‘দোয়া’ আরবি শব্দ। এর অর্থ- চাওয়া, প্রার্থনা করা, নিবেদন করা। দোয়ার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নিকট আকুতি-মিনতি জানায়, তার মনের চাওয়া-পাওয়া আল্লাহর কাছে প্রকাশ করে।
আল্লাহ তাআলার সে বান্দাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন যে তার কাছে চায়। আর যে চায় না, তার ওপর অসন্তুষ্ট হোন। তাই কল্যাণের যেকোনো কিছু আল্লাহর থেকে চেয়ে নেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই ধৈর্য ধরতে হয়।
আল্লাহ তাআলার তার বান্দার উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত জিনিস দান করেন। আমল ও দোয়ার মাধ্যমেই আল্লাহর নৈকট্য অর্জন সম্ভব হয়। আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন কুরআনে এরশাদ করেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা মু’মিন/গাফির, আয়াত ৬০)।
হজরত নুমান ইবন বাশির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতাআলা অত্যধিক লজ্জাশীল ও দয়ালু। যখন কোনো বান্দা তার কাছে দুই হাত তুলে প্রার্থনা করে, তখন তিনি তাকে শূন্য হাতে বা তাকে নিরাশ করে ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।’
আল্লাহ তাআলার বলেন, নিশ্চয়ই মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে অস্থির করে। যখন তাকে বিপদ স্পর্শ করে, তখন সে হয়ে পড়ে অতিমাত্রায় উৎকণ্ঠিত। (সুরা মাআরিজ : ১৯-২০)।
তাই আল্লাহ রহমত থেকে নিরাশ হওয়া যাবে না। সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে। আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের চাদর সবসময় আমাদের আবৃত করে রাখেন।
বান্দার যে সময় যেটা প্রয়োজন ও কল্যাণকর তখনই আল্লাহ সেটা দান করেন। তবে সেজন্য তার কাছে অবশ্যই চাইতে হবে বেশি বেশি।
আল্লাহ বলেন, যদি তোমাদের ওপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও তার দয়া না থাকত, (তা হলে তোমরা ধ্বংস হয়ে যেতে) আর নিশ্চয়ই আল্লাহ অধিক তওবা গ্রহণকারী ও প্রজ্ঞাময়। (সুরা নুর : ১০)
অভাব থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে চাইতে হবে। আর আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রার্থনা ফিরিয়ে দেন না।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনু বুরাইদাহ আল আসলামি (রা.) তার বাবা থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এক ব্যক্তিকে তার দোয়া এভাবে বলতে শোনেন- اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنِّي أَشْهَدُ أَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ الأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিআন্নি আশহাদু আন্নাকা আংতাল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা আংতাল আহাদুস সামাদুল্লাজি লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ ওয়া লাম ইকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ।
অর্থ : হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি আর সাক্ষ্য দিচ্ছি, তুমিই একমাত্র আল্লাহ, তুমি ছাড়া অন্যকোনো মাবুদ নেই, তুমি একক সত্তা, স্বয়ংসম্পূর্ণ, যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাকেও কেউ জন্ম দেয়নি, আর তার সমকক্ষ কেউ নেই। বর্ণনাকারী বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) (ওই ব্যক্তির মুখে এ বাক্যগুলো শোনে) তখন বললেন, সেই মহান সত্তার শপথ! যার হাতে আমার জীবন!
নিঃসন্দেহে এ লোক আল্লাহ তাআলার মহান নামের (ইসমে আজম) অসিলায় তার কাছে প্রার্থনা করেছে; যে নামের অসিলায় দোয়া করা হলে তিনি কবুল করেন এবং যে নামের অসিলায় প্রার্থনা করা হলে তিনি দান করেন। (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ) একবার হজরত আনাস (রা.) রাসুল (সা.) -এর সঙ্গে বসা ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে নামাজ আদায় করল। নিচের এ দোয়াটি পাঠ করল- اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَكَ الْحَمْدَ لَا إِلَهَ إِلَا أَنْتَ الْمَنَّانُ بَدِيعُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالإِكْرَامِ يَا حَىُّ يَا قَيُّومُ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিআন্না লাকাল হামদু, লা-ইলাহা ইল্লা আংতাল মান্নান, বাদিউস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্, ইয়া জালজালালি ওয়াল ইকরাম, ইয়া হাইয়ু ইয়া ক্বাইয়্যুম।
অর্থ : হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করি। তুমিই তো সব প্রশংসার মালিক, তুমি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তুমি দয়াশীল। তুমিই আকাশসমূহ ও পৃথিবীর একমাত্র সৃষ্টিকর্তা! হে মহান সম্রাট ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী, হে চিরঞ্জীব, হে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তখন নবীজি (সা.) বললেন, এ ব্যক্তি ‘ইসমে আজম’ পড়ে দোয়া করেছে, (‘ইসমে আজম’ মহান আল্লাহর এমন নাম) যে নামে ডাকলে মহান আল্লাহ সাড়া দেন। যে নামে তার কাছে চাওয়া হলে তিনি সব চাওয়া পূরণ করেন। (আবু দাউদ) এই দোয়াটি হলো ‘ইসমে আজম’। এটি পড়ে দোয়া করলে মনের কল্যাণকর দোয়া আল্লাহ কবুল করবেন। বান্দাদের দোয়া আল্লাহ কখনই ফিরিয়ে দেন না। দোয়া কবুলের অবস্থা ৩টি। দোয়া কখনও বৃথা যায় না। তিন পদ্ধতিতে আল্লাহতাআলা দোয়া কবুল করেন। যখন কোনো মুমিন ব্যক্তির দোয়ায় কোনো পাপ থাকে না, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয় থাকে না, তাহলে আল্লাহ তিন পদ্ধতির কোনো এক পদ্ধতিতে দোয়া কবুল করেন। পদ্ধতি তিনটি হলো-
এক. সে যে দোয়া করেছে, হুবহু তা কবুল করে দুনিয়াতে দেওয়া হয়।
দুই. তার দোয়ার প্রতিদান পরকালের জন্য সংরক্ষণ করা হয়।
তিন. দোয়ার মাধ্যমে তার অনুরূপ কোনো অমঙ্গলকে তার থেকে দূরে রাখা হয়। (মুসনাদে আহমদ : ১১,১৩৩)