র্যাবের সদ্য সাবেক মহাপরিচালক পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি ব্যারিস্টার মো. হারুন অর রশিদসহ তিন অতিরিক্ত আইজিপিকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার।
বুধবার (৯ অক্টোবর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পৃথক তিনটি প্রজ্ঞাপনে এ তিন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়।
বাকি দুই কর্মকর্তা হলেন হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. শাহাবুদ্দিন খান এবং ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার (অতিরিক্ত আইজিপি সুপারনিউমারারি) বর্তমানে ট্যুরিস্ট পুলিশে কর্মরত ড. খ. মহিদ উদ্দিন।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন প্রজ্ঞাপন তিনটিতে সই করেন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের সদস্য পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি ব্যারিস্টার মো. হারুন অর রশিদ, হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. শাহাবুদ্দিন খান এবং ট্যুরিস্ট পুলিশের ড. খ. মহিদ উদ্দিনকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ (২০১৮ সনের ৫৭ নং আইন) এর ৪৫ ধারার বিধান অনুযায়ী জনস্বার্থে চাকরি থেকে অবসর প্রদান করা হলো। তারা বিধি অনুযায়ী অবসরজনিত সুবিধাদি প্রাপ্য হবেন।
গত ৫ জুন এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) দশম মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন অতিরিক্ত আইজিপি ব্যারিস্টার মো. হারুন অর রশিদ।
হারুন অর রশিদ ১৯৯৫ সালে ১৫তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তাকে র্যাব মহাপরিচালক থেকে সরিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে বদলি করা হয়। তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা রুজু হয়েছে।
২০২৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি হাইওয়ে পুলিশের প্রধান হিসেবে যোগ দেন মো. শাহাবুদ্দিন খান। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর একাধিক কর্মকর্তাকে বদলি করা হলেও তিনি ছিলেন বহাল তবিয়তে।
শাহাবুদ্দিন খান ১৯৯৫ সালে ১৫তম বিসিএস (পুলিশ) এ সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় শাহাবুদ্দিন খান ডিএমপি, র্যাব-১২, র্যাব-১০, র্যাব-৪ এর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ড. খ. মহিদ উদ্দিন খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি থাকাকালীন ২০২৩ সালে তাকে ডিএমপিতে বদলি করা হয়। এরপর তাকে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনসের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তাকে ডিএমপি থেকে বদলি করে ট্যুরিস্ট পুলিশের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এর আগে গত ১৩ আগস্ট পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সাবেক প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. মনিরুল ইসলাম ও সদ্য সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়।
২১ আগস্ট পুলিশ সদরদপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি মো. আতিকুল ইসলাম, মো. আনোয়ার হোসেন ও সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়।
এরপর শিল্পাঞ্চল পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মো. মাহাবুবর রহমান, সদ্য সাবেক সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া এবং পুলিশ সদরদপ্তরের ডিআইজি জয়দেব কুমার ভদ্রকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় সরকার।
গত ২৭ আগস্ট চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনের সাবেক কমিশনার পুলিশ সদরদপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি কৃষ্ণপদ রায়, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (ডিআইজি) মো. মোজাম্মেল হক ও খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার সরদার রাকিবুল ইসলামকে অবসরে পাঠায় সরকার।
গত ২ সেপ্টেম্বর ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মীর রেজাউল আলম, পুলিশ সদরদপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি খন্দকার লুৎফুল কবির, সিআইডির ডিআইজি মো. ইমাম হোসেন ও নোয়াখালী পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের অতিরিক্ত ডিআইজি চৌধুরী মঞ্জুরুল কবিরকে অবসরে পাঠানো হয়।
এরপর ২২ সেপ্টেম্বর রেলওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি দেবদাস ভট্টাচার্য্য, শিল্পাঞ্চল পুলিশের উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (সুপারনিউমারারি অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) এ কে এম হাফিজ আক্তার, ঢাকা পুলিশ টেলিকমের উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (সুপারনিউমারারি অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) বশির আহম্মদ, আরআরএফের পুলিশ সুপার (পুলিশ সদরদপ্তরে সংযুক্তির আদেশপ্রাপ্ত) মো. মীজানুর রহমান, এপিবিএনের সহকারী পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম এবং ডিএমপির সহকারী পুলিশ সুপার মো. দাদন ফকিরকে অবসরে পাঠায় সরকার।
সর্বশেষ ২৩ সেপ্টেম্বর পুলিশের পাঁচ পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। তারা হলেন বান্দরবান ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ ইয়াসির আরাফাত খান, সিআইডির ফেনীতে কর্মরত মো. শাহজাহান, চট্টগ্রামে কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক মির্জা মোহাম্মদ হাছাঁন, অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটে কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক মহসিনুল কাদির ও শেরপুর ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক আনিচুর রহমান মোল্ল্যা।