‘আয়নাঘরের চেয়েও ভয়ঙ্কর আটটি গোপন বন্দিশালার সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে বছরের পর বছর গুম হওয়া ব্যক্তিদের রেখে নির্যাতন করা হতো।’
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) রাজধানীর গুলশানে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের কার্যালয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
সন্ধান পাওয়া বন্দিশালার অনেকগুলো আয়নাঘরের চেয়েও ভয়ঙ্কর বলে দাবি করা হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এই আটককেন্দ্রগুলো কাদের দ্বারা পরিচালিত হতো সে সম্পর্কে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।
তবে সন্ধান পাওয়া বন্দিশালাগুলো ঢাকা ও তার আশপাশ এলাকার বলে গুম কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
বিচারপতি মইনুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে রাজনৈতিক কারণেই বেশির ভাগ ব্যক্তিকে গুম করা হয়েছে। তবে রাজনৈতিক কারণ ছাড়া স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অভিযোগের বাইরে অনেককে গুম করা হয়। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ২০০-র বেশি গুম হওয়া মানুষকে এখনো শনাক্ত করা যায়নি।
আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে নেওয়ার কথা থাকলেও মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর রাখা হতো আইনের তোয়াক্কা না করে।’
এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এক হাজার ৬০০টির মতো অভিযোগ পাওয়া গেছে গুমের। এর মধ্যে ৪০০-এর বেশি অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়েছে। এর মধ্যে র্যাবের বিরুদ্ধে ১৭২টি, সিটিসির ৩৭টি, ডিবির ৫৫টি, ডিজিএফআই ২৬টি, পুলিশের ২৫টি এবং অন্যান্যভাবে গুমের ৬৮টি ঘটনা।
এসব ঘটনা তদন্তে গিয়ে এসব বাহিনীর আটটি গোপন বন্দিশালা পেয়েছে কমিশন, যেখানে বছরের পর বছর গুম হওয়া ব্যক্তিদের রেখে নির্যাতন করা হতো।’
গুমের ১৪০ অভিযোগের বিষয়ে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সদস্য নূর খান লিটন বলেছেন, ‘আমরা র্যাব পরিচালিত একটি সেল পেয়েছি, যেটি ছিল মাত্র ৩.৫ বাই ৪ ফুট। সেখানে আলো ঢোকার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। একটি ড্রেন ছাড়া সেখানে কোনো স্যানিটেশনব্যবস্থাও ছিল না।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো প্রমাণ নষ্ট করছে বলে জানিয়েছেন কমিশনের আরেক সদস্য নাবিলা ইদ্রিস। তিনি বলেন, ‘তারা (সংস্থাগুলো) সেল ও দেয়াল ভেঙে ফেলছে। যেসব বাহিনী প্রমাণ নষ্ট করছে তারা আমাদের সহযোগিতা করছে না। এখনকার কর্মকর্তারাও আগের কর্মকর্তাদের অপরাধে জড়িত ছিলেন।’