মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে এখনো একটি 'সিন্ডিকেট' কাজ করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার যুগ্ম সম্পাদক ফখরুল ইসলাম।
তার ভাষ্য, এখন মালয়েশিয়া যেতে একজন শ্রমিকের সাড়ে ৫ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। সরকার যদি যথাযথভাবে নজরদারি করে, সরকারি তালিকা অনুযায়ী শ্রমিক পাঠায়, তাহলে দেড় লাখ টাকার মধ্যেই মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো সম্ভব।
“কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অনলাইনে সাপোর্ট দেওয়ার পরিবর্তে প্রক্রিয়াটিকে নিয়ন্ত্রণ করে শ্রমিকদের খরচ বাড়াচ্ছে। এই সিন্ডিকেট শ্রমিকদের খরচ বাড়িয়েছে, যা বাংলাদেশের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার পাশাপাশি এজেন্সিগুলোর মধ্যে বৈষম্য তৈরি করেছে।”
বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস্ রিসার্চ ইউনিট (রামরু) আয়োজিত 'মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট ক্ষতি মূল্যায়ন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ' শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন ফখরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগ করা হলেও এমন সিন্ডিকেট অন্য কোথাও নেই।
অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী পাঠানোর ‘সিন্ডিকেটের’ বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান রামরুর নির্বাহী পরিচালক সি আর আবরার।
তিনি বলেন, “গত দশকব্যাপী মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সিন্ডিকেটের প্রভাব বিরাজমান, যেখানে বিভিন্ন ব্যক্তি পরিবর্তিত হলেও হোতারা একই রয়ে গেছে। এই সিন্ডিকেটের কারণে অভিবাসন প্রত্যাশী ও অভিবাসী কর্মীদের বিপুল আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, যা রোধে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।”
সি আর আবরার বলেন, এই সিন্ডিকেটের কারণে বহু পরিবার আর্থিক ও সামাজিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন এবং অনেক শ্রমিকের পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে।
সিন্ডিকেটের ফলে শ্রমিকরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, তার পাঁচগুণ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “যে কোনো দ্বিপক্ষীয় সরকারি চুক্তি সম্পাদনেও অধিকতর স্বচ্ছতার প্রয়োজন। কেউ যেন এই সিন্ডিকেট আবারও চালু করতে না পারে, সে বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।”
বায়রার সদস্য মোস্তফা মাহমুদ বলেন, ২০২১ সালে মালয়েশিয়ায় রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া হয়। যেখানে প্রায় ১০০ জন সরকারের সহযোগিতায় কাজ করেছে।
“নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এ বিষয়ে কার্যকর কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি, বরং বৈষম্য আরও বেড়েছে। প্রবাসী শ্রমিকদের স্বার্থে লাউঞ্জ উদ্বোধনের পরিবর্তে বিনা খরচে গমন ও ভিসা খরচ কমানো অনেক বেশি কার্যকর হতে পারত।”
ওয়ারবে ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুল হক বলেন, বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় আসার পর এ বিষয়ে একটি কমিশন গঠন করা উচিত ছিল। এই কমিশনের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর অনিয়ম ও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হত।
“ভারত ও নেপালের মতো দেশ থেকে অনেক কম খরচে শ্রমিক মালয়েশিয়ায় যাচ্ছেন, কিন্তু বাংলাদেশের শ্রমিকরা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন এবং এর ফলে অনেক পরিবার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।”
দ্রুত এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে লুটপাটের টাকা উদ্ধার করার ওপর জোর দেন তিনি।
হেলভেটাস বাংলাদেশের প্রকল্প পরিচালক আবুল বাসার বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে এই সিন্ডিকেটের কারণে ক্ষতির শিকার হওয়া শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা সম্ভব হচ্ছে না। দেশের সম্মান পুনরুদ্ধার ও শ্রমিকদের সুরক্ষায় সরকারের উচিত যথাযথ দায়িত্ব পালন করা।”