রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: চকরিয়ায় ট্রাকের ধাক্কায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত   নবনিযুক্ত সিইসি ও ইসিদের শপথ দুপুরে   দারুণ শুরুর পর হতাশার দিন বাংলাদেশের   আগামী দুই মাস সূর্য দেখবেন না এই শহরের বাসিন্দারা   সাবেক প্রধান বিচারপতি রুহুল আমিন মারা গেছেন    ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়   দুই দিনের ব্যবধানে ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
পূর্বাচল ক্লাব গিলে খেয়েছে গাজী-নীলা-শাহ আলম ত্রয়ী!
ইসি মিটিংয়ে সদস্যদের ক্ষোভ, বিগত ১৫ বছরে ১৩৪ কোটি টাকা লুটপাট
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১:২৫ এএম আপডেট: ১৬.০৯.২০২৪ ১:৩২ এএম | অনলাইন সংস্করণ

পূর্বাচল ক্লাবের ইসি মিটিংয়ে সাধারণ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন

সৈয়দা ফেরদৌসী আলম (নীলা) ও শাহ আলম ফটিক দম্পত্তির পকেটস্থ পূর্বাচল ক্লাবের ১৩৪ কোটি টাকা। যদিও এই দম্পত্তি ক্লাবের অর্থ লুটপাটের জন্য বরাবরই দায়ী করে আসছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট গোলাম দস্তগীর গাজীকে। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, এই তিনে মিলে গোলাম  দস্তগীর (প্রেসিডেন্ট) নীলা (মেম্বার এডমিন) ও শাহ আলম (মেম্বার ডেভলপমেন্ট) সদস্য ফি ছাড়াও ক্লাবের নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও কার্যক্রম পরিচালনার নাম করে বিগত ১৫ বছরে এই ১৩৪ কোটি টাকা লুটপাট করেছে। গত শুক্রবার বিকেলে পূর্বাচল ক্লাবের অডিটরিয়ামে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ইসি কমিটির গোপন বৈঠকের খবর পেয়ে সাধারণ সদস্যরা উপস্থিত হয়ে ক্লাবের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন।

বিকেল চারটায় মিটিংয়ের আগে পরে সাধারণ সদস্যরা ভোরের পাতার প্রতিনিধির কাছে গাজী-নীলা-শাহ আলম ত্রয়ীর বিগত ১৫ বছরের অর্থ লুটপাট, দুর্নীতি আর স্বেচ্ছাচারিতার ভয়াল চিত্র তুলে ধরেন। এই ত্রয়ীর ভয়ে এতদিন কেউই মুখ খোলার সাহস পায়নি।

সম্প্রতি গোলাম দস্তগীর গাজী গ্রেফতার হলে ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পেয়েছেন মোজহারুল হক শহীদ। তাঁর বক্তব্যের শুরুতে রাজউকের সম্পুর্ন টাকা পরিশোধের পরও বিগত ১৫ বছরে পার্শ্ববর্তী ক্যাডেট কলেজ ক্লাবের জমি রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলেও, পূর্বাচল ক্লাবের ১৪৭.১৩ কাঠা জমি রেজিস্ট্রেশন না হবার ব্যাখ্যা শুরু করলে মিটিংয়ে হৈচৈ বেঁধে যায়। নানা হট্টগোল আর সাধারণ সদস্যের তোপের মুখে ইসি সদস্য গোলাম সারওয়ার সদস্যদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। নির্মম সত্য হলো, ক্লাবের জমি রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করা হয় গত ৮ মে ২০২৩ সালে। ক্লাবের সদস্য সিনিয়র এডভোকেট রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ কয়েকজন জমি রেজিস্ট্রেশনের দায়িত্ব পালন করতে গেলেও তা আটকে যায় তিনটি কারণে। 

