বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানিয়েছে, শুধু ঢাকায় যানজটের কারণে প্রতিদিন ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে।
রোববার (৬ অক্টোবর) বেলা ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান সংস্থাটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
লিখিত বক্তব্যে মোজাম্মেল হক বলেন, যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা, পরিবহনসংশ্লিষ্টরা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করায় ভয়াবহ যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী। নগরীর এক প্রান্ত থেকে যে কোনো গন্তব্যে যেতে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টার বেশি সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। ঢাকার যানজটে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে কর্মক্ষম মানুষের ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা। বুয়েটের তথ্য বলছে, প্রতিবছর এই যানজটে আর্থিক ক্ষতি পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকা।
তিনি আরও বলেন, রাজধানীর গণপরিবহন ব্যবস্থা বহুযুগ আগেই ভেঙে পড়েছে। নগরীতে চলাচলকারী বাস-মিনিবাস রংচটা, বিবর্ণ, লক্কড়ঝক্কড়, পেছনের লাইট-ইন্ডিকেটর আর সামনের লুকিং গ্লাস নেই। আসনে দুই পা মেলে বসা যায় না। বাসে ওঠানামার পাদানি, ধরার হেন্ডেল ভাঙা থাকে। দীর্ঘসময় ধরে দাঁড়িয়ে গাদাগাদি করে যেতে হয়। গরমের দিনে ঘামে ভিজে এবং বর্ষাকালে বাসের ভেতর বৃষ্টিতে ভিজে যবুতবু অবস্থা হয়। কোনো বাসে পরিষ্কার-পরিচ্ছনতার বালাই নেই। ময়লা-আর্বজনা, ছারপোকা, তেলাপোকায় ভরপুর, মুড়ির টিনের মতো বাসে ওঠা-নামার ভয়াবহ যন্ত্রণা সহ্য করেও সঠিক সময়ে বাস পাওয়া যায় না।
সংস্থাটির মহাসচিব বলেন, এমন বাস্তবতায় সামর্থ্যবানরা ধারদেনা করে ব্যক্তিগত গাড়ি কিনছেন। অন্যরা মোটরসাইকেলে রাইডশেয়ারিং, অটোরিকশা, ইজিবাইক পাঠাও-ওবারের মতো ছোট ছোট যানবাহনে স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াতের দিকে ঝুঁকেছেন। ফলে নগরীতে বিশৃঙ্খল বাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ৪ লাখ প্যাডেলচালিত রিকশা, ৬ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ১ লাখ ৩৪ হাজার রাইডশেয়ারিং এর ছোট ছোট যানবাহন, ৩০ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা অবাধে যাতায়াতের কারণে নগরীর যানজট ও জনজট চরমভাবে বেড়ে চলেছে। অন্যদিকে, এসব যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক ব্যবস্থা এখনো সেকেলে। আর সরকার পরিবর্তনে পর নগরীর ৪ হাজার ট্রাফিক পুলিশ এখনো নিষ্ক্রিয়। যানজট কমাতে জরুরি ভিত্তিতে অত্যাধুনিক প্রকৌশলগত ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করা দরকার।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী আরও বলেন, বিআরটিএর তথ্যমতে, রাজধানীতে প্রতিদিন গড়ে ছোট ছোট ৮০০ গাড়ি নামছে। জাইকার সমীক্ষা অনুযায়ী, ঢাকা মহানগরীতে প্রতিদিন গড়ে ৪ কোটি ট্রিপ যাত্রী যাতায়াত হয় এর ৬০ শতাংশ গণপরিবহন ব্যবহার করেন। এসব যাত্রীর ৬৭ শতাংশ কেবল বাস ব্যবহার করেন। অথচ ঢাকা সিটি বাসের মান-গুণ যাত্রীসেবার গত ২০ বছর ধরে কিছুই ঠিক নেই। ঢাকার যানজট কমাতে হলে সর্বপ্রথম বাস-মিনিবাস ব্যবস্থা ঠিক করতে হবে। বাস রুট রেশনালাইজেশনের মাধ্যমে বাসের জন্য প্রাধিকার লেইনের ব্যবস্থা করতে হবে। ছোট ছোট যানবাহনের নিবন্ধন ও নগরীর প্রধান সড়কে এসব যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যাত্রী কল্যাণ সমিতি গত ১৫ বছর ধরে এসব বিষয় নানাভাবে সামনে নিয়ে এসেছে। এসব প্রস্তাবনা অনুসরণ করে নামমাত্র খরচে রাজধানীর গণপরিবহন সংকট সমাধান, যানজট নিরসন করা সম্ভব ছিল। অথচ বিগত আওয়ামী লীগ সরকার এসব কর্ণপাত না করে বড় বড় প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, উড়াল সেতু, উড়াল সড়ক, মেট্রোরেল (এমআরটি), বিআরটি, নানা প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে। কিন্তু তাতে ঢাকার যানজট সমস্যার সমাধান হয়নি বরং যানবাহনের গড় গতিবেগ ২০০৭ সালে ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার থেকে কমে ২০২২ সালে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে ঢাকায় সার্ভিস পরিষেবা উন্নত করে, বাস রুট রেশনালাইজেশন পদ্ধতিতে প্রাধিকার লেইনের ব্যবস্থা করা সহ নগরীর প্রধান সড়কগুলো থেকে রিকশা, ইজিবাইকসহ ছোট যানবাহন তুলে দেওয়া ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করার দাবি জানায় বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।