পদ্মার সাথে একীভূত হচ্ছে না এক্সিম ব্যাংক
পদ্মার সঙ্গে একীভূত হবে না এক্সিম ব্যাংক। স্পষ্ট করেছেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম স্বপন। সোমবার (১৪ অক্টোবর) সকালে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে।
গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক্সিম ব্যাংক চেয়ারম্যান বলেন, ঘুরে দাঁড়াতে তারল্য সহায়তা দরকার। সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ কোটি টাকা পাওয়া গেলে সুবিধা হবে। গভর্নর ব্যাংকটির সার্বিক খোঁজখবর নিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
ব্যাংক দুটির অভিযোগ, তৎকালীন সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কারো সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই অনেকটা জোরপূর্বক একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছিল। এক্ষেত্রে কোনো মতামত চাওয়া হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যস্থতায় একীভূত হওয়ার শর্ত হিসেবে নিরীক্ষার কাজও শেষ করেছিল পদ্মা ও এক্সিম ব্যাংক। সেই নিরীক্ষা প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমাও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একীভূতকরণের বিষয়টি ঝুলে গেছে।
এক্সিম ও পদ্মার একীভূতকরণ প্রসঙ্গে এক্সিম ব্যাংকের একজন পরিচালক বলেন, এখন আমরা (এক্সিম ব্যাংক) নিজেদের সমস্যা সমাধানে হিমশিম খাচ্ছি। এই মুহূর্তে কীভাবে মার্জারের চিন্তা করবো? তাই এ বিষয়ে বোর্ড সভায় কোনো এজেন্ডাও রাখা হয়নি। ব্যাংকের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সোমবার আমরা আলোচনা করেছি। একজন কর্মকর্তা মার্জারের বিষয় জানতে চাইলে আমরা বলেছি এ বিষয় কোনো চিন্তা করার সময় নেই। আপাতত নিজের ঘর গোছাচ্ছি। এস আলম, সিকদারদের মত গ্রুপগুলো ঋণ নিয়ে ফেরত দিচ্ছে না। তাই এখন বড় বড় ঋণ গ্রহীতার কাছ থেকে কীভাবে অর্থ আদায় করবো এটাকে গুরুত্ব দিয়ে এগুচ্ছি।
এ বিষয়ে এক্সিম ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম স্বপন জানান, আমরা এখন পদ্মার ব্যাংককে একীভূত করতে চাচ্ছি না। বিষয়টি গভর্নরকে জানিয়েছি। তিনি বলেন, আমাদের পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। মানুষ এক্সিম ব্যাংকে প্রচুর আমানত রাখছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছেও আমরা তারল্য সহায়তা চেয়েছি। ইতোমধ্যে এক হাজার কোটি টাকা তারল্য সহায়তা পেয়েছি। সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ কোটি টাকা তারল্য সহায়তা পাওয়া গেলে আরও সুবিধা হবে।
এক্সিম ব্যাংক যেমন পদ্মাকে একীভূত করতে চাচ্ছে না তেমনি পদ্মা ব্যাংকও একীভূত হতে চাচ্ছে না- এমনটাই জানিয়েছেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) কাজি মো. তালহা।
তিনি বলেন, একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত যেমন চাপিয়ে দিয়েছিল। এখন তারাই সিদ্ধান্ত নেবে কী করবে? তবে আমরাও একীভূত হতে চাই না। আমরা মনে করি একটু সহায়তা পেলে নিজেরাই ঘুরে দাঁড়াতে পারব। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তারল্য সহযোগিতা লাগবে।
এদিকে মার্জারের সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছে পদ্মা ব্যাংক এমন অভিযোগ করে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, মার্জারের সিন্ধান্তের কারণে আমরা অনেক পিছিয়ে পড়েছি। অনেক গ্রাহক আতঙ্কিত হয়ে আমানত তুলে নিয়েছে। অনেক কার্যক্রমই স্থবির হয়ে আছে। তাই নিজেরা ঘুরে দাঁড়াতে চাচ্ছি; একটু সহযোগিতা পেলে নিজেরাই ঘুরে দাঁড়াতে পারবো।
এক্সিম ও পদ্মার মার্জার প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, ব্যাংক দুটি এক হবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে ব্যাংকিং টাস্কফোর্স। তারা ব্যাংকগুলোকে নিরীক্ষা করে দেখবেন। কোন ধরনের সমস্যায় আছে, কীভাবে সমাধান করা যায় তার সুপারিশ করবে। এরপরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে দুর্দশায় পড়া পদ্মা ব্যাংককে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করতে চলতি বছরের ১৮ মার্চ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর থেকে পদ্মা ব্যাংক আমানত সংগ্রহ কার্যত বন্ধ আছে। নতুন ঋণ দিচ্ছে না। পুরোনো ঋণ তদারকি এবং শাখা পর্যায়ে দৈনন্দিন ব্যাংকিং কার্যক্রম চলছে। এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার এক মাস পরেই পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারেক রিয়াজ খান পদত্যাগ করে চলে যান। সম্প্রতি তিনি বেসরকারি আরেকটি ব্যাংকে যোগ দিয়েছেন।
তারল্য জোগান দেওয়ার কারণে পদ্মা ব্যাংকের পর্ষদে বসতেন সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সোনালী ব্যাংক থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত আরো তিন ব্যাংক জনতা, অগ্রণী ও রূপালীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ শূন্য হওয়ায় পদ্মা ব্যাংক থেকেও তারা পরিচালক পদ হারিয়েছেন। একসঙ্গে চার পরিচালক হারিয়েছে পদ্মা ব্যাংক। এখন ব্যাংকটি পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকও করতে পারছে না।
এদিকে নতুন গভর্নর হিসেবে আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব নেওয়ার পর ১১ ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন করে পর্ষদ পুনর্গঠন করে। এর মধ্যে এক্সিম ব্যাংকও রয়েছে। নতুন পরিচালনা পর্ষদদের সদস্যরা ব্যাংকের নানা সমস্যা তুলে ধরেন গভর্নরের কাছে। চান তারল্য সহায়তা। ইতোমধ্যে অর্থ সহায়তা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।