কারণগুলো হচ্ছে, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি-বেলা'র মামলা, পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পে হাইকোর্টের কিছু বিধি-বিধান এবং ক্লাবের জমি রেজিস্ট্রেশনের সঙ্গে দুর্নীতিবাজ সাবেক প্রেসিডেন্ট গাজীর পূর্বাচলের ৬ বিঘার হাসপাতালের জমি রেজিস্ট্রেশনকে জুড়ে দেয়া। প্রথম দুটি বাধা অতিক্রম করা সম্ভব হলেও গাজীর হাসপাতালের জমির রেজিস্ট্রেশন জুড়ে দেওয়ায় ক্লাবের জমি রেজিস্ট্রেশন আর সফলতার মুখ দেখেনি। ক্লাবের জমি রেজিস্ট্রেশন চরমভাবে ব্যর্থ হলেও গাজী-নীলা-শাহ আলম চক্র গোপনে সদস্য সংগ্রহের মাধ্যমে অর্থ লুটপাট অব্যাহত রাখে। গাজীর ছত্রছায়ায় অর্থ লুটপাটের দায়িত্ব পালন করে যায় নীলা-শাহ আলম দম্পতি। রাজধানীর জোয়ার সাহারার এই দম্পতির নিজ বাড়ির নিচ তলায় এবং প্রগতি সরণী রোডে গাড়ির শোরুম টোকিও মটরসে পূর্বাচল ক্লাবের বিকল্প অফিস বানানো হয়।

এই দুই স্থানে চলে অর্থ সংগ্রহ। বর্তমানে সর্বমোট ৮৭০ জন সদস্যের প্রায় সকল সদস্যের টাকার লেনদেন  হয় এই দুই স্থানে। সদস্য প্রতি ১৫/২০ লাখ সংগ্রহ করে এদেরকে মানি রিসিট দেওয়া হয়েছে ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। বাকী টাকা পকেটে পুরেছেন গাজী-নীলা-শাহ আলম চক্র। এজন্য দুদুকের তদন্ত দাবি করেন সদস্যরা। ২০২০ সালের পর আর কোন অডিটও হয়নি। ভোরের পাতার প্রতিনিধির কাছে অনেক সদস্য তাদের কাছে এই লুটপাটের তথ্য প্রমাণ রয়েছে বলে জানান। এককথায় এই চক্রটি পূর্বাচল ক্লাবকে গিলে খেয়েছে প্রতিনিয়ত। ক্লাবের জমি রেজিস্ট্রেশনটাও করার নূন্যতম দায়িত্ব পালন করেনি। পার্শ্ববর্তী ক্যাডেট কলেজ ক্লাব পারলো, পূর্বাচল ক্লাব কেন পারলো না- এই প্রশ্নে এখন সব সদস্যের মাথায় হাত। মিটিংয়ে ক্ষুব্ধ সদস্যরা ইসি সদস্যদের দিকে ক্লাবের জমি রেজিস্ট্রেশন না হবার তীর ছুঁড়েছেন বারবার। অন্যদিকে এই চক্রটি মেমোরেন্ডাম আর্টিকেলে ২০৩০ সাল পর্যন্ত কমিটি থেকে তাদের সরানো যাবে না বলে আইনসিদ্ধ করে নিয়েছে, যদিও এই বিষয়টি সংশোধনের সুপরামর্শ দিয়েছেন এডভোকেট কাজল।

আজীবন সদস্য আনোয়ার হোসেনও তার বক্তব্যে ক্লাবের জমি রেজিস্ট্রেশন না হবার দায় সাবেক প্রেসিডেন্ট গাজী এবং নীলা-শাহ আলম দম্পত্তির ওপর ছাপিয়েছেন। তিনি বলেন, এই চক্রটি টেনিস কোর্টের জন্য মাত্র ৫ লাখ টাকা দেয়নি। এদের প্রত্যক্ষ অসহযোগিতায় ক্লাবের বার, টেনিস কোর্ট, রেস্টুরেন্ট এবং পুল আজ পর্যন্ত হয়নি। ২০২০ সালের পর অডিট না হওয়ায় বারের লাইসেন্স আটকে যায়। 

