ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ইসরায়েলে আবারও প্রতিশোধমূলক হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ দাবি করা হয়েছে।
তিন ইরানি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, সোমবার (২৮ অক্টোবর) সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সঙ্গে বৈঠকে বসেন আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। ওই বৈঠকে ইসরায়েলের হামলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তাকে জানানো হয়। খামেনি ক্ষয়ক্ষতির ধরন বিশ্লেষণ করেন। বিশেষ করে তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জুড়ে হামলায় তিনি ক্ষিপ্ত হন। পরে বৈঠকে তিনি সিদ্ধান্ত দেন, ইসরায়েলের হামলা উপেক্ষা করা উচিত হবে না।
খামেনি সামরিক বাহিনীর জেনারেলদের বলেন, আমাদের চার সেনাকেও তারা হত্যা করেছে। যদি আমরা জবাব না দেই তবে এর মানে দাঁড়াবে, ইসরায়েলের কাছে পরাজয় স্বীকার করেছি। অতএব, আবার হামলা হবে। এর জন্য সামরিক বাহনীকে প্রস্তুত রাখবেন।
পাল্টা আক্রমণের বিষয়ে ইরানের বিপ্লবী গার্ড কর্পসের ডেপুটি কমান্ডার জেনারেল আলি ফাদাভি বলেন, ইহুদিবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইরানের প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত। ৪০ বছরে আমরা কখনোই কোনো আগ্রাসনকে জবাবদিহির ঊর্ধ্বে রাখিনি। আমরা একটি অভিযানের মাধ্যমে ইহুদিবাদীদের যা আছে সব ধ্বংস করতে সক্ষম।
তবে ঠিক কখন ইরান হামলা চালাবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকছেই। একটি সূত্র বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কী ঘটে তা দেখতে অপেক্ষা করবে তেহরান। এর মানে ৫ নভেম্বরের আগে হামলার সম্ভাবনা নেই। অপর সূত্র বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে বলেছে, ইরান উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষা করছে। এ ক্ষেত্রে মার্কিন নির্বাচন বাধা নাও হতে পারে। যেকোনো সময় ইসরায়েলের ভূখণ্ডের দিকে ইরানি মিসাইল ছুটে যেতে পারে।
গত ১ অক্টোবর ইরান ইসরায়েলে প্রায় ২০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে। অত্যাধুনিক এসব ক্ষেপণাস্ত্রের বেশিরভাগ আঘাত হানার দাবি তেহরানের। এরপর চাপা উত্তেজনার রেশ কাটে ২৫ অক্টোবর। ইসরায়েল আচমকা বিমান ও ড্রোন হামলা চালিয়ে ইরানকে ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলে। তবে আশঙ্কার চেয়ে খুব অল্প সময় আক্রমণ অব্যাহত রাখে ইসরায়েল। ইরানের ইলাম, খোজেস্তান ও তেহরানে কিছু সামরিক স্থাপনায় হামলার পরই অভিযান শেষ হওয়ার ঘোষণা দেয় তারা।
তখন দাবি করা হয়, ইরানকে আগেই হামলার তথ্য জানিয়েছিল ইসরায়েল। তবু আক্রমণ ঠেকাতে ব্যর্থ হয় খামেনির বাহিনী। অবশ্য প্রথমে ইসরায়েলের হামলায় তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি দাবি করেছিল ইরান। কিন্তু প্রাথমিক এ বিবৃতি বেশিক্ষণ জারি রাখতে পারেনি তারা। সময়ের ব্যবধানে একের পর এক সেনা নিহতের খবর আসতে থাকে। সেই সংখ্যা দাঁড়ায় চারজনে।
আক্রমণ শেষে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সিনিয়র মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, ‘ইরানে ইসরায়েলের হামলা শেষ হয়েছে, আর হামলা চালাবে না ইসরায়েল। ইরান চলতি মাসের শুরুতে তেলআবিবে যে হামলা চালিয়েছিল তার জবাবে ইসরায়েলি প্রতিক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়েছে।’ এরপর দুই দেশের সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কায় ভাটা দেখতে পাচ্ছিলেন বিশ্লেষকরা। কিন্তু খামেনির নতুন নির্দেশে পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রকট।