পোশাকশিল্প কারখানায় চলমান অস্থিরতা নিরসনে দ্রুতই মালিক-শ্রমিক উভয়পক্ষের আশ্বাস পেয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা। আগামীকাল রোববার দেশের সব তৈরি পোশাক শিল্প কারখানা খোলা থাকবে। কোনও কারখানায় অস্থিরতা তৈরি হলে বিশেষ ব্যবস্থা নেবে সরকার।
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) নুরুল কাদির অডিটোরিয়ামে আশুলিয়ায় তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর চলমান সংকট ও উত্তরণের পথ নিয়ে মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জাননো হয়।
সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তা এবং শ্রমিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের দীর্ঘ সময়ে মানুষ তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে পারেনি, যে বঞ্চনার শিকার হয়েছে। আমরা দেখেছি শ্রমিকদের আন্দোলনেও গুলি করা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে। শ্রমিকদের দাবিগুলো যে কথা বলে সমাধান করা যায়, এটা আমরা দেখিনি। সেখান থেকে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি হওয়ায় শ্রমিকরাও তাদের বঞ্চনার কথাগুলো বলছেন। আমরা সেটাকে অবশ্যই স্বাগত জানাই।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা শ্রম সংক্রান্ত অভিযোগ পর্যবেক্ষণ কমিটি করেছি। সেই কমিটি গতকাল থেকে কাজ শুরু করেছে। একটি হটলাইন নম্বরও চালু করা হয়েছে। সেখানে আমরা অভিযোগ পাচ্ছি। সেই অভিযোগগুলোকে চিহ্নিত করতে কমিটি কাজ করে যাবে, মন্ত্রণালয়ও কাজ করবে। শ্রমিক ভাইদের প্রতি আমার আহ্বান, একটা নতুন সরকার এসেছে, একটা পরিবর্তন এসেছে, আমাদের ওপর আপনারা ভরসা রাখুন। আপনারা পর্যবেক্ষণ কমিটিতে আপনাদের অভিযোগগুলো দিন। আপনাদের যে ন্যায্য দাবিগুলো আছে সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ করে আমরা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সেটির সমাধানের ব্যবস্থা করবো। এতটুকু ভরসা আমাদের করতে হবে।
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, সবক্ষেত্রে আমরা ষড়যন্ত্র খুঁজতে গেলে হবে না। কিছু ক্ষেত্রে বাস্তবিক সমস্যা আছে। এগুলো সমাধান করতে হবে। অনেক জায়গায় বেতন আটকে আছে। এতদিন একটা চর্চা ছিল, টাকা থাকা সত্ত্বেও সরকারের দিকে ঋণের জন্য তাকিয়ে থাকা। শ্রমিক, মালিক, সরকার সবাই মিলে সমস্যাগুলো সমাধান করবো। সবাই মিলে সামনে এগিয়ে যাবো।
তিনি আরও বলেন, আমরা ইতোমধ্যে টিসিবির সঙ্গে কথা বলছি। শ্রমিকরা যে এলাকায় আছেন সেখানে টিসিবির কার্যক্রম কীভাবে বৃদ্ধি করা যায়, শ্রমিকদের কার্ড করে দিয়ে রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করা যায়, আমরা সেই উদ্যোগ নিয়েছি। শ্রম আইনের মধ্য থেকে ট্রেড ইউনিয়ন করার যতটা সুযোগ আছে, তা নিশ্চিত করবে সরকার। এ ছাড়া গত বছরের শেষ দিকে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনের সময় যেসব মামলা হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, গত ১৫ বছরে যে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল, অনেক প্রতিষ্ঠানে নির্বাচন হয়নি। রাজনীতির নামে এক ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করে মানুষের মধ্যে ভয় ধরানো হয়েছিল। আজকের আলোচনার উদ্দেশ্য যেন শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা হয়। ব্যবসা যেমন চালাতে হবে শ্রমিকদের অধিকারও রক্ষা করতে হবে। এটার সমন্বয়ের জন্যই আমরা সবাই এখানে উপস্থিত হয়েছি। একসঙ্গে কাজ করার কালচার যেটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, সেটা আবার চালু করতে হবে। মালিক পক্ষ বলেছে ব্যাংকের কী কী সমস্যা আছে, আমরা সমাধানে কাজ করবো।
তিনি আরও বলেন, আগামীকাল দেশের সব তৈরি পোশাক শিল্প কারখানা খোলা থাকবে। কোনও কারখানায় অস্থিরতা তৈরি হলে বিশেষ ব্যবস্থা নেবে সরকার। দেশের অর্থনীতিকে বিপদে ফেলতে কেউ যদি কারখানা বন্ধ রাখার অপচেষ্টা করেন, সেটাও মনে রাখা হবে। উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে সরকার কমিটি করেছে। এই কমিটির মাধ্যমে সবার সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, শ্রমিক-মালিক কেন পরস্পরকে দোষারোপ করবে। এটা জরুরি, আমাদের পরস্পরের দায়িত্বটা নিতে হবে। এই সেক্টর রক্ষা করা আমাদের দেশপ্রেমেরই অংশ। দেশের মানুষকে ভালোবাসলে এই সেক্টরকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। সামনে জিএসপি সুবিধা এলে, এই বিষয়গুলো সামনে আসবে। এই অর্ডারগুলো অন্য দেশে চলে যাক, এটা আমরা কেউ চাই? তাই কেউ পক্ষ-বিপক্ষ হওয়া যাবে না। আমাদের সবার খেয়াল রাখতে হবে দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করতে।
এর আগে বক্তব্য রাখেন পোশাক কারখানা মালিকপক্ষ ও শ্রমিক নেতারা। বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন হা-মীম গ্রুপের একে আজাদ, রাবাব গ্রুপের লুৎফি মাওলা আইয়ুব, আনোয়ারুল পারভেজ, ড্রাগন গ্রুপের মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস, বিকেএমইএ চেয়ারম্যান মুহাম্মদ হাতেম, শ্রমিক নেতা বাবুল আখতার প্রমুখ।