ভিয়েতনামে ঘূর্ণিঝড় ইয়াগি এবং এর কারণে সৃষ্ট ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২শ ৫৪ জন। দুর্যোগে এখন পর্যন্ত আহত হয়েছেন ৮শ ২০ জনের বেশি। আর নিখোঁজ অন্তত ৮২ জন।
গতকাল শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার বরাতে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এসব তথ্য জানিয়েছে।
তারা আরও বলেছে, বন্যার পানি নেমে যাওয়া শুরু করায় উদ্ধারকাজ জোরদার করা হচ্ছে।
টাইফুন ইয়াগি গত শনিবার ভিয়েতনামে আঘাত হানে। এর ফলে একসপ্তাহ ধরে দেশটিতে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। টানা বৃষ্টির কারণে ভিয়েতনামের পার্বত্য উত্তরাঞ্চলে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোয় উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা।
প্রাদেশিক সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মঙ্গলবার অঙ্গরাজ্য লাও সাই প্রদেশের ‘নূ’ গ্রামে ৩৭টি বাড়ি আকস্মিক বন্যায় ভেসে যায়। তখন নিখোঁজ হওয়া ৪১ ব্যক্তির সন্ধানে কাজ করে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
এখন পর্যন্ত সেখানে ৪৬ জন গ্রামবাসীর মৃত্যু নিশ্চিত করা গেছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, লাও সাই প্রদেশের আরেক গ্রামে নিখোঁজের তালিকায় থাকা ১১৫ জন ব্যক্তি ফিরে এসেছেন। একটি পাহাড়ে তারা দু’দিন বিদ্যুৎ ও টেলিফোন সেবা ছাড়া অবস্থান করেছিলেন।
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ বলেছে, দুর্যোগে ঘরবাড়ি হারানো হাজার হাজার শিশু এখন সুপেয় পানির অভাবে আছে।
তারা আরও জানিয়েছে, দুর্যোগে স্কুল ভবনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাছাড়া বিদ্যুৎ ও পানি সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে শিক্ষা, মানসিক সুস্বাস্থ্য ও স্কুল ফিডিং প্রোগ্রাম সুবিধা বঞ্চিত হয়েছে প্রায় ২০ লাখ শিশু।
ক্ষতিগ্রস্ত শিশু ও তাদের পরিবারের জন্য প্রাথমিকভাবে দেড় কোটি মার্কিন ডলার সহায়তার প্রয়োজন বলে ইউনিসেফের অভিমত।
সরকার বলেছে, রাজধানী হ্যানয়ে লোহিত নদীর পানি নামতে শুরু করেছে। ফলে কিছু সেতুতে গাড়ি চলাচল শুরু হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্তরা বীমা প্রতিষ্ঠানে অর্থ দাবি করতে গেছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই দাবির পরিমাণ ছিল প্রায় ২৮ কোটি ৩৬ লাখ মার্কিন ডলার।
এদিকে, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ২০ লাখ ডলারের সহায়তা ঘোষণা করেছে অস্ট্রেলিয়া। তার অংশ হিসেবে শুরু হয়েছে ত্রাণ প্রদানের কাজ। দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষ থেকেও ২০ লাখ ডলারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। আর মার্কিন সহযোগিতা সংস্থা ইউএসএআইডি ঘোষণা করেছে ১০ লাখ ডলার।
ভিয়েতনামে গত কয়েকদশকে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে ইয়াগি ছিল সবচেয়ে মারাত্মক।
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়তে থাকায় পানির তাপমাত্রাও বেশি থাকছে। ফলে আজকাল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় দেখা যাচ্ছে।