ক্লাবের সদস্য সাবেক ক্রিকেটার সেলিম সাহেদ বলেন, এই ক্লাবের একাউন্টসের কোন ঠিক-ঠিকানা নেই। আজ অবধি একবারের জন্যও এজিএম অনুষ্ঠিত হয়নি। সদস্য লুৎফর আরেফিন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট কিভাবে দায়িত্ব নিলেন তার ব্যাখ্যা চান মিটিংয়ে। কারন গোলাম দস্তগীর গাজী কারাগারে বন্দী। তিনি এখনো পদত্যাগ করেননি। অবশ্য ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। 

সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবসায়ী আজিজ আল কায়সার টিটু তাঁর বক্তব্যে সিঙ্গাপুরের শত বছরের একটি পুরনো কান্ট্রি ক্লাবের আদলে পূর্বাচল ক্লাবকে গড়ে তোলার স্বপ্নের কথা বলেন। সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে তিনি ক্লাবের দায়িত্ব নিতেও কুণ্ঠাবোধ করবেন না বলে মত দেন। 

মিটিংয়ে অচিরেই অডিট ও এজিএম সম্পন্ন করা এবং জমি রেজিস্ট্রেশনের জন্য ক্লাব সদস্যদের মধ্যে থেকে একটি ল'ইয়ার্স প্যানেল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। 

মিটিংয়ে পূর্বাচল ক্লাব মেম্বার্স শিরোনামে একটি হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপ খোলার জন্য ক্লাব সদস্য আজিজুর রহমানের প্রশংসা করা হয়। এই গ্রুপেই ইসি কমিটির গোপন বৈঠকের কথা ফাঁস হয়ে গেলে প্রথমবারের মতো সাধারণ সদস্যরা উপস্থিত হয়ে নানা অনিয়ম তুলে ধরেন। এজন্য ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট শহিদ একজন সদস্যের উপর চড়াও হন এবং কৈফিয়ত তলব করেন। 

মিটিংয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের সমালোচনা করে একজন সদস্য বলেন, মিটিংয়ে এতো সদস্য অংশগ্রহণ করলে আপ্যায়ন বিল কে পরিশোধ করবে তার জবাব চেয়েছিলেন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট। তখন উপস্থিত সদস্যরা বলেন, আমরাই আমাদের আপ্যায়ন বিল পরিশোধ করবো। যদিও পরবর্তীতে ক্লাবের পক্ষ থেকেই আপ্যায়ন করানো হয়েছিল। মিটিংয়ে চূড়ান্তভাবে গাজী-নীলা-শাহ আলমের বাগান বাড়ি থেকে সকল সদস্যদের পূর্বাচল ক্লাবে রূপান্তর করার পরামর্শ দেয়া হয়। 

অনেক সদস্য মিটিংয়ের বাইরে আড্ডায় ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট শহীদকে গাজী-নীলা-শাহ আলমের স্বার্থ চরিতার্থ করেছেন বলেও মত দেন। যদিও তারা ধারণা করেন, এই মিটিংয়ের পর তিনি নিরপেক্ষতা বজায় রেখেই ক্লাব পরিচালনা করবেন। তবে প্রায় সকল সদস্য ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছেন। 

নির্বাচিত কমিটির কাছেই ক্ষমতা হস্তান্তর করে ক্লাব পরিচালনার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করে সদস্য রুবাইয়াৎ ঠাকুর বলেন, নির্বাচন ছাড়া ক্লাবের সুস্থ পরিবেশ কখোনোই ফিরে আসবে না। সদস্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন খুজিস্থা নূর-ই নাহরীন, প্রফেসর নিজাম, সৈয়দ বাবু আলী, মৃধা, লুৎফর আরেফিন প্রমুখ।

ইসি সদস্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন একেএম মিজানুর রহমান, সৈয়দ এ.কিউ.এম জাহেদ, এহতেশামুল হক তরু প্রমুখ। মিটিংয়ে একই ইসি কমিটিতে দুই ভাই শহীদ- এহতেশামুল ও স্বামী-স্ত্রী নীলা-শাহ আলমের থাকা নিয়েও সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। একইসঙ্গে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন সদস্য গ্রহণ পুরোপুরি স্থগিত রাখার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। মিটিংয়ে প্রায় শতাধিক সাধারণ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://dailyvorerpata.com/ad/af.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]