বেতন বৃদ্ধিসহ নানা দাবিতে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি পালন করেছেন ঢাকার সাভারের আশুলিয়ার পোশাক শ্রমিকরা। এতে আশুলিয়ায় ৫১টি পোশাক কারখানা বন্ধ রয়েছে।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম কারখানা বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বকেয়া বেতনের দাবিতে নরসিংহপুর এলাকার একটি কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করার ঘটনায় টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয় এবং প্রায় দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। এতে করে দীর্ঘ ভোগান্তিতে পড়ে সড়কটি ব্যবহারকারী পথচারী এবং বাস যাত্রীরা। বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে শ্রমিকরা সড়ক ছেড়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
শিল্পাঞ্চল সাভার-আশুলিয়ায় আজও নতুন করে ৫২টি পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১৩ এর ১ ধারা অনুযায়ী বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ৪৩টি কারখানা এবং সাধারণ ছুটি দেওয়া হয়েছে নয়টি কারখানায়।
সাভার আশুলিয়ার ১ হাজার ৮৬৩টি কারখানার মধ্যে ৫১টি কারখানা ছাড়া বাকি কারখানাগুলোর উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে বলে জানায় শিল্প পুলিশ।
শিল্পাঞ্চল পুলিশের দেওয়া তথ্য বলছে, শ্রমিক অসন্তোষ এবং আন্দোলনের ফলে যাতে কারখানার কোনো ধরনের ক্ষতিসাধন কিংবা অনিষ্ঠ না হয় সে কারণে নিরাপত্তার দিক বিবেচনায় রেখে ৫২টি কারখানা উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। তবে সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
শিল্প পুলিশ ১ এর পুলিশ সুপার (এসপি) সারোয়ার আলম বলেন, ১৩ (১) ধারায় ৪৩টি কারখানা বন্ধ রয়েছে। আর ৯টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য কারখানাগুলোর কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। পাশাপাশি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যৌথবাহিনীর টহল অব্যাহত রয়েছে।
বিজিএমইএ জানিয়েছে, আজ আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে তাদের মোট ৩৯টি কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ আছে।
এর মধ্যে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এর ১৩(১) ধারার (নো ওয়ার্ক, নো পে) ভিত্তিতে ২৭টি এবং কারখানা খোলা রাখার পর কাজ বন্ধ বা ছুটি আছে ১২টি কারখানায়।
শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় বন্ধ কারখানাগুলোর মধ্যে রয়েছে, এমএএম গার্মেন্টস লিমিটেড, নাসা গ্রুপ, নিউএইজ গ্রুপ, অনন্ত গ্রুপ, স্টারলিং স্টাইল, স্টারলিং ক্রিয়েশন, স্টারলিং অ্যাপারেলস, ব্যান্ডো ডিজাইন, এনভয় গ্রুপ, ভিনটেজ, জেনারেশন নেক্সটসহ ২৭টি কারখানা।
স্ববেতনে ছুটি আছে বা কাজ বন্ধ আছে কিংবা শ্রমিকরা চলে গেছে এমন কারখানার মধ্যে রয়েছে, আল মুসলিম অ্যাপারেলস, ট্রাউজার লাইন লিমিটেড, ফ্যাশন ফোরাম লিমিটেড, সাফা সোয়েটার, দ্য রোজ ড্রেসেস, প্রীতি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, এফএনএফ ট্রেন্ড ফ্যাশনসহ ১২টি কারখানা।
সূত্রটি জানায়, আশুলিয়া এলাকায় আজ মোট চালু কারখানার সংখ্যা ২৭২টি, আগস্ট মাসের বেতন পরিশোধ করেছে ২৬৭টি কারখানা এবং আগস্ট মাসের বেতন দিতে পারেনি ৫টি কারখানা।
এর আগে গতকাল বিজিএমইএ জানিয়েছিল, গতকাল আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে তাদের মোট ২৭টি কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এর মধ্যে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এর ১৩(১) ধারার (নো ওয়ার্ক, নো পে) ভিত্তিতে বন্ধ ছিল ১৩টি এবং কারখানা খোলা রাখার পর কাজ বন্ধ আছে কিংবা স্ববেতনে ছুটি আছে, এমন কারখানা ছিল ১৪টি।
শিল্প সূত্র জানায়, মূলত বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের উভয় পাশে যে কারখানাগুলো অবস্থিত, বিশেষ করে নরসিংহপুর ও তার আশেপাশে, এসব কারখানা আজ বন্ধ রয়েছে।
শিল্প পুলিশের ভাষ্যমতে, মূলত গতকাল শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিকরা নতুন করে ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা করাসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন শুরু করলে গতকালই শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে বেশ কিছু কারখানা কর্তৃপক্ষ কারখানা ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। অনেক কারখানার শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে কারখানা থেকে বেরিয়ে যান।