বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পদত্যাগ করা সমন্বয়কদের নেতৃত্বে “সম্মিলিত গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন” নামে নতুন একটি প্ল্যাটফর্ম গঠিত হয়েছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে রক্ষা ও প্রতিষ্ঠা করা, গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে সমুন্নত রাখা, গণহত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিতকরণ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে এই প্ল্যাটফর্ম গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
সোমবার (২১ অক্টোবর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের কনফারেন্স কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন প্ল্যাটফর্মের ঘোষণা দেওয়া হয়।
“সম্মিলিত গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন” এর আহ্বায়ক হিসেবে জাবির তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ জিতুর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। সদস্যসচিব পদে রয়েছেন সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহমিদা ফাইজা, যুগ্ম আহ্বায়ক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী রুদ্র মোহাম্মদ সফিউল্লাহ। এছাড়া প্ল্যাটফর্মের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করবেন মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান শাহরিয়ার।
সংবাদ সম্মেলনে প্ল্যাটফর্মের মুখপাত্র ইমরান শাহরিয়ার লিখিত বিবৃতি পাঠ করেন। এ সময় তিনি বলেন, “একটি রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমাদের কাঙ্ক্ষিত দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পুরো জাতির বুকে একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন জাগ্রত হয়েছে। যেখানে কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তি, বৈষম্য ও নিপীড়ন থাকবে না। থাকবে ন্যায় বিচারের নিশ্চয়তা, জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হবে নিরাপদ ও উচ্চ শিক্ষার জন্য যথোপযুক্ত।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে দেখতে পাচ্ছি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণঅভ্যুত্থানের চেতনা লালন করতে পারছে না। এ সংকট সরকারের আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উভয় অংশীজন কর্তৃক সৃষ্ট। ফ্যাসিবাদের দোসররা ভেতরে ও বাইরে থেকে সরকারকে এই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে সমুন্নত করতে বাধা প্রদান করছে। পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের নিজেরও সদিচ্ছার অভাব ও গাফলতি এ সংকট আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে ফ্যাসিবাদী শক্তি পুনর্বাসিত হচ্ছে। নতুন বাংলাদেশে জনমানুষের জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। যে সংস্কারগুলো আমরা আশা করছিলাম সেসব সাংবিধানিক-প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারগুলোতে দীর্ঘসূত্রিতা দেখা দিচ্ছে।”
প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক আবদুর রশিদ জিতু বলেন, “গণঅভ্যুত্থানকে এবং এর চেতনাকে রক্ষা ও প্রতিষ্ঠা করার জরুরিয়ত সৃষ্টি হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মত ও পথের শিক্ষার্থীরা আলাদা আলাদাভাবে একই লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তাই বৃহত্তর পরিবর্তনের জন্য স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি। তারই অংশ হিসেবে জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনাকে রক্ষা ও প্রতিষ্ঠার জন্য ‘গণ অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন’ নামে আমরা একত্রিত হয়েছি। আমরা আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করব এবং একই সঙ্গে তার লাগামও টেনে ধরব।”
এর আগে, গত ৩ অক্টোর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ১৭ জন সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়ক একযোগে পদত্যাগ করেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার ৩৭ সদস্য বিশিষ্ট সমন্বয়ক কমিটি গঠন করা হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ও সাভার এলাকায় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা।
সরকার পতনের কয়েকদিন পর ১১ আগস্ট পদত্যাগ করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখার সমন্বয়ক মাহফুজুল ইসলাম মেঘ। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অন্যতম সমন্বয়ক হাসিব জামান পদত্যাগ করেন।