ভয়ঙ্কর অভিযোগ! নির্বাচনে আ.লীগের রহমানের পক্ষে ডিএমপির গাড়ি ব্যবহার করেন আছাদুজ্জামান মিয়া!
গেল জাতীয় নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে সরকারি গাড়ির ব্যবহার! ফরিদপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমানের পক্ষে এ গাড়ি ব্যবহার করেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। অবশ্য, অবসরে যাওয়ার পরও চার বছর ধরে ডিএমপির ওই গাড়ি নিজের কব্জায় রেখেছেন সম্প্রতি পলাতক অবস্থায় গ্রেপ্তার হওয়া আছাদুজ্জামান মিয়া।
পুলিশের চাকরিজীবনে আছাদুজ্জামান মিয়া নানান সময় আলোচিত-সমালোচিত। গত জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুর রহমানের পক্ষে প্রচারণার সময় তিনি ডিএমপির লোগোযুক্ত (ঢাকা মেট্রো-গ ২৮-৭৪৩৬ নম্বর প্লেট) গাড়ি ব্যবহার করেন। ২০১৯ সালে ৩ সেপ্টেম্বর ১৫০০ সিসির গাড়িটি পুলিশের নামে রেজিস্ট্রেশন হয়।
ওই সময় সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হয় এ ঘটনায়। কারণ, বিধি অনুযায়ী, কোনো প্রার্থীর পক্ষে সরকারি সুযোগ-সুবিধা বা গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ নেই। অথচ অবলীলায় সেই কাজটি করেছেন আছাদুজ্জামান মিয়া।
তাই প্রশ্ন আসে, পুলিশের নামে নিবন্ধিত গাড়িটি ব্যক্তিগতভাবে কীভাবে ব্যবহার করছিলেন আছাদুজ্জামান? এছাড়া নানা সময় ওই গাড়ি চড়ে প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুরো নির্বাচনী এলাকা বিপর্যস্ত করে রাখার অভিযোগও উঠেছিল তার বিরুদ্ধে।
২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর অবসরে যান অতিরিক্ত আইজিপি আছাদুজ্জামান মিয়া। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়া পর্যন্ত অফিসিয়াল সুযোগ-সুবিধাকে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন তিনি।
তবে শেষ দেখতে হচ্ছে সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি আছাদুজ্জামান মিয়াকে। ২০১৫-১৬ সময়ে যে আন্দোলন হয়েছিল, বিভিন্ন থানায় যত হত্যা, গুম, এনকাউন্টারের নামে ক্রসফায়ার হয়েছে, অভিযোগ রয়েছে সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামানের সেসবের অন্যতম হোতা।
ঢাকার খিলগাঁও থানা ছাত্রদল নেতা জনি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে সাতদিনের পুলিশি রিমান্ডে আছেন আছাদুজ্জামান মিয়া। গত ১১ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকার মহাখালী থেকে র্যা ব তাকে গ্রেপ্তার করে। পরের দিন তাকে জনি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।
এদিকে আছাদুজ্জামান মিয়া ও তার স্ত্রী, দুই ছেলে-মেয়ে, শ্যালক ও মেয়ের জামাইয়ের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য চেয়ে সরকারি-বেসরকারি ৩০টি প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এর আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর তার ব্যাংক হিসাব ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হিসাব পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে জব্দের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
গত ১৮ আগস্ট কমিশন সভায় আছাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওযার পর ২৮ আগস্ট উপ-পরিচালক মো. হুমায়ুন কবীরকে প্রধান করে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করে দুদক। কমিটির আরেক সদস্য হলেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আলিয়াজ হোসেন।
আছাদুজ্জামান মিয়া ও তার পরিবারের স্থাবর অস্থাবর সম্পদের তথ্য চেয়ে সরকারি বেসরকারি ৩০ প্রতিষ্ঠানে এ চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, ফরিদপুর, কক্সবাজার, ময়মনসিংহ ৭ জেলার সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয় ও ভূমি অফিস; ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, রাজউক, নিবন্ধন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক, ৬১টি রাষ্ট্রায়ত্ত ও তফসীলি ব্যাংক, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়ে তথ্য চেয়েছে দুদক। গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ক্রমান্বয়ে এসব প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছে দুদকের সংশ্লিষ্ট টিম।
দুদক সূত্র জানায়, ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার স্ত্রীর নামে ঢাকায় একটি বাড়ি ও দুটি ফ্ল্যাট এবং মেয়ের নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এছাড়া ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে তার স্ত্রী ও সন্তানদের নামে ৬৭ শতক জমি রয়েছে। এই তিন জেলায় তার পরিবারের সদস্যদের নামে রয়েছে আরও ১৬৬ শতক জমি।
অনুসন্ধানে আরও উঠে আসে, রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এল ব্লকের লেন-১-এ ১৬৬ এবং ১৬৭ নম্বরে ১০ কাঠা জমির ওপর ছয়তলা একটি বাড়ি রয়েছে। এছাড়া গাজীপুরের কালীগঞ্জের চাঁদখোলা মৌজায় ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে সর্বমোট ১০৬ শতক জমি কেনা হয় আছাদুজ্জামানের স্ত্রী আফরোজা জামানের নামে।
এছাড়া ২০১৮ সালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কৈয়ামসাইল-কায়েতপাড়া মৌজায় আফরোজার নামে ২৮ শতক জমি কেনা হয়। একই বছর একই মৌজায় আরও ৩২ শতক জমি কেনা এবং পূর্বাচলের নিউ টাউনের ১ নম্বর সেক্টরের ৪০৬/বি রোডে ১০ কাঠা জমি রয়েছে। এছাড়া পরিবারের সদস্যদের নামে রাজধানীর আফতাবনগরে ৩ নম্বর সেক্টরের এইচ ব্লকের ৮ নম্বর রোডে ২৬ নং প্লটে ২১ কাঠা জমি এবং নিকুঞ্জ-১-এ ছোট ছেলের নামে একটি বাড়ি রয়েছে বলে দুদকের অনুসন্ধানে তথ্য এসেছে।
উল্লেখ্য, ৮৫ ব্যাচের পুলিশ কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান মিয়া ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি ডিএমপি কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন এবং দায়িত্ব পালন শেষে অবসরে যান। পরে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে তাকে জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত সেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেয় সরকার। ২০২২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর এই পদে তার ৩ বছরের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়।