বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে জাতীয় দলের একজন ক্রিকেটারের গায়ে হাত তোলা যেকোনো বিচারেই গর্হিত অপরাধ। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে এই অপকর্ম করেছিলেন সদ্য বরখাস্ত হওয়া চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। তাকে এমন অভিযোগ থেকে বাঁচিয়েছিলেন তৎকালীন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, সেই অপরাধের কারণে ১১ মাস পর বরখাস্ত হলেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। অভিযোগ ছিল চেন্নাইয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ চলাকালে নাসুম আহমেদকে চড় মারেন হাথুরুসিংহে।
২০২৩ সালে ৫ ডিসেম্বর মিরপুরে এ নিযে প্রশ্নে তোলা হলে রেগে যান লঙ্কান কোচ। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘যারা আমাকে একটু হলেও জানে, তারা জানেন, এ রকম কিছু করার মতো লোক আমি কিছুতেই নই। আপনাদের মিডিয়ার মান খুবই নিম্ন পর্যায়ের।’
লঙ্কান কোচকে প্রশ্ন করা হয়, ‘আপনি কি সত্যিই নাসুমকে চড় মেরেছিলেন?’
ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে এর জবাবে প্রশ্নকর্তাকে লঙ্কান কোচ বলেছিলেন, ‘তুমি কী পাগল’।
এরপর প্রশ্নকর্তা জানতে চান, তাহলে সেদিন কী ঘটেছিল?
এর জবাবে হাথুরুসিংহে বলেছিলেন, ‘আমি জানলেই না বলব যে কী ঘটেছিল!’
নিউজিল্যান্ড ম্যাচের সময় উপস্থিতদের কাছ থেকে সত্যিটা জেনে নেওয়ার চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দিলেন লঙ্কান কোচ বলেছিলেন, ‘যারা সেদিন ওখানে উপস্থিত ছিল, তাদের কাছেই জিজ্ঞেস করে দেখুন না। বুলশিট।’
এর কয়েকদিন পর মিরপুরে একই প্রশ্নের মুখোমুখি হন বিসিবির তৎকালীন সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। গত বছর ৮ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনে এ ঘটনা অস্বীকার করে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি অনেকদিন ধরেই দেখছি। এটা ডাহা মিথ্যা। এরপর আর কিছু বলার নাই। আমি জানি না। আমি কোনো দিনই শুনিনি এমন ঘটনা। আমি এই ধরনের কোনো কথাই শুনিনি।’
পাপন আরও বলেছিলেন, ‘এক্সসেপ্ট যখন নাকি এটা টিভিতে প্রচার করা হলো এবং এখানটায় ফার্স্ট একটা জিনিসই আমি ওনাদের বলেছি যারাই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এখানটাই যেটা বলা হয়েছে আমি কোচকে শাসিয়েছি সামথিং লাইক দ্যাট- আমি তো জানি না। সো এরপর আমার তো কিছু বলার নাই। যে জিনিসটা আমি জানি মিথ্যা। সেই জিনিসটা নিয়ে।’
তবে এবার ঠিকই প্রকাশিত হলো প্রকৃত ঘটনা। তদন্তে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন সে সময়ে সেখানে উপস্থিত থাকা একাধিক ক্রিকেটার। অনেকটা চাপে পড়ে এনায়েত হোসেন সিরাজ, মাহবুব আলম ও আকরাম খানকে নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিসিবি।
বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থাকা সকলের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত কমিটি। কিন্তু প্রকাশ পায়নি তদন্ত কমিটির সেই প্রতিবেদন। রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর দেশ ছেড়ে পালান নাজমুল হাসান পাপন।
বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব নিয়েই নাসুমের ঘটনাটি পুনঃতদন্ত শুরু করেন ফারুক আহমেদ। নাসুমসহ প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার সত্যতা খুঁজে পান তিনি। অবশেষে মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) হাথুরুসিংহেকে বরখাস্ত করে বিসিবি।
বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘দুই-তিনটি ঘটনা ঘটেছে, যেগুলো আসলে একজন সাবেক খেলোয়াড় হিসেবে আমার জন্য খুব পীড়াদায়ক ছিল। পাশাপাশি এটা দলের জন্যও খুব একটা ভালো উদাহরণ ছিল না। সেগুলো বিবেচনা করে আজকে আমরা তাকে একটা কারণ দর্শাও নোটিশ এবং দায়িত্ব থেকে অব্যহতির চিঠি দিয়েছি।’