বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: ইসকন ইস্যুতে সরকারের পদক্ষেপ জানতে চান হাইকোর্ট   সাবেক মন্ত্রী আনিসুল-কামরুল রিমান্ডে   আইনজীবী সাইফুলের জানাজায় হাসনাত-সারজিস   জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার ৭ বছরের সাজা বাতিল   শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমাবেশ দুপুরে   টিভিতে আজকের খেলা   সোনামসজিদ বন্দর দিয়ে আসছে না পণ্য, বাড়ছে আলু-পেঁয়াজের দাম   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের ৫০০ কোটির যন্ত্রাংশ ৬৮ কোটিতে বিক্রি
খুলনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৪, ১:৫৯ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

খুলনার খালিশপুরে অবস্থিত খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলে পুরোনো যন্ত্রাংশ বিক্রিতে পুকুর চুরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৫০০ কোটি টাকারও বেশি দামের যন্ত্রাংশ মাত্র ৬৮ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)। 

অভিযোগের তথ্য মতে, বিগত সরকারের প্রভাবশালী একটি চক্র মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। এসব যন্ত্রাংশ কেনার জন্য ১৭টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিলেও একটি মাত্র প্রতিষ্ঠানের দরপত্র খুলে তাদের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে।  

এ বিষয়ে বিসিআইসির পরিচালক (উৎপাদন ও গবেষণা) মো. শাহীন কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঘুষ লেনদেনের অভিযোগের সত্যতা আছে কি না আমার জানা নেই। আমি কোনো অবস্থাতেই অস্বচ্ছ ও অসততার সঙ্গে ছিলাম না।’ 

১৭ প্রতিষ্ঠান দরপত্র কেনার পরও মাত্র একটি প্রতিষ্ঠানের দরপত্র খোলা হয়েছে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমি জানি না। এটা মূল্যায়ন করেছে টেন্ডার কমিটি। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে স্বচ্ছ রাখতে জেলা প্রশাসকের একজন প্রতিনিধি ছিলেন এ প্রক্রিয়ায়। আমি খুলনার টেন্ডার ঢাকায় ওপেন রেখেছি। যদিও বিষয়টি পিপিআর অনুমোদন না দিলেও টেন্ডার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ রেখেছি।’

অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের ভেতরে থাকা যন্ত্র ও পুরোনো স্থাপনা বিক্রির দরপত্র ডাকা হয়। বিক্রয়ের তালিকায় ছিল বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রাংশ, বয়লার, হাজার হাজার টন লোহালক্কড়, ওভারব্রিজের যন্ত্রাংশ, তামা ও ইস্পাতের তৈরি বিদ্যুতের ভারী সরঞ্জাম ইত্যাদি। ১৭টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র কেনে। দরপত্র খোলা হয় গত বছরের ১ নভেম্বর। অজানা কারণে মাত্র একটি প্রতিষ্ঠানের দরপত্র খোলা ও তাদের উত্তীর্ণ করা হয়। দরপত্রে কার্যাদেশ পাওয়া সেই ভাগ্যবান প্রতিষ্ঠান হচ্ছে মেসার্স ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং। পরে তাদের কার্যাদেশ দেওয়া হয়।

জানা গেছে, ক্রমাগত লোকসান ও মূলধনের ঘাটতির কারণে ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এতে কাজ হারান প্রায় ৩ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী। মিলের ৮৮ একর জমির মধ্যে ৫০ একর জমি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। মিলের চাকরিচ্যুত শ্রমিক-কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে মিলটি চালু ও রক্ষার চেষ্টা করা হয়। সংগ্রাম পরিষদ গত ২৭ আগস্ট জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।

