মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলার এক নেয়ামত এবং রহমত বৃষ্টি। নবী করিম (সা.) বৃষ্টির পানি গায়ে লাগাতেন। তিনি তার উম্মতদেরকেও বৃষ্টির পানি গায়ে লাগানোর জন্য অনুমতি দিয়েছেন।
হাদিসে আছে, নবী করিম (সা.) বৃষ্টিতে একবার বের হয়েছিলেন এবং শরীরে পানি লাগিয়ে ছিলেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কেন তিনি এমনটি করেছেন? তখন তিনি বললেন, বৃষ্টিকে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বরকত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সুতরাং বৃষ্টির পানি শরীরে লাগানোর জন্য বৃষ্টির মধ্যে নেমে যাওয়ার দরকার নেই। যদি ঠাণ্ডা লাগার ভয় থাকে। অন্তত দুই এক ফোঁটা পানি শরীরে লাগালে পূর্ণ হয়ে যাবে।
পবিত্র কুরআনে সেসব বর্ণিত হয়েছে নানা প্রসঙ্গে, বিচিত্র উপস্থাপনায়। কুরআনের এসব বর্ণনা আমাদের ভাবনার দুয়ারকে খুলে দেবে, আল্লাহ তায়ালার অসীম কুদরতের সামনে তখন অবচেতনভাবেই নত হবে আমাদের শির। কৃতজ্ঞতায় আপ্লুত হব আমরা।
পবিত্র কুরআনের অনেক আয়াতে বৃষ্টির নানামুখী মুগ্ধকর বিবরণ এসেছে। কোথাও বৃষ্টি বর্ষণকে উল্লেখ করা হয়েছে আল্লাহ তায়ালার ক্ষমতা ও কুদরতের নিদর্শন হিসেবে। কোথাও বৃষ্টি আল্লাহ তায়ালার পরিচায়ক। বৃষ্টিকে কোনো কোনো আয়াতে আল্লাহর রহমত হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। বৃষ্টি কোথাও উল্লেখিত হয়েছে হৃদয়ছোঁয়া উপমায়।
রহমতের বৃষ্টি দেখে দোয়া পড়া সুন্নত। হাদিসে এসেছে, হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বৃষ্টি হতে দেখলে বলতেন-
اللَّهُمَّ صَيِّبًا نَافِعًا
উচ্চারণ :‘আল্লাহুম্মা সাইয়্যেবান নাফিআ।'
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি মুষলধারায় যে বৃষ্টি দিচ্ছেন, তা যেন আমাদের জন্য উপকারি হয়।’ (বুখারি ১০৩২)
বৃষ্টি চলমান সময়ে দোয়া কবুল হয়। তাই এ সময়টি দোয়ার জন্য লুফে নেওয়া সুন্নত। বৃষ্টির সময় এই দোয়া পড়লে মনের আশা পূরণ হয়।
হাদিসে এসেছে- হজরত সাহল বিন সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘দুই সময়ের দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না কিংবা (তিনি বলেছেন), খুব কমই ফেরত দেওয়া হয়- আজানের সময় দোয়া এবং রণাঙ্গণে শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার সময়ের দোয়া। অন্য বর্ণনা মতে, বৃষ্টির সময়ের দোয়া। (আবু দাউদ ২৫৪০)
হজরত জায়েদ ইবনে খালেদ জুহানি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুদাইবিয়ায় রাতে বৃষ্টির পর আমাদের নিয়ে নামাজ পড়লেন। নামাজ শেষে তিনি লোকজনের মুখোমুখি হলেন। তিনি বললেন, তোমরা কি জানো তোমাদের রব কী বলেছেন?
তারা বললেন, আল্লাহ ও তার রাসুলই ভালো জানেন। তিনি বলেছেন, আমার বান্দাদের কেউ আমার প্রতি ঈমান নিয়ে আর কেউ কেউ আমাকে অস্বীকার করে প্রভাতে উপনীত হয়েছে। যে বলেছে, বিফাদলিল্লাহি ওয়া রহমাতিহি তথা আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়ায় আমরা বৃষ্টিপ্রাপ্ত হয়েছি। ফলে সে আমার প্রতি ঈমান আর তারকার প্রতি কুফরি দেখিয়েছে। আর যে বলেছে, অমুক অমুক তারকার কারণে, সে আমার প্রতি অস্বীকারকারী এবং তারকার প্রতি ঈমানদার।' (বুখারি ৮৪৬; মুসলিম ১৫)
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদিন জুমার দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুতবা দেওয়া অবস্থায় এক সাহাবি মসজিদে প্রবেশ করে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! জীবজন্তু মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে, পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে, আল্লাহ তাআলার কাছে আমাদের জন্য বৃষ্টি প্রার্থনা করুন। তখনই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই হাত সম্প্রসারিত করে দোয়া করলেন-
اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا، اللَّهُمَّ عَلَى الآكَامِ وَالْجِبَالِ وَالآجَامِ وَالظِّرَابِ وَالأَوْدِيَةِ وَمَنَابِتِ الشَّجَرِ
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়া লা আলাইনা; আল্লাহুম্মা আলাল আকামি ওয়াল ঝিবালি ওয়াল আঝামি ওয়াজ জিরাবি ওয়াল আওদিয়াতি ওয়া মানাবিতিশ শাঝারি।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাদের আশে পাশে, আমাদের উপর নয়। হে আল্লাহ! টিলা, মালভূমি, উপত্যকায় এবং বনভূমিতে বর্ষণ করুন।’ (বুখারি ৯৩৩; মুসলিম ৮৯৭)
যখনই বৃষ্টি শুরু হয় তখনই দোয়া করা উচিত। কারণ বৃষ্টি চলাকালীন দোয়া কবুল হয়। এই সময় দোয়া করাও সুন্নত। বিখ্যাত হাদিস গ্রন্থ আবু দাউদ শরিফের ২৫৪০ নম্বর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত সাহল বিন সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, দুই সময়ের দোয়া কখনো ফেরত দেওয়া হয় না। কিংবা তিনি এভাবে বলেছেন যে, দু’টি সময় রয়েছে, যখন দোয়া করলে তা খুব কমই ফেরত দেয়া হয়-
(১) আজানের সময় যে দোয়া করা হয়।
(২) বৃষ্টি চলাকালীন সময়ে যে দোয়া করা হয়।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রণাঙ্গণে শত্রুর মুখোমুখি হওয়া কালের দোয়া। (আবু দাউদ: ২৫৪০)
সুতরাং একজন খাঁটি মুসলিম হিসেবে আমাদের উচিত যখনই বৃষ্টি নামবে তখন কোনো প্রকারের হা-হুতাশ না করে দোয়া করা। আশা করা যায় মহান আল্লাহ এই দোয়া কবুল করবেন।