বাংলাদেশ সফররত জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিশনের প্রধান ফলকার টুর্ক বলেছেন, বাংলাদেশে গত জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার বিষয়টি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে জাতিসংঘ।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গণহত্যায় জড়িতদের স্বচ্ছ বিচারের বিষয়ে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে বলেও জানান তিনি।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সচিবালয়ে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ফলকার টুর্ক।
ফলকার টুর্ক বলেন, ‘আইন উপদেষ্টার সঙ্গে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে কথা বলেছি। এ দুটি বিষয় একে অপরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বর্তমান সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সংস্কার উদ্যোগ নিয়েছে, সেক্ষেত্রে মানবাধিকার যেন নিশ্চিত হয়, সেটা বলেছি। জুলাই গণহত্যার বিষয়ে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি কাজ করছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি। আমাদের সদর দপ্তর পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে।’
দুই দিনের সরকারি সফরে সোমবার দিনগত রাতে ঢাকা এসেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক। এ সফরে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি, সেনাপ্রধান এবং বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের প্রধানদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন।
টুর্ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য দেবেন এবং সেখানে তিনি সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করবেন। তিনি জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং বাংলাদেশে কূটনৈতিক মিশনের সদস্যদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন।
ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের পট পরিবর্তনের পর জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধানের এই সফরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সফরে মানবাধিকার, নিরাপত্তা এবং নির্বাচন ইস্যু গুরুত্ব পাবে। মানবাধিকার ইস্যুর মধ্যে জাতিসংঘ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের তদন্ত রয়েছে। নিরাপত্তা এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া সংস্কারে জাতিসংঘের কাছে সহযোগিতা চায় অন্তর্বর্তী সরকার। জাতিসংঘও সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। কিন্তু কোন ফরমেটে কীভাবে সহযোগিতা হতে পারে, তা টুর্কের ঢাকা সফরের আলোচনার টেবিলে উপস্থাপন করার কথা রয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্র আরও জানায়, মানবাধিকার, নিরাপত্তা এবং নির্বাচন ইস্যুতে ঢাকা জাতিসংঘের কাছে নগদ সহায়তা চায়। সেক্ষেত্রে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা চায় যে এই নগদ সহায়তা কোন কোন খাতে এবং কীভাবে খরচ করা হবে, সে বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট সুপারিশমালা। শুধু তাই নয়, সেই সুপারিশমালা নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের ঐকমত্য থাকতে হবে।
হাইকমিশনার টুর্ক তার সফর শেষে আগামীকাল বুধবার বিকেলে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করবেন।
এছাড়াও টুর্ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ভাষণ দেবেন, যেখানে তিনি সাম্প্রতিক প্রতিবাদ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করবেন। তিনি জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং বাংলাদেশে কূটনৈতিক মিশনের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির কার্যালয়ের তথ্য বলছে, আগামী নভেম্বরের শেষ সপ্তাহের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশের আগে অন্তর্বর্তী সরকারকে দেওয়া হবে। টুর্কের সফরে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের তদন্ত প্রতিবেদনের অগ্রগতি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হবে।