বাজারে আবারও ডিম, ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দামে অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। মাত্র একদিনের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগি এখন কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়। একইসঙ্গে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ডিমও।
অথচ এই দুই পণ্যের দামই নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। যার কোনোটিই বিক্রি হচ্ছে না বেঁধে দেওয়া দামে। এ ছাড়া বৃষ্টির অজুহাতে সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীতে সবজির দামও বেড়েছে। এতে বিপাকে পড়েছে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ডিমের সঙ্গে সবজি ও মুরগির দাম আগের তুলনায় বেড়েছে। পেঁয়াজ-আলুর মতো অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমারও কোনো খবর নেই।
গতকাল বৃহস্পতিবারও রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ খুচরা বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছিল ১৮০ টাকা কেজি দরে। মাত্র একদিনের ব্যবধানে আজ (শুক্রবার) সেটির এখন কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়। একইসঙ্গে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ডিমও। অথচ এই দুই পণ্যের দামই নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। যার কোনোটিই বিক্রি হচ্ছে না বেঁধে দেওয়া সেই দামে।
খুচরায় একটি ফার্মের মুরগির ডিমের দাম ১৪ টাকা, হালি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। তবে পাড়া-মহল্লার দোকানে একটি ডিম ১৫ টাকাও বিক্রি হতে দেখা গেছে। সে হিসাবে হালি ও ডজনের দাম দাঁড়ায় আরও বেশি। ডজন ১৭০ টাকাও উঠেছে। দাম নাগালে আসছে না বরং আরও অস্থিতিশীল হওয়ার কথা বলছেন খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা।
বাজারে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে। সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, যা এখন ১৯০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। অর্থাৎ সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে। সোনালি মুরগির দামও ১০ টাকা বেড়ে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা হয়েছে। যা ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা ছিল গেল সপ্তাহে।
অন্যদিকে বাজারে বেশ কয়েক মাস ধরে চড়া রয়েছে আলু ও পেঁয়াজের দাম। বর্তমানে প্রতি কেজি আলু ৬০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এক মাস আগে আলু ও পেঁয়াজের দাম কমাতে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক কমিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আলু আমদানিতে বিদ্যমান ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া আলু আমদানিতে থাকা ৩ শতাংশ এবং পেঁয়াজ আমদানিতে থাকা ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে এর কোনো প্রভাব পড়েনি।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আগের সপ্তাহের তুলনায় বেশ কিছু সবজির দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা করে বেড়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, টানা কয়েকদিন বৃষ্টির কারণে সবজির সরবরাহ কমেছে। এর প্রভাবে দাম বেড়েছে।
গোল বেগুন প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লম্বা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। কাঁচা মরিচ ২৪০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, টমেটো ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, চায়না গাজর ১৮০ টাকায়, ঢেঁড়স, পটোল ও চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ঝিঙ্গা ৮০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চালকুমড়া প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০ টাকা, লম্বা লাউ প্রতিটি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া বাজারগুলোতে লালশাক ১৫ টাকা, লাউশাক ৪০ টাকা, মুলাশাক ১৫ টাকা, পালংশাক ১৫ থেকে ২০ টাকা, কলমিশাক ১০ টাকা, পুঁইশাক ৪০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজারে দেখা গেছে, রুই, তেলাপিয়া, পাঙাশের মতো মাছ আগের দামেই বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি (চাষের) রুই ৩০০ থেকে ৩৬০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা ও পাঙাশ ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে ইলিশের দাম (এক কেজি আকারের) কেজিপ্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেড়ে এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া নিয়ন্ত্রণে আসেনি চালের বাজারও। প্রতি কেজি মোটা চাল (স্বর্ণা ও চায়না ইরি) ৫০-৫৫ ও মাঝারি (বিআর-২৮ ও পাইজাম) ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে সরু চাল (মিনিকেট ও নাজিরশাইল) বিক্রি হচ্ছে ৬৪-৭৮ টাকা টাকা কেজি।
মুরগি ও ডিমের বাড়তি দামের কারণে ক্রেতারা পড়েছেন বেশ বিপাকে। তারা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে মুরগি ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিলেও খুচরা বাজারে তার কোনো প্রভাব নেই। বিক্রেতারা যেমন ইচ্ছা তেমন দাম নিচ্ছেন। এগুলো দেখার কেউ নেই।
এর আগে ১৫ সেপ্টেম্বর মুরগি ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ রেয়াজুল হকের সই করা এক চিঠিতে বলা হয়, ডিম খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা, সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা এবং ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি চিঠিতে মুরগি (সোনালি ও ব্রয়লার) ও ডিমের নির্ধারিত যৌক্তিক মূল্য (উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে) সঠিকভাবে বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
নতুন নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী ডিমের মূল্য উৎপাদক পর্যায়ে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা ০১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। কেজিপ্রতি সোনালী মুরগি উৎপাদক পর্যায়ে ২৬০ টাকা ৭৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ২৬৪ টাকা ৫৭ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। আর কেজিপ্রতি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদক পর্যায়ে ১৬৮ টাকা ৯১ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১৭২ টাকা ৬১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।