স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আমজাদ হোসেন । চাকরি শুরু করেন ২০০৩ সালে, স্থানীয় সরকার বিভাগে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক হিসাবে। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি পান ২৩ জুন ২০০৯ সালে।
অভিযোগ রয়েছে চাকরির শুরু থেকেই তিনি রয়ে গেছেন প্রশাসন শাখায়, গড়ে তুলেছেন নিজের মত সিন্ডিকেট। উদ্ধতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে যা ইচ্ছে তাই করে বেড়াতেন আমজাদ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সরকার বিভাগের এক ব্যক্তি বলেন আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন তিনি । তার দুই মেয়ে এক ছেলে রয়েছে ,তাদের নামে ও করেছেন সম্পদের পাহাড়। সম্পদের পাহাড় করেছেন নিজ এলাকায়ও। তার ভয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মচারীরা সবসময় ভীত সন্ত্রস্ত থাকে, এই আমজাদ হোসেনের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কোন কল্যাণ সমিতি গড়ে ওঠেনি, কারণ কল্যাণ সমিতি হলে উনার সিন্ডিকেট ভেঙ্গে যাবে, সব সময় টাকা দিয়ে কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চলেন এই আমজাদ হোসেন।
২০০৯ সালে প্রশাসন শাখায় যোগদানের পর থেকে এখনো পর্যন্ত তিনি গেছেন একই যায়গায়। যদিও একই যায়গায় তিন বছরের বেশি সময় কোন সরকারী কর্মকর্তাকে রাখা হয় না তবে কিভাবে তিনি ১৫ বছর যাবৎ একই যায়গায় রয়েছেন প্রশ্ন সকলের।
স্থানীয় সরকার বিভাগের আরেক ব্যক্তি বলেন ভাওয়াল রিসোর্ট, গাজীপুর, গ্রান্ড সুলতান রিসোর্ট, শ্রীমঙ্গল, রয়েল টিউলিপ, কক্সবাজার এবং সুবর্ণভূমি রিসোর্ট, মুন্সীগঞ্জ এর মত বিলাসবহুল বিনোদনকেন্দ্রে ২/৩ দিনের জন্য সঞ্জীবনী প্রশিক্ষণের আয়েজন করতেন এই আমজাদ হোসেন। সেখানে নিয়ে যাওয়া হতো মন্ত্রণালয়ের অনেক মহিলা সহকর্মীদের । সেখানেই চলতো উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মনোরঞ্জন। সঞ্জীবনীতে কে কে অংশ গ্রহণ করবে তাও নির্ধারণ করতো আমজাদ হোসেন।
প্রকৃতপক্ষে এটি একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি হলে এখানে মূলত বিনোদনের জন্য যাওয়া হতো। অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঞ্জীবনী শেষে সনদ প্রদান এবং পরীক্ষার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ পরবর্তী মূল্যায়নের ব্যবস্থা থাকলেও আমজাদ হোসেন ও তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ছিল এটা ব্যক্তিগত মনোরঞ্জনের সঞ্জীবনী প্রশিক্ষণ।
তিনি জীবনে কখনো প্রশাসন শাখার বাইরে চাকরি করেননি। গত ২০২৩ সালে এলজিইডিতে ২৬০০ কর্মচারী নিয়োগ করা হলে তখন তাকে এলজিইডি'র নিয়োগ সংশ্লিষ্ট শাখা (উন্নয়ন-১) এ পদায়ন করা হয়। সেখানে তিনি এলজিইডি'র নিয়োগ কমিটির সাথে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের লিয়াজো অফিসারর দায়িত্ব পালন করেন। এই নিয়োগে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ঘুষ বানিজ্য হয় মর্মে ০৬/০৯/২০২৩ খ্রি: তারিখে শীর্ষকাগজ নামক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এই ঘুষ বানিজ্যের সাথে প্রশাসনিক কর্মকর্তা আমজাদ হোসেনের নাম আসলে দ্রুত আওয়ামী সরকার আশীর্বাদপুষ্ট কর্মকর্তাদের শরণাপন্ন হন। পরবর্তীতে বিশাল টাকার বিনিময়ে তা সমঝোতা করেন।
