চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর ইউনিয়নের সিপাহি পাড়ার ৬৫ বছর বয়সী আব্দুল হাকিম। পেশায় কৃষক। ৩ ছেলে ১ মেয়ের মধ্যে বড় দুই ছেলে বিএ-অনার্স পাস করেও দেশে ভালো কোনো চাকরি পাচ্ছিল না। বেকার থেকে এলাকার বিভিন্ন বাজে ছেলেদের সঙ্গে মেলামেশা শুরু করে। আব্দুল হাকিমের মনে তখন ভয় ধরে যায়। অবশেষে কোনো উপায় না পেয়ে জমি বিক্রি করে দুই ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়।
ছোট ছেলে মোহাম্মদ জোবায়ের এক বছর আগে এসএসসি পাস করলে তার বাবা তাকে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করান নাই। কারণ তিনি ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন। তার মনে সংশয় লেগেছিল যে লেখাপড়া শেষ করেও চাকরি হবে না।
অবশেষে তিনি আশার আলো দেখতে পেলেন। তার ছেলেকে আধুনগর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। শুধু আব্দুল হাকিম নন দক্ষিণ চট্টগ্রামের হাজারো অভিভাবকের মাঝে স্বস্তি এনেছে আধুনগর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।
গত বছর আধুনগর হাইস্কুলের পাশে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ তলা ভবন নির্মাণ করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আধুনগর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। এ ছাড়াও বিভিন্ন বিভাগের জন্য যন্ত্রপাতি কিনতে খরচ হয়েছে ২ কোটি টাকা। দেশের অন্যতম শিল্পপ্রতিষ্ঠান নোমান গ্রুপ নিজ অর্থায়নে প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করেছেন। প্রতিষ্ঠানে ৪ বছর মেয়াদি ইলেকট্রিকেল, ইলেকট্রনিক্স, সিভিল ও কম্পিউটার সায়েন্স ৪ বিভাগের ক্লাস রয়েছে। এখান থেকে পাস করতে পারলেই চাকরি মিলবে দেশের বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে।
বিশেষ করে এই কলেজ থেকে পাস করতে পারলে নোমান গ্রুপের অর্ধশত গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ওই শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমার এলাকায় বর্তমানে লাখো তরুণ সাধারণ বিষয় নিয়ে লেখাপড়া শেষ করে চাকরি পাচ্ছে না। বেকার হয়ে থাকছে। তাই আমি তাদের কথা চিন্তা করে এই প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছি।
তিনি আরও বলেন, আমার গার্মেন্টসে অনেকেই দেশের বিভিন্ন টেকনিক্যাল কলেজ থেকে পাস করা ছেলে দেড়-দুই লাখ টাকা বেতনে চাকরি করছে। আমি চাই, আমার এলাকার সন্তানরা টেকনিক্যাল কলেজ থেকে পাস করে আমার প্রতিষ্ঠানে বা দেশের ভালো ভালো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে প্রতিষ্ঠিত হোক।
এ ছাড়াও এই প্রতিষ্ঠান থেকে পাস চাইলে সহজেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও অনায়াসে চাকরি করতে পারবে। আলহাজ নুরুল ইসলামের এমন আশার বাণী শুনে আশান্বিত হয়ে আব্দুল হাকিম তার ছোট সন্তান মোহাম্মদ জোবায়েরকে এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করিয়ে দেন।
তিনি বলেন, আমি ভেবেছিলাম লেখাপড়া করে যেহেতু কোনো চাকরি হয় না, তাই তাকে আর লেখাপড়া করাব না। কিন্তু নুরুল ইসলামের প্রতিষ্ঠান দেখে এবং তার কথা শুনে আমি আমার সন্তানকে তার প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে দিয়েছি। আব্দুল হাকিমের সন্তান কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তি হয়েছে। সে এবং তার সহপাঠীরা বলে আমরা এমন একটি কর্মমুখী প্রতিষ্ঠান পেয়ে খুবই আনন্দিত।
শুধু আব্দুল হাকিম নন, লোহাগাড়াসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিভাবকগণ তাদের সন্তানদের এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করিয়ে দিচ্ছেন। যেকোনো সালের এসএসসি বা সমমনা সনদ নিয়ে বা অনার্স পড়ুয়া ১ম, ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীরাও কলেজে ভর্তি হতে পারবেন বলে জানিয়েছেন স্কুলশিক্ষক মোহাম্মদ নুরুল আমিন।
নুরুল আমিন বলেন, বর্তমানে অনার্স শিক্ষার্থীরাই আমাদের কলেজে বেশি ভর্তি হতে আসছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামে এটিই একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেখান থেকে পাস করে কাউকে বেকার থাকতে হবে না- এমন নিশ্চয়তা রয়েছে।
আলহাজ নুরুল ইসলামের মেয়ে সাদ গ্রুপের কর্ণধার নুরে ইয়াছমিন ফাতিমা বলেন, আমরা আমাদের বাবার প্রতিষ্ঠানকে সারা দেশের জন্য একটা মডেল হিসেবে দেখাতে চাই। এ জন্য আমরা সর্বোচ্চ ত্যাগ করব। তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানে এখনো অনেক কাজ বাকি রয়েছে। এগুলো শেষ করতে আরও ২ কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে।
দেশের তরুণ যুবকদের কল্যাণের জন্য যে কেউ চাইলে এই প্রতিষ্ঠানে সহায়তা করতে পারবেন বলে তিনি জানান।