তাবলিগ জামাতের বিবাদমান দুই গ্রুপের মধ্যে পতিত ফ্যাসিস্টদের প্ররোচনায় ধর্মীয় দাঙ্গা লাগানোর কোনো ষড়যন্ত্র চলছে কি-না, তা খতিয়ে দেখা অতীব প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তাবলিগের সাদপন্থি আলেমরা।
বুধবার (১৩ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে সংবাদ সম্মেলনে ওই আহ্বান জানান তারা।
তারা জানান, তাবলিগ-জামাতের বিবাদমান দ্বন্দ্বের পর থেকে বিগত ৭ বছর যাবত প্রশাসনের সিদ্ধান্তে কাকরাইল মসজিদে অবস্থানের ক্ষেত্রে জুবায়েরপন্থিরা ৪ সপ্তাহ ও সাদপন্থিরা দুই সপ্তাহ করে পর্যায়ক্রমে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। যদিও বিগত সরকারের এমন বৈষম্যপূর্ণ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে আসছিল সাদপন্থিরা। এখন পুরো কাকরাইল মসজিদ অবৈধ দখল করে ১৫ নভেম্বর থেকে অবস্থান নিতে চায় জুবায়েরপন্থিরা।
তারা আরও বলেন, অপরদিকে কাকরাইল মসজিদের একটি অংশে এমনিতেই জুবায়েরপন্থিরা সারা বছর মাদরাসার নামে আলাদা অবস্থান নিয়ে থাকেন। কিন্তু হেফাজতপন্থি আলেমদের সাম্প্রতিক ঘোষণার প্রেক্ষাপটে জুবায়েরপন্থিরা সরকারি সিদ্ধান্ত অমান্য করে কাকরাইল মসজিদ স্থায়ীভাবে দখল নেওয়ার ঘোষণা দেয়াকে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের দিকে ঠেলে দেওয়ার আশঙ্কা করছি আমরা। এমন পরিস্থিতিতে ভয়াবহ ধর্মীয় সংঘাত ও হতাহতের মতো ঘটনার আশঙ্কা করছেন সাধারণ মুসল্লি ও তাবলিগের সাথীরা। আমরা মনে করি, সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে উভয় পক্ষের দ্বন্দ্ব নিরসন দরকার। আলেম-ওলামারা এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করে পূর্বের মতো কাকরাইল মসজিদসহ বিশ্ব ইজতেমা ও সারা দেশে আলাদা আলাদা কার্যক্রম পরিচালনা করলে সংঘাত হবে না।
সাদ পন্থিরা বলেন, আগামী শুক্রবার থেকে মাওলানা সাদপন্থিদের কাকরাইল বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও গতকাল তাবলিগের নামে একটি রাজনৈতিক দলের চিহ্নিত নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে শক্তি প্রদর্শন করে দখলে রাখার ঘোষণা দিয়েছে মাওলানা জুবায়েরপন্থিরা। তাদের সঙ্গে যোগ দেবে হেফাজতে ইসলাম ও কওমি মাদরাসার ছাত্ররা। তবে তাবলিগের সাদ অনুসারীরাও কয়েক লাখ লোকের জমায়েতের মাধ্যমে তাদের জনশক্তি জানান দিয়ে কাকরাইল মসজিদ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে পারে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এমতাবস্থায় সরকার যদি শক্ত ভূমিকায় অবতীর্ণ না হয়, তাতে দুপক্ষে ব্যাপক সংঘাতের পাশাপাশি দেশব্যাপী উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়বে। এমনটি ঘটলে এই মুহূর্তে দেশকে অস্থিতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরবে পতিত শক্তি। তবলিগ ইস্যুতে আলেমদের যে অংশটি এখন সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে তারা সবাই বিগত সরকারের সুবিধাভোগী ছিলেন।
