ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহর প্রধান সাইয়েদ হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার পর দীর্ঘদিন গোষ্ঠীটির কোনো শীর্ষ নেতা ছিলেন না। অবশেষে লেবাননের সশস্ত্র এই গোষ্ঠীটি শেখ নাঈম কাসেমকে তাদের প্রধান হিসেবে ঘোষণা করেছে। তিনি এতদিন ইরান সমর্থিত ওই গোষ্ঠীর উপমহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
গতকাল মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) হিজবুল্লাহর নতুন প্রধানের নাম ঘোষণা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইহুদিবাদী ইসরায়েল। নাইম কাশেমের মেয়াদ হবে ‘সাময়িক’, তিনি বেশি দিন টিকবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসরাইল।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে এই প্রতিক্রিয়া জানান। ইয়োভ গ্যালান্ট লিখেছেন- ‘সাময়িক নিয়োগ, দীর্ঘদিনের জন্য নয়।’ মূলত এই প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে ‘হুমকি’ দিলেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
অন্যদিকে এক্সে ইসরাইল সরকারের দাপ্তরিক আরবি ভাষার অ্যাকাউন্টে দেওয়া পোস্টে বলা হয়, তিনি (নাইম) যদি তার পূর্বসূরি হাসান নাসরুল্লাহ ও হাশেম সাফিউদ্দিনের পদাঙ্ক অনুসরণ করেন, তাহলে এই অবস্থানে (হিজবুল্লাহপ্রধান) তার মেয়াদ সংগঠনটির ইতিহাসে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত হতে পারে।
একই পোস্টে সতর্ক করে আরও বলা হয়েছে, লেবাননে হিজবুল্লাহর সামরিক সক্ষমতাকে ধ্বংস করা ছাড়া আর কোনো সমাধান নেই।
নাঈম কাসেম
১৯৯১ সালে নাঈম কাসেমকে উপপ্রধান হিসেবে নিযুক্ত করেন হিজবুল্লাহর তৎকালীন প্রধান আব্বাস আল-মুসাওয়ি। এর পরের বছর ইসরায়েলের হেলিকপ্টার হামলায় প্রাণ হারান আব্বাস।
তার মৃত্যুর পর হাসান নাসরুল্লাহ হিজবুল্লাহর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর নাঈম কাসেম উপপ্রধানের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। তিনি গত এক বছর ধরে হিজবুল্লাহর অন্যতম মুখপাত্র হিসেবেও কাজ করে যাচ্ছেন। বিদেশি সংবাদমাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় তিনিই কথা বলেন। বিগত ৩০ বছর ধরে হিজবুল্লাহর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করা নাঈম কাসেমকে মঙ্গলবার গোষ্ঠীটির নতুন প্রধান হিসেবে ঘোষণা করেছে হিজবুল্লাহ।
নাঈম কাসেম ১৯৫৩ সালে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন শিয়াদের আমল আন্দোলনের মাধ্যমে। ১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের পর তিনি আমল আন্দোলন থেকে সরে আসেন।
১৯৮২ সালে ইসরায়েল লেবাননে হামলা চালানোর পর ইরানের বিপ্লবী গার্ডের সহায়তায় তৈরি হয় হিজবুল্লাহ। যেসব বৈঠকের মাধ্যমে হিজবুল্লাহর জন্ম হয়েছিল সেগুলোতে উপস্থিত ছিলেন নাঈম কাসেম।
১৯৯২ সালে লেবাননে প্রথমবার সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় হিজবুল্লাহ। ওই সময় থেকেই দলটির নির্বাচনী সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন নাঈম কাসেম।
তিনি ২০০৫ সালে হিজবুল্লাহর ইতিহাস নিয়ে একটি বই লেখেন। যার মাধ্যমে গোষ্ঠীটির অনেক বিরল ও অজানা তথ্য জানা যায়। নাঈম কাসেম মাথায় সাদা পাগড়ি পরেন। অপরদিকে সাবেক প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ কালো পাগড়ি পরতেন।