পাঠ্যবইয়ে ‘বাংলাদেশের অভ্যুদয়’ বিষয়ে দেশের জন্মের ইতিহাস পড়ানো হয়। সেখানে মহান মুক্তিযুদ্ধ, মহান ভাষা আন্দোলনসহ বাংলাদেশ জন্মের ইতিহাস রয়েছে। প্রশ্নপত্র হয় বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস নিয়ে।
কিন্তু গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশের প্রেক্ষাপট বদলে যায়। আন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে প্রচার করা হয় নতুন বাংলাদেশের। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ সরকারের পক্ষে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন।
এবার সরকারের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিতে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস বাদ দিয়ে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়েছে ২০২৪ সালের অভ্যুত্থান নিয়ে।
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর সরকারি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের অর্থনীতি বিভাগের ‘স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস’ বিষয়ে দ্বিতীয় ইনকোর্স পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে এমন প্রশ্ন করা হয়। তাতে দেখা গেছে, পুরো প্রশ্নপত্রের কোথাও বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস অর্থাৎ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন নেই। ২০২৪ সালের অভ্যুত্থান নিয়েই পুরো প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়েছে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস বিষয়ে পরীক্ষার ‘ক’ বিভাগের ছোট প্রশ্ন ১ নম্বরের ‘ক’ প্রশ্নের উত্তর লিখতে বলা হয়েছে-২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানকারী সংগঠনটির নাম কী? ‘খ’ প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয়েছে, ২০২৪ সালের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নাম কী?
‘খ’ বিভাগের ২ নম্বরে ‘ক’ প্রশ্নে বলা হয়েছে, ২০২৪ এর ১০ জন শহীদের নাম লিখ। ‘খ’ প্রশ্নে উল্লেখ হয়েছে, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ স্থিতিশীল রাখতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় ছাত্র-জনতার ভূমিকা সংক্ষেপে লিখ।
‘গ’ বিভাগের প্রশ্নে উল্লেখ করা হয়েছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন কীভাবে এক দফার আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়? আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায় আলোচনা করো। ‘খ’ প্রশ্নে উল্লেখ হয়েছে, বাংলাদেশের চাকরিতে কোটা বৈষম্যের স্বরূপ এবং জাতীয় ঐক্য গঠনের কোটা ব্যবস্থার প্রস্তাব আলোচনা করো। পুরো প্রশ্নের কোথাও বাংলাদেশের অভ্যুদয় বা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রশ্নটি আমি কাল রাতে পেয়েছি। পরীক্ষার আগে তো আর দেখিনি। যে শিক্ষক এই প্রশ্ন করেছেন তিনি নতুন শিক্ষক। কয়েকদিন আগে যোগদান করেছেন তিনি বঞ্চিত গ্রুপের একজন। কাল আমরা কথা বলবো, কীসের ভিত্তিতে এমন প্রশ্ন করলো, কেন করলো।’
প্রশ্নপত্রের বিষয়ে দেৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, ‘বিষয়টির যারা সংশ্লিষ্ট, তাদের সঙ্গে কথা বলা যেতে পারে। হঠাৎ করে হয়তো একটি সমস্যা হতে পারে। যে কারণে উনারা গভীরভাবে চিন্তা করার সুযোগ পাননি। আমার মনে হয়, এ বিষয়ে ডেফিনিটলি গভীরভাবে চিন্তা করে উনারা লিখবেন, যাতে করে সব বিষয়ই একসঙ্গে দেখা হয়। স্বাধীনতার গুরুত্বটা ছোট করে দেখার কোনও সুযোগ নেই। সবাই এটাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখবে। আমার বিশ্বাস ভবিষ্যতে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা নজর রাখবেন।’