রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: ডেঙ্গুতে একদিনে বছরের সর্বোচ্চ মৃত্যু, আক্রান্ত ১০৭৯   মহানবীকে (সা.) নিয়ে কটূক্তিতে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব   সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দেয়ার সময় বাড়লো   জেদ্দায় চলছে আইপিএলের মেগা নিলাম   ‘ভুল চিকিৎসায়’ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, ন্যাশনাল মেডিকেলে ভাঙচুর   জিএসপি পেতে ১১ দফা বাস্তবায়নের তাগিদ যুক্তরাষ্ট্রের   মাত্র ৩ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে খুলনা, উদ্বোধন ১ ডিসেম্বর   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
ভারি বর্ষণে ডুবেছে কক্সবাজার, আটকা ২৫ হাজার পর্যটক
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৭:৩৪ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

কক্সবাজারে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরেছে, যা দুই দশকের মধ্যে দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। এই অতি ভারি বৃষ্টির মধ্যে পাহাড় ধস কেড়েছে ছয়জনের প্রাণ। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার প্রায় একশ গ্রাম। হোটেল-রিসোর্ট, কটেজজোনে জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ায় বিপাকে পর্যটকেরা। 

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টা পর্যন্ত অন্তত ২৫ হাজার পর্যটক আটকা পড়েছেন হোটেলকক্ষে। জলাবদ্ধতার কারণে তারা কোথাও বের হতে পারছেন না। সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে লাল নিশানা উড়িয়ে পর্যটকদের সমুদ্রে নামতে নিষেধ করা হচ্ছে।

গত ৫০ বছরে শহরজুড়ে এমন জলাবদ্ধতা দেখেননি জানিয়ে কক্সবাজার হোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, অপরিকল্পিত সড়ক উন্নয়ন, ঠিকমতো নালা পরিষ্কার না করা এবং শহরের পাহাড় নিধন বন্ধ না হওয়ায় এমন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।

হোটেলমালিক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীরা জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় বৃষ্টিপাত শুরু হলেও ভারি বর্ষণ শুরু হয় দুপুর সাড়ে ১২টায়। এরপর রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত টানা ১২ ঘণ্টার ভারি বর্ষণে পুরো শহরের ৮ লাখ মানুষের জীবন অনেকটা থেমে যায়।

আজ সকাল ১০টায় আবার ভারি বর্ষণ শুরু হয়, সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া। বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত আরও কয়েক ঘণ্টার ভারি বর্ষণে শহরের প্রধান সড়ক, কলাতলী সৈকত সড়কসহ অন্তত ৩৫টি উপসড়ক ডুবে গেছে। বন্ধ রয়েছে যানবাহন চলাচল।

কক্সবাজার আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ এ বি হান্নান বলেন, গতকাল বেলা ৩টা থেকে আজ বেলা ৩টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। চলমান মৌসুমে এটি এক দিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড। ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে। বাতাসের তীব্রতাও বেশি থাকবে, যা দমকা ও ঝোড়ো হাওয়া আকারে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃদ্ধি পেতে পারে।

আজ বেলা সাড়ে ১১টা। কলাতলী সৈকতের একটি গেস্টহাউস থেকে নারী-পুরুষের পাঁচজনের একটি দল সড়কে নেমে সমুদ্রসৈকতের দিকে রওনা দেয়। কিছু দূর হাঁটার পর সামনে পড়ে চার লেনের কলাতলী সৈকতসড়ক। পুরো সড়ক তখন বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে। যানবাহনের চলাচল নেই। চলছে ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারী বৃষ্টি। সবাই আশ্রয় নেন একটি দোকানের ভেতর।

দলের একজন সোহেল আহমদ (৩৪) বলেন, গতকাল সকালে তারা ঢাকা থেকে কক্সবাজার ভ্রমণে আসেন। তাঁরা গাড়ি থেকে নামার পর বৃষ্টির শুরু হয়। এরপর হোটেলে উঠে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করে বিকেল পাঁচটার দিকে সুগন্ধা সৈকতে নামেন। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কারণে গোসল করা হয়নি কারও। আজকের অবস্থা আরও ভয়াবহ। বৃষ্টির থামাথামি নেই।

দেখা গেছে, সকাল সাতটা থেকে হোটেল-মোটেল জোনের পাঁচ শতাধিক হোটেল, গেস্টহাউস, কটেজ-রিসোর্ট বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। কলাতলী সড়ক, সুগন্ধা সড়ক, সিগাল সড়ক পানিতে সয়লাব। এই তিন সড়কের দুই পাশসহ ঝিনুক মার্কেটের তিন হাজার দোকানপাট পানিতে নিমজ্জিত। ভারী বর্ষণে টিকতে না পেরে সৈকতে থাকা ৩৫টির বেশি ঘোড়া এদিক-সেদিক ছুটছে। কিছু ঘোড়া দোকানপাট ও রেস্তোরাঁয় আশ্রয় নিয়েছে।

জলাবদ্ধতার কারণে হোটেল-মোটেল জোনের ১৮টি সড়ক ডুবে গেছে জানিয়ে কক্সবাজার হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান প্রথম আলোকে বলেন, আজ ৫ শতাধিক হোটেলে অন্তত ২৫ হাজার পর্যটক অলস বসে থেকে সময় কাটাচ্ছেন। ভারী বর্ষণের কারণে তারা হোটেল থেকে কোথাও যেতে পারছেন না। অনেকে হোটেল বুকিং বাতিল করে গন্তব্যে ফিরে যাচ্ছেন। নানা কারণে তিন মাস ধরে পর্যটকের আগমন কমেছে, এ কারণে হোটেল ব্যবসাও জমছে না।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ভারি বর্ষণ হলেই হোটেল-মোটেল জোনে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তখন পর্যটকরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব বিরাজ করে। পাহাড় কাটার কারণে সে মাটি বৃষ্টির পানিতে নিচের দিকে নেমে পানি চলাচলের নালা ভরাট হয়ে গেছে। ফলে দ্রুত পানি নিষ্কাশন হতে না পারায় জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। গত জুলাই মাসেও কয়েক দফায় ভারী বর্ষণে শহরজুড়ে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছিল।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল গনি ওসমানী বলেন, টানা বৃষ্টিতে কক্সবাজারের শতাধিক গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে যারা ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন তাদের সরিয়ে আনতে কাজ করছে জেলা প্রশাসন।

গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, ভারি বর্ষণ হলেই হোটেল-মোটেল জোনে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তখন পর্যটকদের ওপর দুর্ভোগ নেমে আসে। ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব দেখা দেয়। গত জুলাই মাসেও কয়েক দফায় শহরজুড়ে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছিল জানিয়ে সেলিম নেওয়াজ বলেন, তখন পৌরসভার মেয়র-কাউন্সিলররা জরুরি ভিত্তিতে নালা পরিষ্কার ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে জলাবদ্ধতা নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে মেয়রসহ বেশির ভাগ কাউন্সিলর আত্মগোপন করেন। এখন জলাবদ্ধতা নিরসনের তেমন উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানানো হয় সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্রবন্দরসমূহে ঝোড়ো হাওয়া বইয়ে যেতে পারে। কক্সবাজারসহ চার সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান বলেন, কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://dailyvorerpata.com/ad/af.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]