প্রকাশ: রোববার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৪, ১২:০২ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি ও ফাইল আটকে রাখার অভিযোগে জর্জরিত ছিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। ফাইল জটিলতা, কাজে বিলম্ব এবং অবৈধ অর্থ আদায়ের নীতিতে রাজউকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা পুরো সংস্থাটিকে একটি ‘দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল।
এক সময় এখানে ফাইলের গতি নির্ভর করত ঘুষের ওপর। কাজের অগ্রগতি কেবল টাকার পরিমাণ অনুযায়ী ঠিক হতো, আর জনগণের ভোগান্তি বাড়তে থাকত। তবে বর্তমান চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সিদ্দিকুর রহমান দায়িত্ব নেওয়ার পর এই সংস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার শুরু হয়েছে।
সেনাবাহিনীর সাবেক এই কর্মকর্তা দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে রাজউকের অভ্যন্তরে এক আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তার হাত ধরে আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা ও ফাইল আটকে রাখার প্রথা প্রায় বিলুপ্ত হয়েছে। নিয়ম-নীতি মেনে কাজ হচ্ছে এবং ঘুষের বিষয়টিকে কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
তিনি প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে কাগজপত্র ডিজিটালাইজেশন এবং তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের ওপর জোর দিয়েছেন, যাতে কাজের গতি বাড়ে এবং অনিয়মের সুযোগ কমে।
নতুন চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেওয়ার পর রাজউককে দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তার অধীনে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়ম অনুসারে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। রাজউকের ভেতরে একটি শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ নজরদারি ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগও নেয়া হয়েছে, যা নিশ্চিত করে যেন কোনো দুর্নীতি বা অবৈধ লেনদেনের সুযোগ না থাকে।
আগে যেখানে একটি কাজ সম্পন্ন করতে কয়েক মাস লেগে যেত, এখন তা নিয়ম অনুযায়ী কয়েকদিনের মধ্যে শেষ হচ্ছে। এমনকি তিনি সরাসরি জনগণের সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসছেন এবং জনগণের অভিজ্ঞতা উন্নত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এতদিনের গেঁড়ে বসা দুর্নীতির সংস্কৃতিকে ভেঙে ফেলা সহজ কাজ নয়। যদিও সিদ্দিকুর রহমান যথেষ্ট উদ্যোগ নিয়েছেন, তবে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। রাজউকের প্রতিটি স্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে এই সংস্কার কার্যক্রম দীর্ঘমেয়াদে বজায় রাখতে হবে। চেয়ারম্যানের কঠোর পদক্ষেপের ফলে কিছু অসাধু কর্মচারী হয়তো সরে গেছেন বা চাকরি হারানোর ভয়ে সতর্ক হয়েছেন, তবে তাদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত নজরদারি অব্যাহত রাখা জরুরি।
ভুক্তভোগীরা মনে করেন সিদ্দিকুর রহমান চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণের পর তার নেতৃত্বে রাজউক ধীরে ধীরে একটি দুর্নীতিমুক্ত ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে রূপ নিচ্ছে। তার উদ্যোগে শুধু ফাইল আটকে রাখা এবং অর্থ আদায় বন্ধ হয়নি বরং সংস্থাটি সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে শুরু করেছে।
এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে এবং আধুনিকায়নের মাধ্যমে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে রাজউক রাজধানী উন্নয়নের কাজে সঠিকভাবে অবদান রাখতে পারবে এবং জনগণের সেবায় সত্যিকার অর্থেই একটি পেশাদার প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।