টেস্ট সিরিজে লাঞ্চের আগের ওভারে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন মুমিনুল হক। তিন উইকেট হারালেও তাই হাসিমুখ নিয়েই লাঞ্চ বিরতিতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। মেহেদি হাসান মিরাজ এবং মুমিনুলের ব্যাট থেকে পঞ্চাশ পেরুনো একটা জুটিও পেয়ে যায় টাইগাররা।
কিন্তু লাঞ্চের পরেই ফের ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মিছিল। এবারও একপ্রান্তে টিকে রইলেন সেঞ্চুরিয়ান মুমিনুল।
বুমরাহকে দুই চার মেরে শুরু করেছিলেন মিরাজ। কিন্তু বুমরাহ খুব ভালো করেই জানেন ফিরে আসার মন্ত্র। ওভারের চতুর্থ বলেই ফেরেন মিরাজ। ক্যাচ দিলেন স্লিপে শুবমান গিলের হাতে। তার ব্যাট থেকে আসলো ৪২ বলে ২০ রানের ইনিংস। বাংলাদেশের ইনিংস লম্বা হওয়ার পথটা আটকে যায় মিরাজের আউটের পরপরেই। ২৫০ও করা হয়নি শেষ পর্যন্ত।
মিরাজকে আউট করার পরের ওভারেই ফের বুমরাহর আঘাত। রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে আসা তার ভেতরে ঢোকা বলে বোল্ড হয়ে ফিরতে হয় ৫ রান করা তাইজুলকে। পরের ওভারেই মোহাম্মদ সিরাজের বলে ফেরেন হাসান মাহমুদ। সবার শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হলেন খালেদ। রবীন্দ্র জাদেজার রেকর্ড পেতে দরকার ছিল ১ উইকেটের। কট এন্ড বোল্ডে সেটাই করলেন জাদেজা।
টেস্ট ক্রিকেটে ১১তম খেলোয়াড় হিসেবে ৩০০ উইকেট এবং ৩ হাজার রানের এলিট ক্লাবে জায়গা করে নিয়েছেন জাদেজা। টেস্ট ক্রিকেটে ৭৩ ম্যাচের ক্যারিয়ারে জাদেজা এখন পর্যন্ত করেছেন ৩ হাজার ১২২ রান। আর বল হাতে পেলেন ৩০০ উইকেট।
জাদেজার রেকর্ডের সঙ্গে শেষ হয়েছে বাংলাদেশের ১ম ইনিংস। একপ্রান্তে টিকে থাকলেন ১০৭ রান করা মুমিনুল। বাংলাদেশ অলআউট হলো ২৩৩ রানে।
এর আগে লাঞ্চের ঠিক পূর্বমুহূর্তে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে সুইপ শট খেলে টেস্ট ক্যারিয়ারে নিজের ১৩তম সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন সাবেক টেস্ট অধিনায়ক। দেশের বাইরে এটি তার মাত্র ২য় সেঞ্চুরি। এর আগে নিজের ১১তম সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০২১ সালে ক্যান্ডি টেস্টে। সে হিসেবে দেশের বাইরে প্রায় ৩ বছরের সেঞ্চুরি খরা কাটিয়েছেন তিনি। অশ্বিনের ওই ওভারের পরেই লাঞ্চ বিরতিতে গেছে দুই দল। তার আগে বাংলাদেশও পার করেছে দলীয় দুইশ রান।
সকাল থেকে বাংলাদেশের দৃষ্টিকটু আর অধৈর্য ব্যাটিংই হতে পারে চতুর্থ দিনের খেলার শিরোনাম। মুশফিকুর রহিম আউট হয়েছেন বল ছেড়ে খেলতে গিয়ে। লিটন দাস এবং সাকিব আল হাসান দুজনে ফিরেছেন অহেতুক আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতে গিয়ে। দুজনেই ডাউন দ্য উইকেটে বড় শট খেলতে গিয়ে দিয়েছেন ক্যাচ।
জাসপ্রিত বুমরাহ পরপর কয়েকবার একই লেন্থে বল করেছেন। মুশফিক যে বলে আউট হন, তার ঠিক আগের বলটিও অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে ভেতরে ঢুকেছিল। যদিও সেবার মুশফিকের ব্যাটের কানায় লেগে স্টাম্পের পাশ ঘেষে চলে যায় সীমানার বাইরে। পরের বলে মুশফিক নিজেই ব্যাট উঁচিয়ে জায়গা ছাড়লেন। তাতেই হয়েছেন বোল্ড। ১১ রান করা মুশফিকের আউটে ৪ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের রান ১১২।
অপর ব্যাটার মুমিনুল খেলেছেন প্রপার টেস্ট মেজাজে। তুলে নিয়েছেন ফিফটি। মাঝে মোহাম্মদ সিরাজের করা ৪৬তম ওভারের প্রথম বলে আউট হয়েছিলেন আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে। সাথেসাথেই রিভিউ নেন তিনি। স্নিকো মিটারে দেখা যায় বল ব্যাটে লাগেনি, প্যাডে ছুঁয়ে তবেই গেছে যশস্বী জয়সোয়ালের হাতে। ৪৮ রানে দাঁড়ানো মুমিনুল পরের বলেই চার মেরে পেয়ে যান ফিফটি। এরপর অবশ্য রবীন্দ্র জাদেজার এক ওভারেই দুইবার চার মেরেছেন তিনি।
লিটন দাস শুরুতে এসেই জাসপ্রিত বুমরাহর এক ওভারে পেলেন তিন চার। এরপরে আরও আগ্রাসী হতে গিয়েই বিপত্তি। রোহিত শর্মার দুর্দান্ত এক ক্যাচে মোহাম্মদ সিরাজের বলে আউট হয়ে ফিরেছেন লিটন। মিড অফের ওপর দিয়ে সীমানা পার করতে চেয়েছিলেন লিটন। কিন্তু লাফিয়ে উঠে এক হাতে দুর্দন্ত ক্যাচ নেন রোহিত।
অশ্বিনের আগের বলেই ইনসাইড আউট শটে চার মেরেছিলেন সাকিব আল হাসান। পরের বলেও তুলে মারতে গিয়েছিলেন। কিন্তু বল উঠে যায় ওপরে। অনেকটা পেছনে দৌড়ে অসাধারণ এক ক্যাচ নেন সিরাজ। সাকিব ফেরেন মাত্র ৯ রান করে।
এরপরই মিরাজকে নিয়ে জুটি গড়েন মুমিনুল। ৯৩ এবং ৯৬ রানে দুইবার জীবন পেয়েছেন। একবার ক্যাচ নিতে পারেননি রিশাভ পান্ত, আরেকবার স্লিপে হাতের মুঠো থেকে ক্যাচ ফেলে দেন রোহিত শর্মা। বাকি ব্যাটসম্যানরা আসা–যাওয়ার মধ্যে থাকলেও এক প্রান্ত আগলে রেখে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন মুমিনুল হক।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৭৪.২ ওভারে ২৩৩/১০ (মুমিনুল ১০৭*; শান্ত ৩১, সাদমান ২৪, জাকির ০, মুশফিক ১১, লিটন ১৩, সাকিব ৯, মিরাজ ২০, তাইজুল ৫, হাসান ১, খালেদ ০)