তীব্র গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বেড়েছে লোডশেডিং। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জেলার জনজীবন। লোডশেডিংয়ের কারণে এ অঞ্চলের শিল্প-কারখানাগুলোতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে চাল উৎপাদনে প্রভাব পড়েছে বেশি। বাণিজ্যিক উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি গরমে হাঁসফাঁস করছেন সাধারণ গ্রাহকরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রলের সঙ্গে ক্ষোভও ঝাড়ছেন অনেকে। এছাড়া চালকল মালিকদের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, গত কয়েকদিনে এই অঞ্চলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা ৪৫ শতাংশে পৌঁছেছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে আসায় তারা লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছেন। গরম না কমলে সহসাই এই অবস্থার অবসান হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেও জানায় বিদ্যুৎ বিভাগ।
বিদ্যুৎ বিভাগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বকেয়া থাকায় ভারতের আদানি গ্রুপ জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে গড়িমসি করছে। ফলে সারা দেশেই বিদ্যুৎসংকট চলছে। বিদ্যুৎসংকটে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ বেশি পরিমাণে লোডশেডিংয়ের শিকার হচ্ছেন।
লোডশেডিংয়ের কারণে চরম বিপাকে পড়েছেন আবাসিক এলাকার বাসিন্দাসহ বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায় ব্যাঘাত ঘটায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকে। এদিকে লাগামহীন লোডশেডিং চলছে পল্লী বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনেও। প্রতিষ্ঠানটির আওতাধীন এলাকার গ্রাহকরা রাতে মাত্র কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। ফলে শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও গ্রাহকরা বিরক্তি প্রকাশ করছেন। এ অবস্থায় দ্রুত বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দাবি জানিয়েছেন গ্রাহকরা।
বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে বিরক্তি প্রকাশ করছেন গৃহিণীরাও। গরমে ঘরে অবস্থান করাও তাদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ছে। চার্জার ফ্যান দিয়ে ঘাটতি পূরণ করতে পারছেন না।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার গৃহিণী ইরিন আক্তার বলেন, বিদুৎতের যন্ত্রণায় পাগল হওয়ার অবস্থা। বাচ্চারাও পড়াশোনা করতে পারছেনা। তীব্র গরমে স্কুলে গিয়েও অস্বস্তি। ছেলেটার জন্য (চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র) চার্জার ফ্যান কিনতে গিয়েও পাওয়া যায়নি।
চাল শিল্পের প্রতিষ্ঠান হক অটো রাইস মিলের মালিক ও চালকল মালিক সমিতির সভাপতি মো. হারুন অর রশীদ বলেন, দিনের অর্ধেক সময়ই বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না তারা। বিদ্যুৎ না থাকায় উৎপাদন কমেছে, খরচও কয়েকগুণ বেড়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় তাঁরা বেকায়দায় রয়েছে।
স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ অর্ধেকে নেমে এসেছে। এর ফলে প্রতিঘণ্টায় লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। বরাদ্দ কম হওয়ার কারণ হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে উৎপাদন ঘাটতির কথা বলছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) চাঁপাইনবাবগঞ্জ কার্যালয় জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার জন্য বিদ্যুৎতের মোট চাহিদা প্রায় ৩৩ মেগাওয়াট। কিন্তু বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ২০ থেকে ২২ মেগাওয়াট। চাহিদার বিপরীতে কম বিদ্যুৎ পাওয়ায় ঘাটতি পূরণে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
নেসকো, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী আলিউল আজিম বলেন, চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ অর্ধেক। ফলে লোডশেডিং চলছে। সহসাই পরিস্থিতির উন্নতি হবে কি না, তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে পারবেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. ছানোয়ার হোসেন বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমাদের প্রায় ৩ লাখ ৪৬ হাজার গ্রাহক। আমরাও চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম পাচ্ছি। ফলে আমাদের আওতাধীন সঞ্চালন লাইনে ৪০ শতাংশ লোডশেডিং চলছে। পরিস্থিতি উন্নতির বিষয়ে উৎপাদন-সংশ্লিষ্টরা বলতে পারবেন বলে জানান তিনি।