শ্রমিকরা জানান, টেন্ডারে বিক্রির নামে মূলত মিলের মালপত্রগুলো লুট করা হচ্ছে। মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সাঈদ, তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, সচিব, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় শেখ হেলাল, শেখ জুয়েল ও শেখ সোহেল মিলে একটি চক্র গঠন করেন। তারা বিশাল অঙ্কের অর্থ ভাগবাটোয়ারা করে নেন। এই সিন্ডিকেটের অবৈধ লেনদেনের কারণে দরপত্র জমা দিতে পারেননি অন্য ঠিকাদাররা। বিপুল পরিমাণ মালপত্র বিক্রির জন্য দর পড়ে ৬৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। অথচ সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের দাবি, ওসব সম্পদের মূল্য কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকা। এই প্রক্রিয়ায় সরকারের শত শত কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, বর্তমানে মিলটিতে ঠিকাদার কর্তৃপক্ষের লোকজন পাহারা দিচ্ছে। প্রতিনিয়ত মিল থেকে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সরিয়ে নিচ্ছে। ৩৩ একর জায়গার মিলটিতে পাহারা দিচ্ছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা কর্মীরা। সেখানে মিল কর্তৃপক্ষের লোকজনকেও প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

মিলের এমডি আবু সাঈদ বলেন, ‘সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর টেন্ডার প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা হয়। এর আগে দুবার টেন্ডার আহ্বান করা হয়। তখনো কোনো দরপত্র জমা পড়েনি। ফলে একপ্রকার বাধ্য হয়ে তৃতীয়বার মেসার্স ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়েছে। ঘুষ বা অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ সঠিক নয়।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম ও খুলনার ঐতিহ্য খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল। ২০২২ সালে মিলটি চালুর চেষ্টা করা হয়। বিষয়টি নিয়ে একাধিক কমিটিও গঠন করা হয়। কিন্তু সেটা আলোর মুখ দেখেনি। সুন্দরবনের গেওয়া কাঠের ওপর ভিত্তি করে ১৯৫৭ সালে নগরীর খালিশপুরে (ভৈরব নদের তীরে) ৮৮ দশমিক ৬৮ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল। ১৯৫৯ সালে মিলটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করে। তখন মিলটির বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৪৮ হাজার টন। 

চার দশকেরও বেশি সময় ধরে লাভজনক থাকা মিলটি ১৯৯২ সাল থেকে লোকসান গুনতে থাকে। ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে নিউজপ্রিন্টের ওপর ৭৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের পর অনেক ব্যবসায়ী বিদেশ থেকে কাগজ আমদানি শুরু করেন। ফলে খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলে উৎপাদিত ৫২ গ্রামের নিউজপ্রিন্টের চাহিদা অনেক কমে যায়। চাহিদা কম থাকলেও তা কোনো রকমে সামলে উঠেছিল মিলটি। কিন্তু সুন্দরবনকে বিশ্বের ঐতিহ্যের অংশ ঘোষণার পর বিপাকে পড়ে মিল কর্তৃপক্ষ। কাঁচামালের সংকটে অব্যাহতভাবে লোকসান দিতে শুরু করে মিলটি। মাত্র সাত বছরে (১৯৯৫ থেকে ২০০২) মিলটির লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৮৪ কোটি টাকা। ক্রমাগত লোকসান এবং মূলধনের ঘাটতির কারণে ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর মিলটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এবং প্রায় ৩ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী বেকার হয়ে পড়েন।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ মু. আশরাফ উজ জামান বলেন, মিলটি ফের চালু করার জন্য খুলনাবাসী অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। এখানে ভিন্ন কিছু করারও প্রস্তাব দেওয়া হয় সরকারকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মিলের বৃহৎ একটি অংশ দিয়ে দেওয়া হয়েছে নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডকে। সেখানে এই কোম্পানি ‘রূপসা ৮০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট’ স্থাপন করছে।

খুলনা উন্নয়ন কমিটির সভাপতি আরও বলেন, নিউজপ্রিন্ট মিলের বাকি জমিতে নতুন পেপার মিল হবে বলে জানতে পেরেছি; কিন্তু কবে নাগাদ হবে তা জানা সম্ভব হয়নি।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://dailyvorerpata.com/ad/af.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]