মেক্সিকো উপসাগরের উপর তৈরি হয়েছে শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হারিকেন মিল্টন। আর এটি তীব্র শক্তি নিয়ে প্রচণ্ড গতিতে ফ্লোরিডার দিকে ধেয়ে আসছে।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) আমেরিকার আবহাওয়া দপ্তর এই ঝড়কে ক্যাটাগরি পাঁচ ঝড় হিসেবে চিহ্নিত করেছে। অর্থাৎ এই ঝড় ২৪০ কিলোমিটার বেগে উপকূলে আঁছড়ে পড়তে পারে।
এই কারণে ফ্লোরিডা উপকূল থেকে সকলকে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা শুরু হয়েছে। এই তথ্য জানিয়েছে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে।
এদিকে বৃহস্পতিবারেই জার্মানি পৌঁছানোর কথা ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের। কিন্তু হারিকেন মিল্টনের কারণে দেশ ছেড়ে যাওয়া ঠিক হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি। সে কারণেই আপাতত জার্মানি সফর বাতিল করেছেন বাইডেন।
বাইডেন জানিয়েছেন, আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়ংকর ঝড় হতে চলেছে হারিকেন মিল্টন। তাই আগে থেকেই সবরকম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
তিনি জানান, ইতিমধ্যেই ফ্লোরিডার উপকূলে যথেষ্ট পরিমাণ সরকারি কর্মকর্তা পাঠানো হয়েছে। ফ্লোরিডার উপকূল থেকে মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছেন তারা। দৃশ্যত রাস্তাজুড়ে বহু মানুষের ঢল দেখা যাচ্ছে ফ্লোরিডায়।
এদিকে বহু মানুষ ফ্লোরিডা ছেড়ে অন্য রাজ্যে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। যে কারণে হোটেল এবং বিমানের ভাড়া কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। বাইডেন হোটেল এবং বিমান সংস্থাগুলির কাছে অনুরোধ করেছেন, ভাড়া না বাড়ানোর।
ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার এর আগে মিল্টনকে ক্যাটাগরি পাঁচ থেকে চারে নামিয়ে এনেছিল। কিন্তু মঙ্গলবার ফের তা ক্যাটাগরি পাঁচ ঝড় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সকালে ফ্লোরিডার ট্যাম্পা বে অঞ্চলে আঁছড়ে পড়ার কথা মিল্টনের। সমুদ্রের পানি ২০ ফুট পর্যন্ত উঠতে পারে। ফলে এই গোটা উপকূল অঞ্চল থেকেই মানুষকে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। এর আগে এখানেই আঁছড়ে পড়েছিল হারিকেন হেলেন। তখন যে ধ্বংসস্তূপ তৈরি হয়েছিল তা এখনো পুরোপুরি সরানো যায়নি। হারিকেন মিল্টন এলে সেই ধ্বংসস্তূপের জিনিস স্প্লিন্টারের মতো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যানটিস জানিয়েছেন, উপকূল ছাড়তে বলার অর্থ এই নয় যে রাজ্য ছেড়ে চলে যেতে হবে। কিছু মাইল দূরেই সকলের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, গাড়িতে জ্বালানি ভরার জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা আছে। যদিও স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, জ্বালানি মিলছে না। অন্তত ১৫টি গ্যাস স্টেশন খালি বলে তারা জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, মাত্র দুই সপ্তাহের কিছু সময় আগেই ভয়াবহ হারিকেন ‘হেলেন’ দক্ষিণ-পূর্ব যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে। ২০০৫ সালে আঘাত হানা হারিকেন ক্যাটরিনার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডের সবচেয়ে প্রাণঘাতী ঝড় ছিল এটি। এতে অন্তত ২২৫ জন মানুষ নিহত হয়। শত শত মানুষ নিখোঁজ রয়েছে।
শুধু ফ্লোরিডায় অন্তত ১৪ জন মারা গেছে। ওই হারিকেনের তাণ্ডবে প্রাণহানির পাশাপাশি বিগ বেন্ড ও আশপাশের এলাকার অসংখ্য গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটিও উপড়ে পড়ে। একইসঙ্গে বহু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি শত শত রাস্তা পানিতে ডুবে যায়।
আর এবার হারিকেন মিল্টনের প্রভাবে ফ্লোরিডার মধ্যাঞ্চলে ব্যাপক বৃষ্টিপাত ও আকস্মিক বন্যা দেখা দিতে পারে। এমন অবস্থায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ফ্লোরিডার পশ্চিম উপকূলের সব মানুষকে বাধ্যতামূলকভাবে নিরাপদে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।