মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার খাস্তগীরকে প্রত্যাহারের দাবি এবং ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে প্রবাসী অধিকার পরিষদ।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় কুয়ালালামপুরের বুকিত বিনতাংয়ের এক রেষ্টুরেন্টে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
তারা বলেন, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের একদিনের নোটিশে এমআরপি পাসপোর্টের পরিবর্তে ই-পাসপোর্ট গ্রহণে বাধ্যতামূলক করা এবং মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বন্ধ ঘোষণা করায় ফুঁসে উঠেছে মালয়েশিয়ার প্রবাসী বাংলাদেশিরা। প্রবাসীদের বিপদে ফেলে এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ কাদের সুবিধার্থে, সেই প্রশ্ন রাখতে চাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে।
এ সময় রেমিট্যান্স শাটডাউনের হুমকিও দেন প্রবাসীরা।
নেতারা আরও উল্লেখ করেন, বেআইনিভাবে বিনা টেন্ডারে মালয়েশিয়ার থার্ড পার্টি অফিস ইএসকেএল এবং হাইকমিশনের কিছু কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে এমন জটিলতা তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। যার ফলশ্রুতিতে সাধারণ প্রবাসীদের ক্ষেপিয়ে তুলছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে খাদের কিনারায় নিয়ে যাচ্ছেন দেশে-বিদেশে দায়িত্বে থাকা কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। আর বেশিদিন নেই প্রবাসীরাও এই সরকারের সমালোচনা শুরু করবে। যার অন্যতম কারণ এমআরপি পাসপোর্ট বন্ধ, জোরপূর্বক ই-পাসপোর্ট গ্রহণে বাধ্য করা এবং কৌশলে এমআরপি পাসপোর্ট ছাপা বন্ধ রাখা। এটি হতে পারে প্রবাসীদের খেপানোর কৌশল।
তারা আরও বলেন, সঠিক সময়ে পাসপোর্ট না পেয়ে মালয়েশিয়ার বহু প্রবাসী অবৈধ হওয়ার পথে। যারা প্রথম ই-পাসপোর্ট বানাবে তাদের জন্য ই-পাসপোর্ট ঠিক আছে। কিন্তু প্রবাসীদের জন্য কৌশলে এমআরপি শর্টেজ দেখিয়ে ই-পাসপোর্ট বাধ্যতামূলক করা প্রবাসী ও রেমিট্যান্স উভয়ের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে
মালয়েশিয়ায় পাসপোর্টের জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে উল্লেখ করে তারা বলেন, অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি আছেন যাদের এনআইডি বা জন্মনিবন্ধনের সঙ্গে এমআরপি পাসপোর্টের তথ্য মিল নেই। কারও বয়সের সঙ্গে বা নামের সঙ্গে নানাবিধ সমস্যা আছে তাহলে তাদের কী হবে! সুতরাং এই সরকারকে সফল হতে হলে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরসহ ওই সব সচিবদেরকে দ্রুত পরিবর্তন করতে হবে।
লিখিত বক্তব্যে বক্তারা বলেন, মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার খোরশেদ আলম খাস্তগীরের পোল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ বাতিল হলেও তিনি এবং তার সহযোগীরা এখনও বহাল তবিয়তে আছেন হাইকমিশনে। তাকে দ্রুত বাংলাদেশে ফেরত নিয়ে আইনের আওতায় আনার জোড় দাবি জানাচ্ছি। তারা দীর্ঘদিন ধরে হাইকমিশনের পাসপোর্ট ও ভিসা উইংকে একটি অকার্যকর ও অপ্রয়োজনীয় উইং প্রমাণ করে মিশন থেকে পাসপোর্ট ও ভিসা উইংয়ের যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ করে পাসপোর্ট ও ভিসা সার্ভিস ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের আউট সোর্সিং প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।
তারা আরও অভিযোগ করেন, খাস্তগীর সাবেক ফ্যাসিস্ট সরকারের ঘনিষ্ঠ যে কিনা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারকে খুশি করতে কাজাং থানায় মামলা করেন এবং আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতদের পাসপোর্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলেন।
দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে উল্লেখ করে তারা বলেন, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত লাখ লাখ প্রবাসীকে অবৈধ বানিয়ে ফেলবে এবং অবৈধ হয়ে গেলে দেশে রেমিটেন্সের ওপর বিরাট অংশে প্রভাব পড়বে।
বক্তারা বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় অন্যান্য দেশের মতো মালয়েশিয়ায়ও প্রবাসীরা রেমিট্যান্স শাটডাউনের ঘোষণা করে তা বন্ধ রেখেছিল। ডিআইপির এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত বাতিল না হলে আবারও মালয়েশিয়ার প্রবাসীরা রেমিটেন্স শাটডাউনের মতো সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হবে না।
একই সঙ্গে দ্রুত ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী অধিকার পরিষদের সভাপতি শাহাজান মিথুন, মো. জাহিদ হাসান, সহ-সভাপতি ফয়সাল শেখ, সহ-সভাপতি আমির হোসেন, সহ-সভাপতি মবিন, সাধারণ সম্পাদক এইচএম হাসান, অর্থ সম্পাদক শিমুল শেখ প্রমুখ।