সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জাল টাকার ছরাছরি বেড়েছে। এতে করে প্রতারিত হচ্ছেন বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। বিষয়টি নজরে আসলে এই বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায় র্যাব।
গোয়েন্দা রিপোর্টের তথ্য মতে র্যাব জানতে পারে, একটি প্রতারক চক্র দীর্ঘ দিন যাবত জাল নোট তৈরি করে রাজধানী ঢাকা'সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করে আসছে। এই চক্রটি জাল নোটের ব্যবসা করে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। র্যাব ওই প্রতারক চক্রের সদস্যদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় র্যাব-১০, লালবাগ ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন সুভাঢ্যা এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযানে সেখান থেকে ২ জন জাল টাকা প্রস্তুতকারীকে গ্রেফতার করে র্যাব। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের নাম মোঃ গিয়াস উদ্দিন (২৭), ও রেদোয়ান শেখ মুমিন (১৯), বলে জানা যায়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১০০ টাকার জাল নোট ২৮০০টি (১০০ঢ২৮০০)= ২,৮০,০০০/- (দুই লক্ষ আশি হাজার) টাকা ও ৫০ টাকার জাল নোট ৬০০ টি (৫০ঢ৬০০)= ৩০,০০০/- (ত্রিশ হাজার) টাকা মোট (২,৮০,০০০+৩০,০০০) = ৩,১০,০০০/- (তিন লক্ষ দশ হাজার) টাকা, ১টি ল্যাপটপ, ১টি প্রিন্টার, ১টি কি-বোর্ড, ১টি মাউস, ০৪টি ক্যাবল, ১টি রাউটার, ১টি হেয়ার ড্রায়ার, ১টি পাম্প এন্ড স্প্রে, ১টি ফয়েল রোল, ৮ বোতল বিভিন্ন রং এর কালি, ১টি ষ্টীলের স্কেল, ২টি কার্টার, ৩টি কার্টিং ফ্রেম, ১০০ পাতা কাগজ, নগদ ২,০০০/- টাকা, পাকিস্থানী ৫০ রুপি ও ৩টি মোবাইল ফোন উদ্ধার এবং ০১টি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়।
আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা একটি সংঘবদ্ধ জাল টাকা প্রস্তুত ও সরবরাহকারী চক্র। তারা ইউটিউব ও গুগলসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে জাল টাকা তৈরির সার্বিক দক্ষতা অর্জন করে। অতঃপর তারা উচ্চভিলাষী অভিপ্রায় ও কম সময়ে অল্প পুঁজিতে অধিক অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে জাল টাকা প্রস্তুত করার পরিকল্পনা করে। পরবর্তীতে তারা জাল টাকা তৈরির প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ক্রয় করে এবং জাল টাকা সরবরাহের জন্য জাল টাকা তৈরি ও সরবরাহকারী বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পেইজ ও গ্রæপে সংযুক্ত হয়। অতঃপর ফেইসবুক গ্রæপ হতে কমেন্ট দেখে তাদের সাথে মেসেঞ্জারে চ্যাটিং এর মাধ্যমে ক্লায়েন্ট তৈরি করে। জাল টাকা সরবরাহের ক্ষেত্রে তারা অগ্রীম টাকা নিয়ে নিত এবং পরবর্তীতে তাদের সুবিধাজনক স্থানে জাল নোটগুলো সরবরাহ করতো।
জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, চক্রটি বিভিন্ন সময়ে রাজধানী ঢাকার কেরাণীগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, শ্যামপুর, ডেমরা এবং নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তৈরিকৃত জাল নোট সরবরাহ করত। তারা প্রতি ১ লক্ষ টাকা মূল্যের জাল নোট ১৫-২০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করত। বিশেষ করে মাছ বাজার, লঞ্চ ঘাট, বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন মার্কেটে নানান কৌশল অবলম্বন করে জাল নোট সরবরাহ করতো তারা।
এছাড়াও অধিক জন-সমাগম অনুষ্ঠান বিশেষ করে বিভিন্ন মেলা, উৎসব, পূজা ও কোরবানীর পশুর হাট উপলক্ষে বিপুল পরিমান জাল নোট ছাপিয়ে ছিল বলে তথ্য দেয় আটককৃতরা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে জালনোট প্রিন্টিং এর সময় কাগজের অব্যবহৃত ও নষ্ট অংশগুলো পুড়িয় ফেলত। এ পর্যন্ত তারা বিভিন্ন সময়ে প্রায় ১-২ কোটি টাকা মূল্যমানের জাল নোটের ব্যবসা করেছে বলে স্বীকার করেছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করত সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।