সারাদেশে চলতি সেপ্টেম্বর মাসে ৪৯৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৯৮ জন নিহত এবং ৯৭৮ জন আহত হয়েছেন। এই মাসে রেলপথে ৪০টি দুর্ঘটনায় ৩৭ জন নিহত ও ৪ জন আহত হয়েছে। এছাড়া নৌ-পথে ১৪টি দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত, ৫৬ জন আহত এবং ৪৭ জন নিখোঁজ রয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৫৪৭টি দুর্ঘটনায় ৫৫৪ জন নিহত এবং এক হাজার ৩৮ জন আহত হয়েছে। এই সময়ে ১৯২টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৯৫ জন নিহত, ১৪৯ জন আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সকালে সংবাদ মাধ্যমে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীর পাঠানো দুর্ঘটনা প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সংগঠনটি বহুল প্রচারিত ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌ-পথের দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে, সেখানে ১১৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১০৯ জন নিহত ও ২৫১ জন আহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে বরিশাল বিভাগে, সেখানে ২৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত ও ৪৮ জন আহত হয়েছে।
সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ১০ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১০৯ জন চালক, ৮৭ জন পথচারী, ৪৯ জন পরিবহন শ্রমিক, ৫১ জন শিক্ষার্থী, ১২ জন শিক্ষক, ৬৮ জন নারী, ৫৬ জন শিশু, ২ জন চিকিৎসক এবং ৮ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে। এদের মধ্যে নিহত হয়েছে ৪ জন পুলিশ সদস্য, ২ সেনা সদস্য, ১ আনসার সদস্য, ৯৪ জন বিভিন্ন পরিবহনের চালক, ৮৬ জন পথচারী, ৫২ জন নারী, ৪১ জন শিশু, ৪২ জন শিক্ষার্থী, ১২ জন পরিবহন শ্রমিক, ১২ জন শিক্ষক, ২ জন চিকিৎসক এবং ৮ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।
প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, দেশের সড়ক-মহাসড়কে ট্রাফিক পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশের অনুপস্থিতি সুযোগে আইন লঙ্ঘন করে যানবাহনের অবাধ চলাচল; জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকায় এবং অতি বৃষ্টির কারণে সড়কের মাঝে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় এসব গর্তের কারণে যানবাহন চলাচলে ঝুঁকি বাড়া; জাতীয়, আঞ্চলিক ও ফিডার রোডে টার্নিং চিহ্ন না থাকার ফলে নতুন চালকের এসব সড়কে দুর্ঘটনায় পতিত হওয়া; মহাসড়কের নির্মাণ ত্রুটি, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করা; উল্টোপথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাঁদাবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন করা এবং অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, বেপরোয়া যানবাহন চালানো ও একজন চালক অতিরিক্ত সময় ধরে যানবাহন চালানোকে।
দুর্ঘটনার প্রতিরোধে সুপারিশ হিসেবে বলা হয়েছে, জরুরিভিত্তিতে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের মতো ছোট ছোট যানবাহন আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা; জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে রাতে অবাধে চলাচলের জন্য আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা; দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ, যানবাহনের ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফিটনেস প্রদান; ধীরগতির যান ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা; সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনিশ্চিত করা; মহাসড়কে ফুটপাত ও পথচারী পারাপারের ব্যবস্থা রাখা, রোড সাইন, রোড মার্কিং স্থাপন করা; সড়ক পরিবহন আইন যথাযথভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা; উন্নতমানের আধুনিক বাস নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা; মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও মেরামত সুনিশ্চিত করা, নিয়মিত রোড সেইফটি অডিট করা; মেয়াদোত্তীর্ণ গণপরিবহন ও দীর্ঘদিন যাবত ফিটনেসহীন যানবাহন স্ক্যাপ করার উদ্যোগ নেওয়া এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক-মহাসড়ক দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করা।