ডিমের বাজারের চলমান অস্থিরতা দূর করতে আজ বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) থেকে শুরু হচ্ছে সরকারি দামে ডিম বিক্রির বিশেষ কার্যক্রম। রাজধানীর তেজগাঁও ও কাপ্তান বাজারে প্রতিদিন ২০ লাখ ডিম সরবরাহ করার মাধ্যমে ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রাথমিকভাবে ঢাকায় এ কার্যক্রম শুরু করা হলেও সারা দেশেই এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) ভোর ৪টায় ‘জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আলীম আখতার খান রাজধানীর কাপ্তান বাজারে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
এ বিষয়ে বিপিআইসিসির যুগ্ম আহ্বায়ক মসিউর রহমান বলেন, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও পোলট্রি স্টেকহোল্ডাররা একত্রে বসে ডিমের যৌক্তিক উৎপাদন খরচসহ উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে ডিমের মূল্য নির্ধারণ করেছে। সাম্প্রতিক সময়ের পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিজনিত বন্যার কারণে দেশের প্রায় এক চতুর্থাংশ জেলার পোলট্রি খামারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে দৈনিক প্রায় ৬০-৭০ লাখ ডিমের উৎপাদন কমে যায়। ফলে চাহিদা ও জোগানের মাঝে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয়।
মসিউর বলেন, দেশের এ সংকটকালীন একটি মহল অতিরিক্ত মুনাফা লোটার চেষ্টা করলে ডিমের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। দেশ ও মানুষের বৃহত্তর স্বার্থে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একাত্ম হয়ে পোলট্রি শিল্পের কেন্দ্রীয় সংগঠন ‘বিপিআইসিসি’ আগামী ১৫দিনের যে বিশেষ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে তাতে খামার থেকে প্রতিটি ডিম ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারিতে ১১ টাকা ১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১২ টাকায় পাওয়া যাবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, সরকারের বাজার তদারকি সংস্থা, ডিম উৎপাদনকারি বড় খামারি ও পাইকারি আড়ৎদারদের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠা- এ উদ্যোগকে সফল করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ উদ্যোগের অপর একজন সমন্বয়ক ‘ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (বিএবি) এর সভাপতি মাহাবুবুর রহমান বলেন, খামার থেকে ভোক্তার হাতে ডিম পৌঁছাতে ৭ হাতবদল হয়। সাম্প্রতিক সময়ে ডিমের দাম বৃদ্ধির কারণে বেশকিছু এলাকায় কিছু অপেশাদার লোকজনও ডিমের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। এতে হাত বদলের সংখ্যা আরও বেড়েছে। যত হাত বদল হবে, দাম ততই বাড়বে। তাই আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, হাত বদলের সংখ্যা যতটা সম্ভব কমিয়ে আনা। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহায়তায় আমরা সে চেষ্টাই করছি।
বিপিআইসিসি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে- গত ১৫ অক্টোবর সকালে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে এবং দুপুরে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে পৃথক দুটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন সন্ধ্যাতেই বিপিআইসিসির উদ্যোগে ডিম উৎপাদনকারী বড় খামারিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি অনলাইন সভা আহ্বান করা হয়। পরের দিন ১৬ অক্টোবর- বড় খামারি এবং তেজগাঁও এবং কাপ্তান বাজারের পাইকারি আড়তদারদের প্রতিনিধি সমন্বয়ে আরও একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়- যেখানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রাজধানী ঢাকায় ডিমের সরবরাহ ও বিপণন সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়।
পরে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে রাজধানীর কাপ্তান বাজারে সরকারি দামে ডিম বিক্রির কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সময়স্বল্পতার কারণে তেজগাঁও পাইকারি বাজারে যথাসময়ে ডিমের চালান পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছেনা; তাই শুক্রবার থেকে তেজগাঁও বাজারের কার্যক্রম শুরু হবে। এ কার্যক্রমে ডিম সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- কাজী ফার্মস, ডায়মন্ড এগস লি., প্যারাগন পোলট্রি, পিপলস পোলট্রি এন্ড হ্যাচারি, নারিশ পোলট্রি, ভিআইপি শাহাদতপোলট্রি, নর্থ এগ লি., নাবিল এগ্রো, আর.আর.পি, রানা পোলট্রি, চাঁদ এগ্রো, কৃষিবিদ পোলট্রি, চিত্রা এগ্রো, আমান পোলট্রি এবং মেগা পোলট্রি। আশা করা হচ্ছে- আফিল এগ্রো এবং প্রাণ এগ্রোও পরবর্তীতে এ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হবে।