন পৃথিবী সৃষ্টির সুযোগ দেবে। জাতিকে বঞ্চিত করবেন না।’

তিনি বলেন, নির্বাচন আয়োজনে যে সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালায় রাজনৈতিক দলসমূহ এবং দেশের সকল মানুষের মতামত অপরিহার্যসে কমিশন হলো সংবিধান সংস্কার কমিশন। এই সুপারিশমালার কোন অংশ সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে তার ভিত্তিতে নির্বাচনী আইন সংশোধন করতে হবে। সমান্তরাল ভাবে ভোটার তালিকা হাল নাগাদ করার প্রক্রিয়া চলতে থাকবে।

অন্তর্বর্তী সরকার সৃষ্টি হয়েছে রাজনীতিকে নীতির কাঠামোয় আনার জন্য, এবং রাজনীতির জন্য নতুন পরিবেশ সৃষ্টির নিবিড় আকাঙ্ক্ষা থেকে। এই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা থেকে জাতিকে বঞ্চিত করবেন না।

সংস্কারের জন্য নির্বাচন কয়েক মাস বিলম্ব করা যেতে পারে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘ইতোমধ্যে অন্যান্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা নিয়ে আলাপ চলতে থাকবে। নির্বাচন ছাড়াও আরো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করার ব্যাপারে ঐক্যমত্য গঠনের জন্য অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন হতে পারে। দেশবাসীর কাছে, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলির কাছে আমরা ক্রমাগতভাবে প্রশ্ন তুলতে থাকতে থাকবো কী কী সংস্কার নির্বাচনের আগে আপনারা করে নিতে চান। নির্বাচনের আয়োজন চলাকালীন কিছু সংস্কার হতে পারে। সংস্কারের জন্য নির্বাচনকে কয়েক মাস বিলম্বিতও করা যেতে পারে’।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা দু’দিন পরে চলে যাবো। কিন্তু আমাদের মাধ্যমে জাতির জন্য যে ঐতিহাসিক সুযোগ সৃষ্টি হলো সে সুযোগটা যেন কোন রকমেই হাতছাড়া করে না দিই এটার ব্যাপারে দৃঢ় থাকার জন্য আমি দলমত, নারী-পুরুষ, ধর্ম, তরুণ-বৃদ্ধ, ছাত্র, ব্যবসায়ী, শ্রমিক, কৃষক নির্বিশেষে সবার কাছে আহ্বান জানাচ্ছি। আশা করি আপনারা আমার এই আবেদন গ্রহণ করবেন।

ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://dailyvorerpata.com/ad/af.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]