প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪, ১২:০৫ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ)’র কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা নকশার অনুমোদন দিয়েছে নির্মাণ বিধিমালা না মেনেই। আর্থিকভাবে প্রচুর লাভবান হয়েছেন অনেক কর্তা। আবারও সেই অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে নগরের জামালখান ওয়ার্ডের চেরাগী পাহাড় মোড়ের সু-উচ্চ দালান নিয়ে। নগরের প্রাণকেন্দ্রে এমন ভয়াবহ নির্মাণ নিয়ে জনমনে শঙ্কা।
সিডিএর নকশা অনুমোদন না নিয়েই এস আলম গ্রুপ নগরের চেরাগী পাহাড় মোড়ে নির্মাণ করেছে ২২ তলাবিশিষ্ট বাণিজ্যিক ভবন। নির্মাণ কাজও শেষের দিকে। তবে কিভাবে সবার চোখের সামনেই অপরিকল্পিত ভাবে এত বড় দালান তৈরি হলো। ভবন থেকে সিডিএর দূরত্ব মাত্র ১ কি.মি.।
তাই বলা চলে সিডিএর নাকের ডগায় এস আলমের এমন আয়োজন চোখে পড়ার মতো। তবে সরকার পতনের পর স্বপরিবারে পালিয়ে যান এস আলম পরিবার এর পর থেকে বন্দ নির্মাণ কাজ। চলে গেছে কন্সট্রাকশন কোম্পানি।
জানা যায়, নগরের চেরাগী পাহাড় মোড়ে এস আলম গ্রুপ কোনো নকশা অনুমোদন ছাড়াই ২২ তলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করেছে। নির্মাণকাজ শেষও করেছে। পরবর্তীকালে সিডিএর নগর উন্নয়ন কমিটি ও বিশেষ প্রকল্প অনুমোদন কমিটি নকশা অনুমোদনের জন্য কিছু শর্ত প্রদান করে। কমিটি সিডিএর অথরাইজড অফিসারকে আরোপিত শর্ত মানা হচ্ছে কি না তদারকির দায়িত্ব প্রদান করে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন এখনো পর্যন্ত শর্ত পূরণ নিয়ে এস আলম গ্রুপের কোনো কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস বলেন, ‘এস আলম গ্রুপ নকশা অনুমোদন ছাড়াই বিল্ডিং নির্মাণ করেছে। পরবর্তীকালে নগর উন্নয়ন কমিটি ও বিশেষ প্রকল্প কমিটি নকশা অনুমোদনের জন্য ১৫-২০টি শর্ত আরোপ করেছে। শর্ত পূরণ করতে না পারায় তারা নকশা অনুমোদনের জন্য আবেদন করেনি। এখন বিল্ডিংটির নকশাবহির্ভূত অংশ ভাঙা হবে নাকি পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হবে তা বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে।’
এদিকে সিডিএ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিগত ১৫ বছরে নকশা অনুমোদন নিয়ে হয়েছে নানা অনিয়ম। ক্ষমতাসীন প্রভাবশালীদের প্রভাবের কারণেই মূলত নকশা অনুমোদনে অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। নির্মাণ বিধিমালা উপেক্ষা করে নকশা অনুমোদন নিয়ে স্থাপনা নির্মাণ করতে গিয়ে আশপাশের বাসিন্দাদের সাথে বিরোধে জড়িয়েছে অনেকেই। এতে ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করলে সিডিএ নোটিশ জারি করে স্থাপনা বন্ধের নির্দেশ দেয়। পরবর্তীকালে সংশ্লিষ্ট ভবন মালিক উচ্চ আদালতে সিডিএর নোটিশের বিরুদ্ধে রিট করেন। আদালত সিডিএর নোটিশের ওপর স্থগিতাদেশ প্রদান করে। এতে এসব মামলা সিডিএকে বছরের পর বছর পরিচালনা করতে হচ্ছে। মামলার পেছনে ব্যয় হচ্ছে প্রচুর অর্থ।
আরও জানা যায়, নগরের আশকার দীঘিপাড় এলাকায় সজল চৌধুরী গং অনুমোদন নেয় ১৭ তলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণের । ভবনটি পাহাড়ের অংশ বিশেষ কেটে নির্মাণ করতে হচ্ছে। বিল্ডিংয়ের পেছনে লাগোয়া ৫০ ফুট উচ্চতার পাহাড় রয়েছে। কিন্তু সিডিএ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জেনেশুনেই অনুমোদন করেন পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণের নকশা। বিষয়টি নিয়ে পরিবেশবাদী সংগঠন বেলাসহ অন্যরা প্রতিবাদ করলে সিডিএ সংশ্লিষ্ট ভবন মালিককে নোটিশ প্রদান করে। নোটিশ পাওয়ার পর ভবন মালিক উচ্চ আদালতে রিট করেন। আদালত সিডিএর নোটিশের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেন।
এছাড়া নগরের হেমসেম লাইন এলাকায় ১০ তলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণের নকশা অনুমোদন দেন গোফি ধর গংকে। নকশা অনুমোদনের সময় ৫ ফুটের রাস্তাকে দেখানো হয়েছে ১২ ফুট। এতে নির্মাণকাজ শুরু করতে গেলে পাশের বাসিন্দা সিডিএতে অভিযোগ করেন। পরবর্তীকালে একই নিয়মে সিডিএ নোটিশ দিয়ে এড়াতে চায়। কিন্তু ভবন মালিক উচ্চ আদালতে রিট করলে স্থগিতাদেশ জারি করা হয়।
সিডিএ কর্মকর্তারা জানান, নকশা অনুমোদন নিয়ে বিগত সময়ে এ ধরনের অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। বিগত সময়ে দুর্নীতি নিয়ে অনেক কর্মকর্তা মামলার আসামি হয়েছে। দুদকে মামলা হয়েছে। তারপরও অভিযুক্তরা এখনো সিডিএতে বহাল রয়েছেন।