বিশেষত মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে যারা উপস্থিত ছিলেন তারা সবাই আওয়ামী সরকারের বিশ্বস্ত দোসর এবং ধর্মীয় সেক্টরে আওয়ামী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। হঠাৎ করে তাবলিগের মীমাংসিত ইস্যু নিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার পেছনে কোনো শক্তির ইন্ধন আছে কি না তা খতিয়ে দেখার দাবি রাখে। এরাই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আঁতাত করে বিগত ৭ বছর তাবলিগের বিশ্ব আমির মাওলানা মোহাম্মদ সা'দ কান্ধলভীকে বাংলাদেশে আসতে দেয়নি। কাকরাইল পুরো বছর দখল রেখেছে। লাগাতার ৭বছর বিগত সরকারের সহযোগিতায় প্রথম পর্ব ইজতেমা করে আসছে।এরাই ২৩ জুলাই ছাত্র আন্দোলনকে দমানোর জন্য বিগত সরকারের সাথে শান্তি বৈঠক করে। মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ পন্থি আলেম হিসেবে পরিচিত জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব হেফাজত নেতা মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া, মহাসচিব ফজলুল করিম কাসেমী, দলের সহসভাপতি মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী, হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি কিফায়াতুল্লাহ আজহারী, মুফতি জহির ইবনে মুসলিম।
তাবলিগের সাদপন্থি আলেমরা তাদের সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে বলেন, মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া হেফাজত ও জমিয়তে আওয়ামী ও ভারতপন্থি হিসেবে পরিচিত। ২০২১ সালে আলেমদের ধরপাকড়ের সময় হেফাজত ও জমিয়তে সরকারের সঙ্গে মূল লিয়াজুকারী ছিলেন তিনি। ওইসময় হেফাজতের আওয়ামীবিরোধী নেতাদের বাদ দিয়ে সরকার ঘনিষ্ঠ হেফাজতের কমিটি প্রণয়নে তার ভূমিকা ছিল ব্যাপক। এছাড়া ভারতীয় দূতাবাসের বিভিন্ন অ্যাসাইনমেন্ট বাস্তবায়নের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমীকে ২০২০ সালে মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীর মৃত্যুর পরপরই বারিধারা মাদ্রাসা থেকে আওয়ামী সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বহিষ্কার করেন বর্তমান প্রিন্সিপাল ও হেফাজত নেতা মুনির কাসেমী।
মুফতি কিফায়াতুল্লাহ আজহারী বৃহত্তর উত্তরায় আওয়ামী এমপি হাবিব হাসানের খলিফা ও জহির ইবনে মুসলিম সদ্য সাবেক এমপি খসরু চৌধুরীর খলিফা বলে আলেমদের মধ্যে পরিচিত বলেও তারা অভিযোগ করেন। সর্বশেষ ৭ জানুয়ারীর প্রহসনের ভোটে এ দুইজন দুই প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি মাঠে কাজ করেছেন। পতিত ফ্যাসিস্টদের প্ররোচনায় ধর্মীয় দাঙ্গা লাগানোর কোনো ষড়যন্ত্র চলছে কি না তা খতিয়ে দেখা অতীব প্রয়োজন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তৃতা করেন, কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গি বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের ইমাম মুফতি আজীমুদ্দীন সাহেব। উপস্থিত ছিলেন, তাবলিগ জামাতের মুরুব্বি, শায়খুল হাদীস মাওলানা জিয়া বিন কাসেম, শায়খুল হাদীস মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক কাসেমী, মুফতী মু'আজ বিন নূর, জামিয়া কাশিফুল উলুম ঢাকার মুহতামিম মাওলানা সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহ, জাতীয় ইত্তেহাদুল উলামা ও আইম্মা পরিষদের সভাপতি পীর মুফতী শফিউল্লাহ মক্কি, মুফতি আরীফুর রহমান আলীফ, কাকরাইলের মুকিম রেজা আরিফ, ঢাকা জেলার তাবলিগের জিম্মাদার আতাউর রহমান, তৌহিদুল হক সোহেল, ড. মো. রেজাউল করিম, মিডিয়া সমন্বয়ক মো. সায়েম প্রমুখ।