সবচেয়ে আশ্চার্যের বিষয় হলো আওয়ামীলীগ আমলের ১৬ বছরে ৩ মাসের ভ্রমণে উন্নয়ন-১ শাখায় ছিলেন। সেখানে তার উপর অর্পিত কর্ম সুচারুরূপে পালন করেই আবার প্রশাসন শাখায় ফিরে এসেছেন যাতে তার সিন্ডিকেট ভেঙ্গে না যায়।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি তার আপন বোনকে লিখিত পরীক্ষায় ফেল করা সত্ত্বেও মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে চাকরী দিয়েছেন।
এমনকি তার অসংখ্য আত্মীয়স্বজনকে এলজিডি ও ডিপিএইচই’ তে চাকরি দিয়েছেন। ভবিষ্যতে তিনি আওয়ামী লীগের নিজ এলাকায় নরসিংদী ৩ এমপি পদপ্রার্থী হবেন বলেও কেউ কেউ বলছেন।
এমনকি স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রশাসন শাখা দখলে রাখার সুবাদে অর্থ বিভাগের একটি প্রকল্পে কর্মরত অফিস সহায়ককে স্থানীয় সরকার বিভাগে কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ দেন এবং পরবর্তীতে তাকে বিয়ে করেন। রেহানা নামীয় তার স্ত্রী এই কম্পিউটার অপারেটর যিনি বর্তমানে তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ।
তিনি আর বলেন একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়েও ২০-২৫ বার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন । অথচ মন্ত্রনালয়ের অনেক এও, পিও পিআরএলে চলে গেছে কিন্তু কোনদিনই বিদেশ যেতে পারেনি।
সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে প্রশাসন শাখা এবং বাজেট শাখা নামে দুটি আলাদা শাখা থাকলেও এ বিভাগের অনেকেই জানেন না যে, দুটি শাখার জন্য আলাদা দুইজন এও এর পদ রয়েছে। অথচ আমজাদ হোসেন একাই দীর্ঘ ১৬ বছর এই দুটি পদ দখল করে চালিয়েছেন। ফলে বিভিন্ন দপ্তর সংস্থা প্রধান ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকগণ বাজেট বরাদ্দ এবং অর্থ ছাড়ের জন্য তার নিকট জিম্মি ছিলো।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলে তার শিষ্যতুল্য অফিস সহায়ক থেকে পদোন্নতি পাওয়া একজনকে পদায়ন করে তিনি নিজেই এখনো পুরো বাজেট দেখাশোনা করছেন। তার অধীনে কর্মরত ছিলো নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন একজন সাবেক স্টেনোকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন যে, স্যার তো কোন কাজই দেয় না। কোন কাজই শেখায় না। আমার চাকরী জীবনের প্রথম ৩/৪ টা বছর আমি প্রশাসনে নষ্ট করলাম কিন্তু, দু/একটা চিঠি টাইপ করা ছাড়া কিছুই শিখতে পারলাম না। এখানে বাজেট, এপিএ, প্রশাসন, বদলী, বিভাগীয় মামলা, জনবল নিয়োগ বিভিন্ন দিবস উদযাপন এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে। তিনি সব নিজের দখলে রাখেন যাতে তাকে কেউ বদলী না করতে পারেন।
অভিযোগের এসকল বিষয় নিয়ে মুঠোফোনে জানতে জাইলে আমজাদ হোসেন জানান, আমার বিরুদ্ধে একটি কুচক্রী মহল অপপ্রচারে নেমেছে । আমি সকল নিয়ম মেনেই কাজ করছি । এছাড়া আর কিছু আমার বলার নেই । তিনি বলেন অভিযোগের পয়েন্টগুলা ঠিক আছে কিন্তু অতিরঞ্জিত করে আমার বিরুদ্ধে বলা হচ্ছে এটা ঠিক না ।