চার দশকের বেশি সময় ধরে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর এখন ‘গোচারণভূমিতে’ পরিণত হয়েছে। নানা সময়ে জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তারা বিমানবন্দর পরিদর্শন করে চালুর আশ্বাস দিলেও বাস্তবে আলোর মুখ দেখেনি। বরং বিমানবন্দরের জায়গা লিজ নিয়ে লোকজন ফসল আবাদ করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রানওয়ে ও মূল্যবান যন্ত্রপাতি।
এই অবস্থায় স্থানীয়দের দাবি, বিমানবন্দরটি পুনরায় চালু হলে এই অঞ্চলে ভারী শিল্প-কারখানা গড়ে তুলতে আগ্রহী হবেন বিনিয়োগকারীরা। আসবে অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বলেন, ‘কিছুদিন হলো আমি এই জেলায় জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। দায়িত্ব নেওয়ার পর এলাকার মানুষেরা আমাকে জানিয়েছেন পরিত্যক্ত ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটির গুরুত্ব কতটুকু। তারা এটি চালুর দাবি জানিয়েছেন। পরিত্যক্ত ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি চালুর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি জেলা শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে মাদারগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত। সেখানে দেখা যায়, রানওয়ে বাদ দিয়ে বাকি অধিকাংশ জায়গাতেই শাক-সবজির চাষ করা হয়েছে। কোথাও আবার ধান শুকোনোর জন্য চাতালের মতো তৈরি করে রাখা হয়েছে।
বিশাল এলাকার জায়গায় জায়গায় গরু চরছে। রানওয়ে দিয়ে ইটবাহী ট্রাক্টর চলাচল করতেও দেখা গেছে। রানওয়ের স্থানে স্থানে পিচ উঠে গিয়ে পাথর বেরিয়ে গেছে।
তবে কিছুদিন আগে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে বিমানবন্দরের চারদিকে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়। মূলত এই প্রাচীর নির্মাণের পরই মানুষ আশায় বুক বেঁধেছেন যে, বিমানবন্দরটি বোধহয় আবার চালুর উদ্যোগ নেবে কর্তৃপক্ষ।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৪০ সালে ৫৫০ একর জমিতে বিমানবন্দরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। বন্দরটির প্রধান রানওয়ে তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার সরকারি ও সামরিক কাজে ব্যবহার করতে বিমানবন্দরটি প্রতিষ্ঠা করেছিল।
পাকিস্তান সরকার বিমানবন্দরের জমি আর্মি স্টেট হিসেবে ঘোষণা দিলে ১১১ একর জমি পায় সিভিল অ্যাভিয়েশন। ওই অংশে পরে ভবন ও রানওয়ে করা হয়। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় ভারতীয় বিমান বাহিনীর হামলায় বিমানবন্দরের রানওয়েটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৭ সালে বিমানবন্দরটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য সংস্কার করা হয়। মাত্র বছর দুয়েক বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালিত হলেও আগ্রহের অভাব এবং যাত্রী সংখ্যা কমে যাওয়ায় কার্যক্রম থেমে যায়। এরপর ১৯৮০ সালে ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। তখন থেকে পরিত্যক্ত ও উন্মুক্ত অবস্থায় পরে আছে বিমানবন্দরটি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ঠাকুরগাঁও জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, ‘জেলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সঙ্গে বিমানবন্দরটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই আমাদের দাবি, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে বিমানবন্দরটি চালু করা হোক।’