ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) সংলগ্ন স্বস্তিদায়ক উন্মুক্ত জায়গা ওসমানী উদ্যান। এই উদ্যানে ২০১৭ সালে ‘গোস্বা নিবারণী পার্ক’ নাম দিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেন তৎকালীন মেয়র সাইদ খোকন।
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে টিন দিয়ে ঘিরে ফেলা হয় ওসমানী উদ্যান। এটিকে ‘গোস্বা বা রাগ নিবারণী’ পার্ক হিসেবে তৈরি করা হচ্ছে উল্লেখ করে ডিএসসিসি তখন বলেছিল, পার্কটি এমনভাবে সাজানো হচ্ছে যে, কোনো রাগান্বিত ব্যক্তি সেখানে গেলে তার মন ভালো হয়ে যাবে। শুরু হয় প্রকল্পের কাজও।
এরপর ২০২১ সালে শেখ ফজলে নূর তাপস ডিএসসিসির মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর একই দলের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সাইদ খোকনের ওপর গোস্বার কারণেই আটকে যায় গোস্বা নিবারণী পার্কের কাজ।
ফলে ছয় বছর ধরে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে এ উদ্যানে আবদ্ধ থাকায় উন্মুক্ত পরিবেশ পাচ্ছে না নগরবাসী। এখানে-ওখানে গাছ কেটে, রড-সিমেন্টের অর্ধেক স্থাপনা তৈরি করে অবিন্যস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ করে ফেলে রাখায় মাদকাসক্ত ও অসামাজিক কার্যকলাপের আখড়ায় পরিণত হয় ওসমানী উদ্যান।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে ওসমানী উদ্যানে প্রথমে ৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প নেওয়া হলেও পরে নতুন পরিকল্পনা সংযোজন করে তা বাড়িয়ে ৮৬ কোটি টাকা করা হয়। পরে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয় ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। এরপর আবারও পানি নিষ্কাশন, ব্যবস্থাপনা ও পরিশোধন প্রক্রিয়া যোগ করা হয়। ফলে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১০০ কোটি টাকার ওপরে।
এদিকে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দি বিল্ডার্সের দাবি, পার্কের ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ করার পরও বিল পরিশোধ না করেই ব্যক্তিগত আক্রোশ ও প্রভাব খাটিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ বাতিল করে দেন মেয়র তাপস। এমনকি তাদের অবশিষ্ট মালামাল পর্যন্ত নিতে দেন নাই। এখনও ৪০ কোটি টাকার বিল বকেয়া বলেও অভিযোগ করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। ৩ বছর ধরে বকেয়া থাকা বিলের ঋণের সুদের বোঝাও টানতে হচ্ছে তাদের।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দি বিল্ডার্স আরও দাবি করে, মেয়র তাপস তার মামা ফারুককে নতুন টেন্ডার করে পার্কের কাজ দিয়েছেন। নতুন ঠিকদারি প্রতিষ্ঠান দি বিল্ডার্সের কাজগুলো নিজের দেখিয়ে বিল উত্তোলন করছে বলেও অভিযোগ দি বিল্ডার্সের প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান নূরের।
সরেজমিনে দেখা যায়, নতুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক কাজ করছেন। তারা কতটুকু কাজ পেয়েছেন জানতে চাইলে বলেন, সবগুলো স্থাপনার কাজ করা ছিল। তারা সিরামিক ও ফিনিশিংয়ের কাজ করছে। তাদের কাজ শেষ করতে আর দুই মাস সময় লাগতে পারে বলে জানান। তাদের কাজ শেষ হলেই পার্কটি সর্বসাধারণের ব্যবহারে উন্মুক্ত করা যাবে।
এ ব্যাপারে জানতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের মোবাইলে ও হোয়াস্যাপে যোগযোগ করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
তবে পরিবেশ ও জলবায়ু সার্কেলের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকের ভোরের পাতাকে বলেন, ‘আগের প্রকল্প কর্মকর্তার মৃত্যু এবং পূর্ববর্তী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ঠিক মতো কাজ না করায় চুক্তি বাতিল করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ব্যক্তি পরিচয় জেনে বা স্বজনপ্রীতি করে কাজ দেওয়া হয়নি, নিয়ম-নীতি মেনে দেওয়া হয়েছে।’